Also read in

আলফার সাথে খাসি ছাত্র ইউনিয়নের তুলনা করল‌ বিডিএফ, নিয়োগে পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে বরাক বন্ধের হুঁশিয়ারি

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ পরীক্ষায় বরাক উপত্যকার পরীক্ষার্থীদের সাথে হওয়া কথিত বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামী ১৮ নভেম্বর সকাল ৫টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিডিএফের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি প্রকাশিত রাজ্য সরকারের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদের নিয়োগ তালিকায় বরাক উপত্যকার প্রার্থীদের সংখ্যা নগণ্য। এছাড়া মেঘালয়ে এ গত ৬ দশক ধরে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন চলছে যার প্রতিরোধে সম্পুর্ন ব্যার্থ রাজ্য সরকার। অবস্থা এমনই যে যেসব সংখ্যালঘু পরিবার জীবন জীবিকার দায়ে এতসব সহ্য করেও শিলং সহ বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে আসছেন সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরাও রাজ্য ছেড়ে চলে যাবার জন্য চিন্তা ভাবনা করছেন। কোন বিকল্প না থাকায় এই দুই জ্বলন্ত ইস্যুতে এবার সমগ্র বরাক বনধের ডাক দিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

এদিন শিলচর পেনসনার্স ভবনে এই উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে রাজ্য সরকারের চাকরির ক্ষেত্রে যে ইচ্ছাকৃতভাবে বরাকের প্রার্থীদের প্রতি বঞ্চনা করা হচ্ছে তাঁতে কোন সন্দেহ নেই। অন্যথা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদের জন্য ঘোষিত তালিকায় বরাকের প্রার্থীদের সংখ্যা এতো কম হতেই পারে না। তিনি বলেন আমরা খবর পেয়েছি যে বরাকের তিন জেলা থেকে এই তালিকায় গড়ে ৩ শতাংশের বেশি মনোনীত হননি।এরপর মৌখিক পরীক্ষায় এই সংখ্যা আরো নেমে আসবে। প্রদীপ বাবু বলেন যে বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা বরাকের প্রার্থীদের মনোনীত হবার মতো যোগ্যতা বা মেধা নেই বলে যে যুক্তি দেখাচ্ছেন তা অসত্য ও অপমানজনক। কারণ মেধা না থাকলে রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বরাক থেকে ১২ জন মনোনীত হতেন না। বরাকের এইসব ছেলে মেয়েরাই বহিরার্জ্যে সসম্মানে চাকরি করছেন। তার প্রশ্ন মেধা না থাকলে তা সম্ভব হত কি ? প্রদীপ বাবু বলেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পক্ষপাতদুষ্ট এবং দিশপুরের বরাক বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন বরাকের প্রার্থীরা। তিনি বলেন কোথায় গেল বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যেখানে প্রকাশ্য সভায় বরাকের সব তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে স্থানীয়দের নিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ? প্রদীপ বাবু বলেন সরকার ইচ্ছে করলে তা করতে পারত ,এতে কোনো আইনি বাধা নেই। যেহেতু এখানে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য কোন সরকারি উদ্যোগ নেই, যাতে বরাকের ছেলে মেয়েদের নিয়োগ হতে পারে, যা ছিল তা সরকারি অবহেলায় বন্ধ হয়ে গেছে তাই এরপর যদি স্থানীয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকা থেকে প্রার্থী নিয়োগ করে বরাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তবে বরাকের ছেলে মেয়েরা যাবে কোথায় ? তাই তার দাবি আগামী সাতদিনের মধ্যে বরাকের তিন জেলার শূন্য পদের তালিকা ও প্রাপ্ত নম্বর সহ এখান থেকে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্য সরকারকে প্রকাশ করতে হবে। এবং বরাক ভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাবস্থা করার এবং স্থানীয় পদে অন্ততঃ ‌১০০০ প্রার্থীর নিয়োগের প্রক্রিয়া পৃথকভাবে শুরু করতে হবে। যদি তা না করা হয় তবে আগামী ১৮ ই নভেম্বর , শুক্রবার সকাল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পাঁচটা অব্দি বরাক ব্যাপী সর্বাত্মক বনধ পালন করবে বিডিএফ। বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক আরো বলেন যে গ্রেফতার বা দমন পীড়ন করে বিডিএফ এর আওয়াজ রুদ্ধ করা যাবেনা। উপত্যকাবাসীর স্বার্থে প্রয়োজনে জেলে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন বিডিএফ সদস্যরা। তাই সরকার উপরোক্ত দাবি গুলিকে যত শীঘ্র মেনে নেয় ততই মঙ্গল।প্রদীপ বাবু এদিন জাতিধর্ম নির্বিশেষে বরাকের আপামর জনসাধারণকে এই বনধ পালনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিবাদ সাব্যস্ত করার আবেদন জানিয়েছেন । একই সাথে বরাকের রেজিস্ট্রিকৃত তিন লক্ষ কর্মপ্রার্থী ছেলে মেয়েদের তিনি নিজ নিজ এলাকায় এই বনধকে সফল করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিডিএফ এর মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে সমগ্র উত্তর পুর্ব জুড়ে বাঙালি সহ সব সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে কোনঠাসা করে দেবার প্রক্রিয়া চলছে। শিলং এ সম্প্রতি উপজাতিদের একটি মিছিল থেকে যেভাবে বাঙালি সহ নিরীহ অনুপজাতিদের উপর হামলা চালানো হল এবং যেভাবে পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভুমিকা পালন করল তাঁতে এটা পরিষ্কার যে এসবের পেছনে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় সরকারের পরোক্ষ মদত রয়েছে। তিনি বলেন কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারের উপজাতি তোষন নীতির জন্যই গত ষাট বছর ধরে মেঘালয়ে বিনা কারণে এইভাবে দমন পীড়নের শিকার হচ্ছেন হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালি সহ নেপালি, শিখ, মাড়োয়ারি, ও হিন্দিভাষী অনুপজাতিরা। তিনি বলেন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিবাসী হয়ে যে সংগঠন প্রকাশ্যে লিখতে পারে ‘আমরা রক্তসূত্রে খাসি , দুর্ঘটনাবশত ভারতীয় ‘ তাঁদের বিরুদ্ধে কেন কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হবেনা ? যদি রাস্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আলফা কিম্বা কাশ্মীরের জঙ্গি সংগঠনের
বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে তবে খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না ? তাই তার দাবি অবিলম্বে ‘খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ সহ মেঘালয়ের উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠন গুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এবং আগামী সাতদিনের মধ্যে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীকে এই ব্যাপারে স্পষ্টীকরণ দিতে হবে। অন্যথা ১৮ নভেম্বর বরাক উপত্যকায় প্রতিবাদ স্বরুপ সর্বাত্মক বনধ হবে।

