Also read in

অনলাইন ক্লাস কি বিকল্প হয়ে উঠতে পারে শ্রেণিকক্ষের?

সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন, অতিমারি, মহামারি শব্দগুলোর মতই অনলাইন ক্লাস এখন এক সুপরিচিত, বহুশ্রুত, বহু উচ্চারিত শব্দদ্বয়। এই শব্দদ্বয়ের উপরে এখন সব ভরসা। কারণ অসুস্থ পৃথিবীটা কবে পর্যন্ত সুস্থ হয়ে নিজের ছন্দে ফিরে আসবে সে বিষয়ে হলফ করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তাই যতদিন পর্যন্ত না পৃথিবী স্বাভাবিক হয়ে উঠছে ততদিন ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অনলাইন ক্লাসের ভিতটা শক্ত হচ্ছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠছে।শুধু তাই নয়, অনলাইন ক্লাস শ্রেণিকক্ষের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে কিনা সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। সমীক্ষা চলছে,পরিসংখ্যান খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে, হিসাব কষা হচ্ছে।
অনস্বীকার্য,অনলাইন ক্লাসের দৌলতে ঘরে বসে পড়াশোনা চলছে। অত্যধিক দূরত্বের কারণে যে কোর্সগুলো করা সম্ভব হচ্ছিল না সেগুলোও আজ স্বপ্ন পূরণের জন্য হাতছানি দিচ্ছে।

অন্যদিকে অনলাইন ক্লাস বর্তমান পরিস্থিতি মেনে ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জন্য ভরসাস্থল হয়ে উঠলেও প্রশ্ন থেকেই যায়, সত্যিই কি এ বিকল্প হয়ে উঠতে পারে?
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়াকে প্রথম প্রথম দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো লাগত। ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে, চোখে চোখ রেখে পড়ানোর আমেজটাই আলাদা। তাদের চোখের ভাষায় এবং শারীরিক ভাষায় ফুটে উঠত বিষয়টা কতটা বোধগম্য হলো। আর সেটা বুঝে পরের বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা পরিতুষ্টি বা পরিতৃপ্তি কাজ করত। কিন্তু এসবের কতটুকু অনলাইন ক্লাসে সম্ভব? তবু পৃথিবীটা পরিবর্তনশীল। তাই আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের কাজে লাগবে এমন পরিবর্তনটাকে মেনে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠাই শ্রেয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান কি এতেও হলো? যতই আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন দেখি, গ্রাম ভিত্তিক এই ভারতবর্ষে অনেক গ্রামে যেখানে মোবাইল থাকাটাই মস্ত ব্যাপার, সেখানে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের স্বপ্নটা কি অলীক নয়?

অনলাইন ক্লাস নিতে শিক্ষকদের ছোট, বড়, কঠিন, সহজ, মজাদার অনেক ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়।একদিন ক্লাস নিচ্ছি জুমে। ক্লাসে টেস্ট নিচ্ছি। নির্দেশ দেওয়া আছে সবার ভিডিও অন রাখতে হবে, যাতে করে আমি বুঝতে পারি সবাই ঠিকমতো পরীক্ষা দিচ্ছে কি না কিংবা চিটিং করছে কিনা। সবার ভিডিও অন ছিল।কিন্তু পিপিটি বা স্ক্রিন শেয়ার করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের ভিডিওগুলো ডান পাশে একের নীচে এক এসেছে, তাই সবার ছবি দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ মনে হল স্ক্রল করে দেখি তো অন্য ছাত্র ছাত্রীরা কি করছে? তখনই আমি আবিষ্কার করলাম যে কোন্ ফাঁকে অনেকের ক্যামেরার ফোকাস সরে গিয়ে সিলিংয়ের পাখায় ঠেকেছে, নয়তোবা দেয়ালে টাঙ্গানো কোন ছবির মধ্যে। নিজের মনেই নিজের হাসি পাচ্ছিল।

