Also read in

কেন কাছাড়ের ডাক বিভাগের এতগুলো পদ বিলুপ্ত করা হল? জবাব চেয়ে গুয়াহাটি ডেকে পাঠানো হয়েছে অধীক্ষক অরুণ সরকারকে

সম্প্রতি ডাক বিভাগের কাছাড় ডিভিশনের অধীনে ২৫৪টি পদ বিলুপ্ত হয়েছে এবং এর নির্দেশ দিয়েছেন অধীক্ষক অরুণ সরকার। সম্প্রতি এক আরটিআই-এর জবাবে বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পিএ, পোস্টম্যান এবং মাল্টিটাস্কিং স্টাফ সহ মোট ২৫৪টি পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। এতে সরাসরি ৫২টি পদ বিলুপ্ত করেছেন অধীক্ষক অরুণ সরকার। বাকি বিলুপ্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

এতে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, বিভাগের প্রাক্তনরা বলেছিলেন অধীক্ষক চাইলে পদগুলো আটকানো যেত। তবে কেন তিনি এমনটা করলেন? এই প্রশ্ন উঠেছে। এবার বিভাগের রাজ্য স্তরের আধিকারিকরা অরুণ সরকারকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তারা সরাসরি জানতে চেয়েছেন কেন পদগুলো বিলুপ্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আদৌ কি এগুলো আটকানো যেত, ইত্যাদি।

বিশ্বের প্রথম সারির ডাক বিভাগ হচ্ছে ভারতীয় ডাক। এই ইন্টারনেটের যুগে দাঁড়িয়ে এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে বিভাগের পরিষেবা। কাছাড় ডিভিশনের পক্ষ থেকে অরুণ সরকার জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে পদগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে এব্যাপারে কোনও বিস্তারিত তথ্য তিনি দিতে রাজি হননি।

এবছর জুন মাসের ২৬ তারিখ অরুণ সরকার একটি চিঠি পাঠিয়ে পিএ ক্যাডারের ২৬টি পোস্ট বাতিলের নির্দেশ দেন। জুলাই মাসের ২৪ তারিখ আরও একটি চিঠিতে পিএ ক্যাডারের ১৬টি, পোস্টম্যান ক্যাডারের ৩৮টি এবং ১টি মাল্টিটাস্কিং কর্মী পোস্ট বাতিলের নির্দেশ জারি করেন। তাকে এই চিঠিগুলো দেখিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গুয়াহাটির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে আসাম সার্কেলের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কে শিবা শংকর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাকেই এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা উচিত। এরপর তিনি আর আমাদের ফোনকলের বা মেসেজের উত্তর দেননি। এবার গুয়িহাটির পক্ষ থেকেই তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, তিনি কেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলেন।

সম্প্রতি এক আরটিআই-য়ের উত্তরে ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাছাড় ডিভিশনের অধীক্ষক কোনভাবেই পদগুলো বিলুপ্ত করতে পারেন না। অন্তত তার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। বিভিন্ন পদে থাকা কর্মচারিরা যখন কাছাড় থেকে বদলি হয়ে অন্য কোথাও গেছেন সেখানে নতুন কাউকে আনা হয়নি। যেগুলো পদ খালি হয়েছে সেখানে নতুন নিযুক্তি হয়নি। উল্টো খুব সাবধানে পদগুলোকে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।

যখন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের চাকরির ক্ষেত্রে একের পর এক বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বরাক উপত্যকার যুবকরা। এই সময়ে কেন্দ্র সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের এধরনের সিদ্ধান্ত আরেকবার এলাকার যুবপ্রজন্মকে প্রতারণা করল, বলা চলে।

বিভাগের কাছাড় ডিভিশনের এক প্রাক্তন সুপারের মতে এসব সিদ্ধান্ত হাইয়ার অথরিটি নেন না বরং স্থানীয়দের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয় এবং এর পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, “অতীতে আমাদের কাছে এধরনের প্রস্তাব এসেছে। হাইয়ার অথরিটি যদি মনে করতেন এখানে পোস্টগুলোর প্রয়োজন নেই তাহলে তারা পুরো ডাকঘরটাই উঠিয়ে নিতেন। যখন বলা হবে এই পোস্টগুলোর প্রয়োজনীয়তা কি, সেক্ষেত্রে স্থানীয় আধিকারিকদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজের পক্ষ তুলে ধরা। তারা যদি বলেন পোস্টগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তবে কেন্দ্রীয় তরফে সেগুলো বিলুপ্তির কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।’

অরুণ সরকারের নির্দেশনামায় বলা হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে অতীতে নেওয়া সিদ্ধান্তকে উদাহরণ হিসেবে গ্রাহ্য করা হয়েছে। তবে অরুণ সরকারের আগে যারা এখানে কাজ করেছেন তারা বলছেন, ‘আমরাও এই ধরনের প্রস্তাব পেয়েছি এবং সেগুলোর উত্তর দিয়েছি। প্রত্যেকবার পদগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো হয়েছে। কিছু কিছু পোস্ট দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে, বিভাগ চাইলেই সেগুলোতে কন্ট্রাকচুয়াল পদ্ধতিতে নিযুক্তি দিতে পারত। এতে অনেক পরিবারের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ছিল।

সংবাদটি প্রকাশ্যে আসার পর সরাসরি কোন জনপ্রতিনিধি এর বিরুদ্ধে কথা বলেননি। তবে বিভাগের আধিকারিকরা যখন জবাব চেয়েছেন, অনেকেই আশা করছেন পথগুলো বিলুপ্তি থেকে বাঁচবে।

To read our earlier coverage on this issue, Click Here.

Comments are closed.