বিডিএফ এর আরেক আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন যে ১৯৭৯ সালের দাঙ্গায় মেঘালয়ে ৫০ জন বাঙালিকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ক্রমাগত নেপালি, শিখ,মাড়োয়ারি সহ সমস্ত অনুপজাতি গোষ্ঠির অসংখ্য মানুষ দমন পীড়নের শিকার হয়েছেন। হত্যাও করা হয়েছে। কিন্তু এটি দুর্ভাগ্যজনক যে আজ অব্দি একজন দুস্কৃতীও যথাযথ শাস্তি পায়নি। তিনি বলেন এবারও অন্তত ২৫/৩০ জন এদিনের হামলায় জড়িত থাকলেও রাজ্য সরকার চারজনের বেশি দুস্কৃতীকে খুঁজে বের করতে পারেনি। হৃষীকেশ বলেন আমরা জানি কয়েকদিন হাজতে রেখে অপরাধ প্রমান হয়নি বলে এদের ছেড়ে দেওয়া হবে কারণ যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন গত ষাট বছর ধরে তাই হচ্ছে। তিনি বলেন এবার আমরা দেখতে চাই মেঘালয়ে আইন শৃঙ্খলা বলে কিছু বলবৎ রয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রীকে তার প্রমান দিতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে আগামীতে এই প্রবনতা বন্ধ হয়। অন্যথা সারা বরাক জুড়ে এবার প্রতিবাদ হবে।

বিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির নবনিযুক্ত আরেক আহ্বায়ক আইনুল হক মজুমদার এদিন বলেন যে বরাকের ছেলেমেয়েদের ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চনা করার পরও এই উপত্যকা থেকে বিজেপির নির্বাচিত বিধায়করা যেভাবে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন তা সত্যিই লজ্জাজনক। তিনি বলেন যাদের নির্বাচিত করা হল , ভোটারদের প্রতি তাদের যদি কোন দায়বদ্ধতা না থাকে, যদি নিজ স্বার্থ চিন্তা তাঁদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠে, তবে জনগনের দুর্ভোগ বাড়বেই। এই প্রসঙ্গে উপত্যকার একমাত্র প্রতিবাদী কন্ঠ হিসেবে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ‌‌র ভুয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

বিডিএফ এর আরেক আহ্বায়ক ‘খাইদেম কান্ত সিং’ বলেন যে শুধু বাঙালি নয় বরাক তথা উত্তর পুর্বের সব নিপীড়িত জনগোষ্ঠির অধিকার রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে চলেছে বিডিএফ। তাই ভাষা এবং ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিডিএফ এর ডাকা আগামী ১৮ নভেম্বরের বনধ কর্মসূচিকে সফল করে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।

Comments are closed.