অনলাইন ক্লাস নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কি ভাবছেন?ছাত্রদের অভিজ্ঞতা কি বলে? শ্রেণিকক্ষের উল্টোদিকে অনলাইন ক্লাস- কোনটা বেছে নেবে ছাত্রছাত্রীরা?
এই অনলাইন ক্লাসের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উপর কি বাড়তি চাপ পড়ছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই হাজির হলাম শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে।

 

দেবীপ্রীতা দত্তগুপ্ত, সহকারি অধ্যাপিকা, গুরুচরণ কলেজ

বিগত সাড়ে চার মাসে শিক্ষকতা প্রফেশনে থেকে বেশ ভাল রকমের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি অনলাইন এডুকেশন সম্বন্ধে, যা হয়ত মহামারী না হলে কখনোই হতো না।

এই অবস্থায় এই মোড অফ টিচিং আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পূর্ণভাবে না হলেও আংশিকভাবে সাহায্য করতে পেরেছি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। এবং তারাও ঘরে বসে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করেছে আমাদের সাথে।

অনলাইন ক্লাসের স্বপক্ষে কিংবা বিপক্ষে নিজের কথা তুলে ধরতে আমি নিজেকে একটা মধ্যবর্তী জায়গায় রাখতে চাইছি। উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য অবশ্যই অনলাইন ক্লাসের পক্ষে রয়েছি। আর বিপক্ষে এই জন্য যে কিছু বিশেষ প্রতিকূলতা রয়েছে। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলছি, আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রী প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের, যেখানে ২৪ ঘন্টা ইলেকট্রিসিটি থাকাটাই স্বপ্ন সেখানে ওয়াইফাই তাও আবার ফার্স্ট নেটওয়ার্ক দিল্লি দূর অস্ত্। যদিও বা কখনো নেটওয়ার্ক কানেক্ট হয় কিন্তু সেটা ভীষন স্লো চলে। মোবাইল ফুল চার্জ করানোটাই অনেক সময় খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই আমার কাছে অনলাইন ক্লাস শ্রেণিকক্ষের বিকল্প কখনোই হয়ে উঠতে পারে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, যদি ছাত্র-ছাত্রীর চেহারাই না দেখলাম তাহলে বুঝবো কী করে ওদেরকে যেটা পড়াচ্ছি সেটা গলাধঃকরণ হলো কিনা। আর তারাই বা আমাকে কি করে বুঝবে।

তাছাড়া আমি তো শহরে থাকি আমার মোটামুটি নেটওয়ার্কে কোন সমস্যা থাকে না, বা মোবাইল রিলেটেড কোন ইস্যু নেই। কিন্তু যখন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেউ বলে, ম্যাডাম আমার মোবাইল তো নরমাল, ছোট। অ্যান্ড্রয়েড নয়। তখন সত্যিই দুঃখ হয়।

খবরের কাগজে বা অনলাইন নিউজে পড়েছি যে কত গরিব কৃষক তার জমি বিক্রি করে মোবাইল কিনছেন বাচ্চাদের পড়াশোনা সামলাতে, তখন সত্যি খুব কষ্ট হয়। এর সমাধান আমার জানা নেই।

অনলাইনে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হলেও প্র্যাকটিক্যাল নেওয়া যায় না, সেটা বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ অসুবিধার কারণ। থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল একে অপরের পরিপূরক। সুতরাং প্র্যাকটিক্যাল ছাড়া কিন্তু বিষয়টা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এবং এতে করে ছাত্র ছাত্রীদের বিশেষ ক্ষতি হচ্ছে।

পরিসংখ্যান বলছে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ভারতবর্ষে অনলাইন এডুকেশন পেইড ইউসারের সংখ্যা বেড়ে ১.৬ মিলিয়ন থেকে ৯.৬ মিলিয়ন হবে।

কাজেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজেদেরকে আরো অনলাইন ফ্রেন্ডলি করতে হবে, বিশেষত যাদের এক্ষেত্রে এখনো সমস্যা রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যেন খুব সহজ একটা ফ্রেন্ডলি প্ল্যাটফর্ম ইউজ করা হয়। আর হ্যাঁ কোন বাবা মাকে যেন গয়না, জমি বন্ধক বা বিক্রি করতে না হয় সন্তানকে নুন্যতম শিক্ষা দেওয়ার জন্য!

