Also read in

"গরিব বরাক অসমিয়া না শিখলে আলাদা হোক," ডঃ দয়ানন্দ বরগোঁহাইয়ের অদ্ভুত যুক্তি মেনে নিতে পারছেন না কেউই

  (অদ্বয় পুরকায়স্থ এবং বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ সংকলিত)

 

অসম উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান ডঃ দয়ানন্দ বরগোঁহাই গতকাল একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যদি বরাক উপত্যকার মানুষ অসমিয়া শিখতে না চান তাহলে তাদের অসম থেকে বেরিয়ে যাওয়াই ভালো। অতীতে বহুবার ভাষাগত দূরত্বের ফলে অসমের বিভাজন হয়েছে, কিন্তু বরাক উপত্যকা কখনোই বেরিয়ে যায়নি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি বিভাগের প্রধান হয়ে দয়ানন্দ বরগোঁহাই অসমের ভৌগোলিক বিভাজনের কথা বলায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর বিরুদ্ধে সব থেকে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। তিনি বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদকে ঘিরে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যানের আগে সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। তিনি একটি সরকারি পদের দায়িত্ব পালন করছেন বলে এমন কেউ হয়ে যাননি যে বরাক উপত্যকাকে অসম থেকে আলাদা হওয়ার পরামর্শ দেবেন। রাজ্যে আর পাঁচটা জেলার মত বরাক উপত্যকার তিন জেলা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তির ভাষাগত পরিচিতি নিজস্ব। একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী গত পাঁচ বছর ধরে দুই উপত্যকাকে একসূত্রে বেঁধে দেওয়ার কথা বলছেন, একজন সরকারি আমলা এধরনের মন্তব্য করবেন, এটা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না।”

সাংসদ রাজদীপ রায় বলেন, “শিলচরের সাংসদ হওয়ার পাশাপাশি আমি রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছি। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি বিজেপির বয়ান এমনটা নয় আমরা লাগাতার প্রত্যেক জনগোষ্ঠীকে কাছাকাছি আনার চেষ্টা করছি। দয়ানন্দ বরগোঁহাই যে মন্তব্য করেছেন সেটা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ এবং নিম্ন স্তরের, আমি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আগামীতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলব এই বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।”

বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল বলেন, “বর্তমানে বিজেপির যেসব নেতা রয়েছেন তাদের উস্কানিতেই এই মন্তব্য দেওয়া হয়েছে কিনা জানিনা, তবে এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য একটা মন্তব্য। যদি সরকারি আধিকারিকদের পেছনে কোনও বড়োসড়ো নেতার হাত না থাকে তাহলে আমার বিশ্বাস এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবু আমি সরকারের কাছে অনুরোধ রাখব, বিভাজনের রাজনীতিকে আস্কারা দেবেন না, এই মন্তব্যের জন্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, “আমরা বরাক উপত্যকার মানুষ রাজ্যের প্রত্যেক ভাষাকে সমানভাবে সম্মান জানাই, তবে সেই সঙ্গে নিজের মাতৃভাষাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক আধিকারিক এধরনের মন্তব্য করবেন, এটা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি হয়ত অসমের ইতিহাস বোঝেন না অথবা তার কোনও অন্য মতলব রয়েছে। তবে এই মন্তব্য আমরা মেনে নিতে পারছি না এবং তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”

অধ্যাপক জয়দীপ বিশ্বাস বলেন, “আমার মনে হয় রাজ্য সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। শিক্ষা বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একজন ব্যক্তি এমনটা বললে তার প্রভাব অনেকের উপর পড়তে পারে।”

বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের পক্ষ থেকে সঞ্জীব দেব লস্কর বলেন, “আমরা মনে করি দয়ানন্দ বরগোঁহাই এমন মন্তব্য করে নিজের এবং যে পদে তিনি বসে আছেন, দুটোকে অপমান করেছেন। তবে এর থেকেও চিন্তার বিষয় হচ্ছে এত বড় বয়ানের পর যতটা প্রতিবাদ বরাক উপত্যকায় বা সারা রাজ্যে হওয়া দরকার ছিল, ততটা হয়নি। অন্যান্য ঘটনায় আমরা দেখি সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিবাদে ভরে গেছে, অথচ বরাক উপত্যকাকে আলাদা করার মতো মন্তব্য করে দয়ানন্দ বরগোঁহাই তেমন কোনও প্রতিবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন না। এই লক্ষণ কিন্তু ভবিষ্যতে আমাদের অনেক বিপদের অশনি সংকেত।”

সাক্ষাৎকার এর ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন: 

 

https://youtu.be/0yBG0-Tmb4Y

Comments are closed.