Also read in

আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইন কিন্তু এখনো চিন্তার বিষয়, সেমিতে ওটামেন্ডি-মেসিকে টার্গেট করবে কলম্বিয়া

কোপা আমেরিকা যেন মেসিময়। একের পর এক ম্যাচে দলকে উতরে দিচ্ছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। এ মরশুমে বার্সেলোনার হয়ে এতটা দাপট দেখাতে পারেননি এল এম টেন। তবে কোপায় এসে যেন নিজের সেরা ফুটবল খেলছেন মেসি। আর তার এমন পারফরম্যান্সের সুবাদে আর্জেন্টিনা ও টুর্ণামেন্টে এগিয়ে চলেছে। ফেবারিট হিসেবে শুরু করে লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে আর মাত্র দুই ধাপ পিছিয়ে আর্জেন্টিনা। তবে আসল লড়াইটা কিন্তু এখান থেকেই শুরু হচ্ছে।

কোয়াটার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয় ছিনিয়ে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। তিনটি গোলের দুটিতেই মেসির অ্যাসিস্ট। অন্যটা ইনজুরি টাইমে এক দুর্ধর্ষ ফ্রি-কিকে তার নিজের করা। সোজা কথায়, এই মুহূর্তে মেসিময় কোপা আমেরিকা। আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল এর টিকিট আদায়ের পর অধিকাংশই তাদের ফেবারিট বলছেন। কারণ কিন্তু সেই মেসি। বার্সা তারকার ফর্ম এর বিচারেই আর্জেন্টিনাকে খেতাব জয়ের প্রবল দাবিদার বলা হচ্ছে। তবে মেসি যদি নিজের স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে না পারেন, তখন কি হবে? সত্যি কথা বললে, এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনাকে বড্ড বেশি মেসি নির্ভর মনে হচ্ছে। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইন কিন্তু ভঙ্গুর। অনেকেই হয়তো ইকুয়েডর ম্যাচের স্কোর লাইন দেখে ভাবছেন খুব সহজেই জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। তবে বিষয়টা কিন্তু মোটেও সেরকম ছিলনা।

৪০ মিনিটে প্রথম গোল করার পর দ্বিতীয় গোলের জন্য ৮৪ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। ৮৩ মিনিট পর্যন্ত কিন্তু লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে ছিল ইকুয়েডর। তারা দু তিনটে দারুন সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল করতে পারিনি। ইকুয়েডরের মত দলের বিরুদ্ধেই আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইন কে অধিকাংশ সময়ই চাপে মনে হয়েছে। নিকোলাস ওটামেন্ডি, একুনা ও পেজেল্লা ডিফেন্সিভ ডিফেন্ডার নন। এরা অ্যাটাকিং ডিফেন্ডার। মেসি- মার্টিনেজরা যখন আক্রমণ গড়ে তুলেন তখন ওটামেন্ডি রা এতটা উপরে উঠে আসেন যে বিপক্ষ যদি কাউন্টার অ্যাটাক করে তাহলে তাদের কাছে ফাউল করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকেনা। প্রতিটি ম্যাচেই কিন্তু এমনটা হচ্ছে। একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে ওটামেন্ডি বড় বেশী ফাউল করেন। আর্জেন্টিনার কোচ স্ক্যালোনির হাতে ডিফেন্স লাইনে তেমন বিকল্প ও নেই। যাকে তিনি শেষ দুই ম্যাচে পরিবর্ত হিসেবে খেলিয়েছেন সেই টেগলাফিকো তো ওটামেন্ডি থেকে আরো একধাপ এগিয়ে।
ইকুয়েডরের মতো দল আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইনের ভুলত্রুটির ফায়দা তুলতে পারেনি। তাই বলে কলম্বিয়া অথবা ব্রাজিলের মতো দল পারবে না, সেটা ভাবলে মারাত্মক ভুল করছেন।

আর্জেন্টিনাকে আটকে দেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, মেসিকে বোতলবন্দী করে রেখে দাও। এই আর্জেন্টিনা দলে মেসি ক্রিয়েটার ও ফিনিশার দুটো দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিকল্প নেই দলটা তে। এটা সত্যি, এখন পর্যন্ত টুর্ণামেন্টে শুধু দুটি গোল হজম করেছে আর্জেন্টিনা। তবে এটাও আরেকটা সত্য যে তারা এখনো ব্রাজিলের মতো দলের বিরুদ্ধে খেলেনি।

লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ দলই এখন বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে রাফ ফুটবল খেলে। সেমিতে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধেও একই স্ট্যাটিজি নিবে কলম্বিয়া। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইন কে টার্গেট করে টাফ ফুটবল খেলতে পারে তারা।

ওটামেন্ডি চট করে মাথা গরম করে ফেলেন। ফলে তিনি সবসময়ই বিপক্ষের রাডারে থাকেন। ‌ আমার মনে হচ্ছে সেমিতে মেসিকে ও টার্গেট করবে কলম্বিয়া। কারণ তারা ভালো করেই জানে বার্সা তারকা কে আটকে দিলে আর্জেন্টিনা কেও আটকে দেওয়া যাবে।

আর্জেন্টিনা জয়ের মধ্যে রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে দলের ফাঁকফোকর গুলো নজরে আসছে না। ‌স্কালোনির আরও একটা স্ট্র্যাটেজি কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্লিক করে নি। তা সত্ত্বেও আর্জেন্টাইন কোচ সেটা চালিয়ে যাচ্ছেন। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার মত তারকা কে বসিয়ে তিনি প্রথম একাদশে রাখছেন গঞ্জালেজ কে। ‌ এর প্রধান কারণ হচ্ছে গঞ্জালেস মাঝ মাঠে ডিফেন্সিভ ভূমিকাও পালন করতে পারেন। ‌ তবে ডি মারিয়া জাত ফুটবলার। ‌ বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই তিনি পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন।

কলম্বিয়া যদি মেসিকে বোতল বন্দী করে রাখে তখন মার্টিনেজের সঙ্গে ডি মারিয়া কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন। ‌

অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি ব্রাজিল। তবে দল হিসেবে কিন্তু তারা আর্জেন্টিনা থেকে এগিয়ে। অনেকটা ব্যালেন্সড। তাদের ডিফেন্স লাইনে রয়েছেন ডেনিলো, মারকুইনহোস, বর্ষীয়ান থিয়াগো সিলভা এবং লোডি। মাঝমাঠে ক্যাসিমির, ফ্রেন্ড এবং ফিরমিনো। আর আক্রমণভাগে নেইমার। কাজেই এমন একটা

লাইনআপকে সমীহ না করে থাকা যাবেনা। পেরুর বিরুদ্ধে সেমিতে অনেকটা এগিয়ে ব্রাজিল। তবে আমি কোপায় সবচেয়ে বেশি নিরাশ হয়েছি উরুগুয়ের পারফরম্যান্স দেখে। দলটাকে প্রথম ম্যাচ থেকেই ছন্দে মনে হয়নি। সুয়ারেজ ও কাভানিকে দেখে ক্লান্ত মনে হয়েছে। একই অবস্থা ছিল ভালভার্দে এবং দিয়েগো গডিন এর।

Comments are closed.