কৃষ্ণজ্যোতি দেব, শিক্ষক, রামানুজ কলেজ, শিলচর

কোভিডের শুরুতে যখন স্কুল-কলেজ সব বন্ধ আর সবাই তার বিকল্প – অনলাইন পড়াশোনার কথা নিয়ে ভাবতে শুরু করে আমি তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলাম। বলেছিলাম ক্লাসরুমে ছাত্রদের চোখে চোখ রেখেও যখন আমরা কিছু বিষয় ছাত্রদের বুঝাতে অক্ষম থেকে যাই, তখন এই জায়গায় অনলাইনে পড়াশোনা কীভাবে সম্ভব ? কিন্তু যখন কিছুতেই সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে না, তখন মেনে নিলাম, কিছুই না হওয়ার চেয়ে অন্তত অনলাইনে নাহয় কিছুটা পড়াশোনা হোক। তখন বিন্দুমাত্র অনুমান করতে পারিনি যে অনলাইন পড়াশোনা এমন সাফল্য পেতে পারে।

কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আছে যাদের পড়াশোনায় আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, অনলাইন পড়াশোনার পদ্ধতিতে তাদের ফাঁকি দেওয়ার প্রবনতা আরও বেড়ে গেছে। যদিও আগেও তারা ক্লাসরুমে বসেও ফাঁকি দিত। ক্লাসে বসেতো থাকতো কিন্তু তাদের মনটা অন্য কোথাও উড়ে বেড়াতো। এমন ছাত্রের সংখ্যা অনেক। কিন্তু যারা সিন্সিয়ার ছাত্র, তাদের কোনও অসুবিধে হয়নি। ভিডিও লেকচার শুনে নিজেদের নোট তৈরি করে নিতেও দেখেছি তাদের। কোনও একটা বিষয় যদি তারা বুঝতে পারছে না, তখন ভিডিওটা পুনরায় দেখে সে বিষয়টা পরিস্কার করে নিচ্ছে। আমাদের কলেজে প্রতি সপ্তাহে অনলাইন এক্সামেরও ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে এক্সামের মাধ্যমে ছাত্ররা নিজেদের প্রোগ্রেসটাও জেনে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করেও জেনেছি, অনলাইন পড়াশোনা নিয়ে তাই ছাত্রদের কোনও অভিযোগ নেই।

কিন্তু তবুও আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ এখনও থেকে গেল। আমি বলছি প্র‍্যাক্টিক্যাল পেপারের ক্লাস নিয়ে। নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে এটা ছাত্রদের ল্যাবে দাঁড়িয়ে নিজে থেকেই করতে হবে, যা এই পরিস্থিতিতে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তবুও আমাদের এ নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে অনেক এবং খুব শিগগিরই তা শুরু হবে। শুরুতে আমরা শিক্ষকরা নিজেরা বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট ডেমস্ট্রেট করে তার ভিডিও ছাত্রদের দেব। ছাত্ররা অন্তত শিখে নেবে যে এক্সপেরিমেন্টটা করতে হবে কীভাবে। তারপর নাহয় সুযোগ এলে সব নিয়ম মেনে দশ-বারোটা ছাত্রের গ্রুপ করে আবার তাদের হাতে-কলমে শিখিয়ে দিলাম। আমরা আশাবাদী থিওরি পেপারের মতো প্র‍্যাক্টিক্যাল পেপারগুলোতে ছাত্রদের কোনও অসুবিধে থাকবে না।

তবে পড়াশোনার এই মাধ্যম আরও জনপ্রিয়তা পাক তা আমি কখনোই চাই না। পড়াশোনার চাপে ছাত্রদের শৈশব অনেক কিছু হারিয়েছে। বিকেলবেলা মাঠে গিয়ে খেলাধূলাও যে করা যায় তা আজ অনেকেই জানে না। স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তারা বন্ধুদের সাথে খেলাধূলা, গল্পগুজব করতে পারে। অনলাইন চলতে থাকলে তারা এই আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হবে। ঘরে সারাদিন মোবাইল আর কম্পিউটারের কাছে বসে থেকে তারাও আরেকটা ম্যাশিনে রুপান্তরিত হবে।

 

জ্যোৎস্না চন্দ, শিক্ষিকা, এইচ কে সি এমই স্কুল

দীর্ঘদিন ধরে সমগ্র বিশ্বজুড়ে যা পরিস্থিতি চলছে তা সমগ্র দেশে এক অজানা ভীতির সৃষ্টি করেছে। সবাই আজ আতঙ্কে গৃহবন্দী। একটি কথাতো মানতেই হবে যে যে কোন পরিস্থিতিই আমাদেরকে কিছু না কিছু শিখিয়ে যায়। আজকে এই পরিস্থিতিতে আমরা মাস্কের ব্যবহার যে অপরিহার্য তা শিখেছি। হাত পা ধুয়ে নিজেকে কিভাবে পরিষ্কার রাখতে হয়, তা শিখেছি।

সাবধানের মার নেই। সাবধানতা এবং সর্তকতা অবলম্বন করে কিভাবে নিজেকে সুস্থ রাখতে হয়, তা আমরা এই পরিস্থিতি থেকেই শিখেছি।

‘ভয়’ মনকে দুর্বল করে তুলে। আর এই দুর্বল শরীরেই ভাইরাস সহজে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়। তাই মনকে শক্ত করে জীবন অতিবাহিত করতে হবে আমাদের।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় অনেকটা ক্ষতি হচ্ছে, সেটা তো মানতেই হবে। তবে কথায় রয়েছে- যে জান বাঁচি লাখো পাই। জীবন অমূল্য। জীবনটা থাকলেই তো সব পাবার আশা থাকে। আজ নয়, কাল নয়, পরশু বিভাবরি সূর্য উঠবে – একদিন না হয় একদিন।

হতাশায় থেমে না থেকে একজন শিক্ষিকা হিসেবে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাওয়া আমাদের কর্তব্য মনে করি। কারণ অনলাইন ক্লাসের বিপক্ষে যদিও অনেক যুক্তি রয়েছে, কিন্তু এ হেন পরিস্থিতিতে আর বিকল্পও তো নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার সংস্পর্শ থেকে একেবারে দূরে সরিয়ে দিলে আরো নাজেহাল অবস্থা হয়ে দাঁড়াবে। তাই অনলাইন ক্লাস আমাদের চালিয়ে যাওয়া উচিত। তাতে কিছুটা হলেও ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবেই।

স্কুল শ্রেণিকক্ষের বিকল্প হিসেবে আমরা কখনোই অনলাইন ক্লাসটাকে ধরে নিতে পারি না। কারণ স্কুল শ্রেণিকক্ষে মুখোমুখি বসে পড়ালে কোন্ ছাত্রটি বুঝতে পারেনি কিংবা কোন্ ছাত্রের বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে সেটা আমরা ছাত্র-ছাত্রীর মুখ চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝে নিতে পারি এবং তাকে কাছে ডেকে এনে আবারও ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে পারি। যা অনলাইন ক্লাসে সম্ভব নয়। তবে কিছুটা হোম ওয়ার্ক করতে দিলে ওরা নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারে এবং চেষ্টাও থাকে।

আমাদের সমাজের অধিকাংশ অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই, তাই সবাই অনলাইন ক্লাস করতে পারে না। তবে যাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোন রয়েছে তাদের অনেকেরই রিচার্জ করা থাকে না, এই ধরনের নানান অসুবিধে রয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও আমি অনলাইন ক্লাসের স্বপক্ষে এটাই বলব যে দুটি পাঁচটি শিশুও যদি অনলাইন ক্লাসের দ্বারা উপকৃত হয়, তাহলে আমাদের এই পাঁচজন শিশুর কথা ভেবে অন্তত অনলাইন ক্লাস নেওয়া উচিত।

পরিস্থিতিকে দেখে তার সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরও চলতেই হবে। নিরাশ হয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। তাই পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আর অসুবিধা যতই হোক না কেন আমাদের এভাবেই অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিশুদের বা ছাত্র-ছাত্রীদের মনোবল বাড়াতে হবে, এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। আর আশাবাদী হতে হবে যে একদিন সব সমস্যা দূর হবে। আর আমরাও স্বাভাবিক পরিবেশ, পরিস্থিতি ফিরে পাবো।

সংহিতা পাল (কনটেন্ট রাইটার ও এডিটর), অভিভাবক

কোভিডের এই অতিমারিকালে অনলাইনে পড়াশোনা করাটাই খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। ‘মুশকিল আসানের’ মতো যদিও ফেস-টু-ফেস ক্লাসরুম টিচিংয়ের কোনও তুলনা হতে পারে না, তাও এই ভয়ঙ্কর সময়ের কথা মাথায় রেখে অনলাইন পড়াশুনার মতন বিকল্প, আমার মনে হয়, আর নেই। খুব চিন্তায় পড়েছিলাম, ছেলের উঁচু ক্লাস, এবার সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। আবার বাড়ির বাইরে বের হলেই বিপদ। সময়মতো স্কুলের তরফ থেকে অভিভাবকদের কাছে খবর এলো যে অনলাইনে পড়ানো শুরু হবে। মাথা থেকে দুশ্চিন্তা নামলো। শুরুর দিকে অল্পবিস্তর বুঝতে অসুবিধা হলেও ( Technical Glitch, Network Issues etc) ধীরে ধীরে সব ধাতস্থ হয়ে গেছে। আমি একজন অভিভাবক হিসেবে খুশি। যদিও অনলাইন পড়াশোনার কিছু কুফল তো আছে আমার মতে। দিনের বেশ অনেকক্ষণ কম্পিউটার স্ক্রিনে কিংবা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে এক নাগাড়ে দেখতে হয়। তাতে চোখের তো ক্ষতি হয়, এটা সত্যি। অনেক সময় কোন কনসেপ্ট বুঝতে অসুবিধা হয় অনলাইনে। ক্লাসরুমে হলে হয়তো তাড়াতাড়ি বোঝা যেত। কিন্তু অনলাইনে হয়তো এক্ষেত্রে একটু সময় বেশি লাগে, যদিও সব সময় নয়। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্লাসরুমে যেভাবে খোলাখুলি কথোপকথন হয় অনলাইন ক্লাসরুমে তেমন বোধকরি হওয়া সম্ভবপর নয়। সেই জায়গায় একটা অসুবিধা তো রয়েছে।

তারপরও কিন্তু আমি মনে করি যে অনলাইন ক্লাসগুলো হওয়ার কারণেই বাচ্চাদের পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হয়নি। সবকিছু মেনে নিয়ে ওরা কিন্তু শিক্ষকদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা একটা আশাবাদী ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত করছে। আশা করি শিগগিরই আমরা করোনা সংকটকালের ছায়া থেকে মুক্তি লাভ করব। সেইসঙ্গে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ খুঁজে পাবো।

অদ্রীশ পুরকায়স্থ, ছাত্র, রামানুজ কলেজ

সব কিছুরই ইতিবাচক নেতিবাচক দুটো দিকই থাকে।অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রেও রয়েছে। ভালো দিকটা হচ্ছে, সময় অনেকটা বেঁচে যাচ্ছে। ভাগ দৌড় করতে হচ্ছে না। ঘরে বসে পড়াশোনা করা যাচ্ছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট যদি দুর্বল হয় তাহলে ভিডিও দেখা সম্ভব হচ্ছে না কিংবা দেরি হচ্ছে। কিংবা লাইভ ক্লাসে কথাগুলো অনেক সময় আটকে যায়। ঠিকমতো শোনা যায় না। কখনো অ্যাপ হ্যাং হয়ে যায়। তবু বলব অনলাইন ক্লাস করতে খারাপ লাগছে না মোটেই। একবারের জায়গায় অনেকবার ভিডিওগুলো দেখতে পাচ্ছি। বুঝতে অসুবিধা হলে বারবার দেখছি।

যদিও আমার সামনে যদি দুটো রাস্তাই খোলা থাকে, তবে আমি কিন্তু বেছে নেব কলেজের ক্লাস রুমে বসে পড়াশোনা করার সুযোগ। আমাদের সামনে বসে শিক্ষকদের পড়ানোর মজাটাই আলাদা। পড়াশোনার ফাঁকফোকরে আরো কত বিষয়ে তাদের আলোচনা, গালগল্প, এগুলো খুব মিস করছি। তবে
বিষয়গুলো বোঝার ক্ষেত্রে আমার কাছে অনলাইনে আর কলেজের ক্লাসে বোঝানোর মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। অনলাইন ক্লাসে এমনিতে কোনো অসুবিধে নেই, কিন্তু একজন ছাত্র হিসেবে মনে হয়, যদি এই অনলাইন ক্লাসটা কোনও অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি নেওয়া যায় তাহলে ছাত্রদের বুঝতে আরো সুবিধা হবে।

রুপায়ন দত্ত, কেআইআইটি, ভুবনেশ্বর

অনলাইন পড়াশোনার ব্যাপারটা খুবই নতুন একটা ব্যাপার, যেটা নিয়ে তেমন চর্চা ছিল না আমাদের মত পড়ুয়াদের। কিন্তু এই মহামারি করোনা, যা সমস্ত পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে, সেই মহামারির একটা ইতিবাচক দিকও আছে। অনলাইনে যে কোনদিন আমরা পড়তে পারব সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে আমিও সিক্স সেমিস্টার ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়েছি শিলচর থেকে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে অনলাইনের দুটো দিকই লক্ষ্য করেছি, ভালো ও খারাপ। আমরা এমন এক সময়ে আছি যে কবে আবার কলেজ যাব বা আদৌ এবছর ক্লাস হবে কিনা সেটা অনিশ্চিত।

আমি অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে জানি ওরা অনলাইনে পোস্ট গ্রেজুয়েট বা গ্রেজুয়েট পরীক্ষা দিয়েছে এবং সার্টিফিকেট পেয়ে ওরা এখন অনেক কোম্পানি বা সরকারি চাকরিতে এপ্লাই করতে পেরে খুব খুশি। এদিকে ঘরে বসেই নোট পেয়ে আমরা পরীক্ষা দিতে পারছি, যার ফলে আমাদের সিক্স সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হয়ে গেছে। এখন সেভেন সেমিস্টারের ক্লাস অনলাইনে শুরু হয়ে গেছে। আর আমি এই মহামারিতে মা বাবার কাছে থেকেই পড়ছি, শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাসের জন্য। সেটা আমার ব্যক্তিগত আনন্দ। আর যদি অনলাইন সুবিধা না থাকতো যারা গ্রেজুয়েশন বা পোস্ট গ্রেজুয়েশন করছেন তাদের ক্ষেত্রে এই গ্যাপ পিরিওডের জন্য কোম্পানির কাছে অনেক জবাবদিহি করতে হতো এবং আমি জানি এই গ্যাপের জন্য অনেক ছাত্র-ছাত্রী হয়ত ভালো চাকরি হারাতে পারে।

অন্যদিকে অসুবিধাটা হচ্ছে যে আমাদের ভারতবর্ষে ইন্টারনেট পরিষেবা অন্যান্য দেশের মতো উন্নত নয়। আমার এক বন্ধু প্রায়ই ফোন করে বলতো, অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না কারণ ওর আশেপাশে ইন্টারনেটের স্পিড খুবই কম। এখনো আমাদের শহরে অনেক বাড়ি আছে যারা ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড ইউজ করেন না। আমি যতটুকু জানি, একটা অনলাইন জুম ক্লাস ৪৫ মিনিটের করতে হলে ৭৫০- ৮৫০ এমবি প্রয়োজন। আমি ওয়ান জিবি/ডে প্ল্যান ব্যবহার করতাম, কিন্তু বর্তমানে আমি ৩ জিবি/ ডে ব্যবহার করছি অনলাইন ক্লাস করার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে আমার খরচটাও বাড়লো। আমি এটা সামলাতে পারছি, কিন্তু অনেক ছাত্র-ছাত্রী সেই খরচটাও সামলাতে পারছে না। আবার এরকমও আছে যারা খরচ সামলাতে পারছে, কিন্তু ওদের পাঁচ কিলোমিটার রেডিয়াসে ইন্টারনেট কাজ করছে না বা করলেও স্পিড নেই। এটা হচ্ছে আরেক সমস্যা।

সবশেষে বলব আমরা ছোটবেলাতে ৫০-৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী বসে শিক্ষক শিক্ষিকার সঙ্গে যে মন ও ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে পড়তাম সেটা অনলাইনে হয় না। সবচেয়ে বড় কথা গণিতের ক্লাস অনলাইনে করাটা খুবই কষ্টকর। কলেজে গিয়ে সবাই মিলে নতুন একটা অধ্যায় আমরা পড়ব সেটাতে মনোযোগটা বেড়ে যায়। তবুও বলবো এই মহামারিতে অনলাইন ক্লাসে আমরা উপকৃত হয়েছি, আর না হলে আমাদের অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার পিছিয়ে যেত।

আশীর্বাদ রায়, ছাত্র, মহর্ষি বিদ্যামন্দির

আমার মনে হয়, সব কিছুরই পজিটিভ এবং নিগেটিভ দুটো দিকই থাকে। আগে যখন ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করতাম, কোন কিছু না বুঝলে অনায়াসে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে পারতাম। কিন্তু এখন সেটা ততটা সম্ভব হয় না, কারণ অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে বেশিরভাগ সময় মিউট করে রেখে দেন।

অন্যদিকে শিক্ষকরা যখন ভিডিও বানিয়ে কিংবা ইমেজ’র মাধ্যমে আমাদেরকে বোঝাচ্ছেন তখন কিন্তু সেই ভিডিওটা আমাদের সঙ্গেই থেকে যাচ্ছে। কোন সময় যদি কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় আমরা আবার খুলে দেখতে পারি। ক্লাসরুমে ক্লাসের সময় প্রেসেন্ট না থাকলে আমরা পরে আর সেটা পাচ্ছিনা। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে শিক্ষক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যখন কোন পিডিএফ বা ভিডিও শেয়ার করছেন সেটা আমাদের সময় অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি।

অনেক অসুবিধাও রয়েছে। কারোর যদি ইন্টারনেট দুর্বল থাকে কিংবা মোবাইলের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি কম থাকে তখন অসুবিধে হয়। তারপর আবার অনেকের নিজস্ব মোবাইল থাকে না, ওদেরকে মা বাবার মোবাইল ইউজ করতে হয়। মা-বাবা যদি অফিসে চলে যান তখন ক্লাস করতে খুব অসুবিধা হয় ওই ছাত্র-ছাত্রীদের।

জুম অ্যাপে ক্লাস নেওয়ার সময় ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া যদি অন্য কারোর সঙ্গে লিঙ্ক শেয়ার হয়ে যায় তাহলে ওরাও ঢুকতে পারে লিঙ্কের মাধ্যমে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এ ব্যাপারটা অনেক সময় অসুবিধাজনক হতে দেখেছি।

ছাত্র হিসেবে আমি চাইবো, ভবিষ্যতে যদি শিক্ষকরা তাদের স্ক্রিন শেয়ার করেন কিংবা পিপিটি’র স্লাইড শেয়ার করে আমাদের অনলাইন লাইভ ক্লাসে বিষয়টা বোঝান তাহলে ব্যাপারটা আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং বুঝতে সুবিধা হবে।

আমাকে যদি বলা হয় অনলাইন ক্লাস ও ক্লাসরুমের পড়াশোনার মধ্যে একটা বাছতে, তাহলে আমি কলেজে ক্লাস রুমে বসে পড়াশোনা করতে বেশি পছন্দ করব।

একই বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ হিমব্রত দাসের সঙ্গে কথোপকথন

অনলাইন ক্লাস নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রছাত্রীদের ওপর কতটা মানসিক চাপ পড়ছে?

পরিবর্তন স্থায়ী, স্থিতিশীল এবং পরিবর্তনের প্রতিটি ঢেউ এক একটি অনন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। অনলাইন শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা তাই দেখতে পাই ।তাই এ কথার মধ্যে সত্যতা রয়েছে যে অনলাইন শিক্ষা শিক্ষার্থীদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

স্কুল-কলেজে যে ক্লাস হত সে তুলনায় এখন কি অনলাইন ক্লাসের জন্য বেশি চাপ পড়ছে ছাত্রদের উপর?

হ্যাঁ এবং না। অনলাইন ক্লাসগুলি শিক্ষার্থীদেরকে তাদের বাড়ির কমফোর্ট দেয়। তবে অন্যদিকে, দুর্বল সংযোগ ব্যবস্থা বা দুর্বল কানেকশন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এই মানসিক চাপ কমানোর জন্য শিক্ষক কিংবা অভিভাবকদের প্রতি কিছু বলার আছে?

শিক্ষকদের এবং সেই সঙ্গে অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে যে এ ধরনের অভূতপূর্ব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটতে বাধ্য। তাই তাদের পরিণত মানসিকতার পরিচয় দিয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে এবং ছাত্রদের প্রতি ধৈর্য্যশীল হয়ে বেশি সময় দিতে হবে।

এ বিষয়ে ছাত্রদের প্রতি কিছু বলার আছে? কিভাবে তারা এই পরিস্থিতিতেও মানসিক চাপ কমাতে পারে?

শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে যে যারা কঠিন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয় তারা বিপর্যয়ের শেষে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে। কোভিড-১৯ মহামারির জন্য আমাদের চারপাশের বিশ্ব যে ভাবে বদলে যাচ্ছে তার ফলস্বরূপ কোভিড-পরবর্তী বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলার জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে শিক্ষার্থীদের।এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের এই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও কিভাবে সৃজনশীল এবং কার্য্যক্ষম থাকা যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার গুণগত মান নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?

না। যদি শিক্ষাবিদ এবং নীতি নির্ধারকরা উন্নতমানের কনটেণ্ট নির্ধারণ করতে পারেন, তাহলে শিক্ষার মানদণ্ডে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমাদের তরুণরা উন্নতমানের কনটেণ্ট সনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধিমান। এটি প্রচলিত শিক্ষণ পদ্ধতির উপর প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার সময় আরও বেশি কল্পনাপ্রবণ এবং সৃজনশীল হতে প্রশিক্ষণ দেয়।

অনলাইন ক্লাসের চাপ সহ্য করতে না পেরে ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি?

বর্তমানে চলা কোভিড-১৯ মহামারিটি তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যার প্রতি আমাদের দৃষ্টি উন্মুক্ত করেছে। যুবসমাজের মধ্যে আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি প্রধানতম উদ্বেগ, যার জন্য অনেকগুলি কারণ দায়ী হতে পারে। শিক্ষার পরিবর্তনগত পদ্ধতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার ব্যর্থতা অন্তর্নিহিত মানসিক রোগকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই এই ঝুঁকির বিষয়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।

উপসংহারে, আমি বলতে চাই যে আমাদের যুবকরা তাদের ডিএনএ’তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত চিহ্ন, দেশভাগ, চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধসমূহ, বাংলাদেশ যুদ্ধ, জরুরি অবস্থা, অস্থির ৮০, বাবরি মসজিদ ধ্বংস, কারগিল যুদ্ধ, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ এবং ভুলতে না পারা বৈশ্বিক মন্দা বহন করে। আমি মনে করি আমাদের তাদের প্রতি আরও আশাবাদী ও ধৈর্যশীল হতে হবে।
উদ্ভাবন বিশ্বকে আরও পরিবর্তিত করবে এবং শিক্ষা অবশ্যই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না’।

Comments are closed.