Also read in

লক ডাউনে হাইলাকান্দি সমাজ কল্যান বিভাগে দুর্নীতি : সি আই ডি তদন্তের দাবি জোরদার

হাইলাকান্দি জেলায় সমাজ কল্যান বিভাগের অধীন বিভিন্ন আই সি ডি এস প্রকল্পে শিশু খাদ্য সরবরাহ সরকারি কার্যালয়কে ঠিকাদারের গোদাম বানানো সহ শিশু খাদ্যের পরিবহন ব্যায়ের নামে বেলাগাম দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়িকা সংস্থা সহ জেলার বিভিন্ন সংস্থা সংগঠনের পক্ষ থেকে এনিয়ে সি আই ডি তদন্তের দাবি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে । লালা আইসিডিএস প্রকল্পের কার্যালয়ের ভেতর ঠিকাদার রীতিমতো গোদাম বানিয়ে নিয়েছেন ।‌ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের প্রতিটি শিশুর প্রতিদিনের খাদ্যের পরিবহন ব্যায়ের জন্য অর্থ মঞ্জুর হলেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাগ্যে পুরো কেরিং ভাতা মিলে না ।।যার ফলে এনিয়ে জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়িকাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ, এনজিও নামধারী বিভাগীয় ঠিকাদার শিশুখাদ্য সরবরাহের নামে রাজনৈতিক দাপট খাটিয়ে প্রকল্পের লালা সহ বিভিন্ন কার্যালয়কে গোদামে পরিনত করেছেন । সেইসঙ্গে শিশুখাদ্য সরবরাহের সময় পরিমানে কারচুপি সহ পরিবহন ব্যায় প্রদানেও দুর্নীতি করছেন । আর এই অনিয়ম নিয়ে জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়িকা সংস্থা সহ বিভিন্ন সংস্থা সংগঠন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেছে।‌ লালা আই সি ডি এস প্রকল্পের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা সংস্থা এনিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যে জেলা উপায়ুক্তের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে । অন্যদিকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এনিয়ে সি আই ডি তদন্তের দাবি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

হাইলাকান্দি জেলা বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি গোবিন্দ লাল চ্যাটার্জির অভিযোগ, সমাজ কল্যান বিভাগের লালা, আই সি ডি এস প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা,হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, হাইলাকান্দি জেলায় অঙ্গনওযাডি কেন্দ্রের প্রতিটি শিশুর প্রতিদিনের খাদ্যের পরিবহন ব্যায়ের জন্য বরাদ্ধ অর্থ আত্মাসাতের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে । তিনি এনিযে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন । অভিযোগে প্রকাশ, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের শিশু খাদ্য, দ্রব্য বহনের জন্য পরিবহন ভাতা বরাদ্ধ করা হলেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরকে পুরো ভাতা দেওয়া হয় না । লকডাউনের সময় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র -র হিসাব মতে হাইলাকান্দি জেলায় ছয় মাস থেকে তিন বছর বয়সের ৪৭ হাজার পাঁচ শত ১২ টি শিশুর খাদ্য মঞ্জুর করে সরকার । সেইসঙ্গে গর্ভবতী ও প্রসুতি মিলিয়ে প্রায় উনিশ হাজার মহিলা রয়েছেন . । সেইহিসাবে শিশু ও মহিলা মিলিয়ে মোট ৬৬ হাজার চার শত ৪০ জন বেনিফিসারির জন্য জনপ্রতি প্রতিদিন শিশুখাদ্য পরিবহন বাবত কুড়ি পয়সা করে বরাদ্ধ করা হয়েছে. । কিন্তু বাস্তবে কর্মীদের হিতাধিকারী অনুপাতে পরিবহন ভাতা না দিয়ে টি এ আর বাবদ অতি সামান্য টাকা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, জেলার লালা আই সি ডি এস প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিভিন্ন অংগনওয়াদি কেন্দ্রে অত্যন্ত নিম্নমানের শিশুখাদ্য, সামগ্রী সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ।হাইলাকান্দির নবাগত জেলা উপায়ুক্ত মেঘ নিধি দাহাল কে দেওয়া এক স্মারকপত্রে লালা আই সি ডি এস প্রকল্প অঙ্গনওযাডি কর্মী সহায়িকা সংস্থার সম্পাদিকা মধুমিতা গুপ্ত উল্লিখিত অভিযোগ করে বলেন, বিভাগীয় ঠিকাদার লালা আই সি ডি এস প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করে থাকেন,। যার ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের কাছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে অপদস্থ হতে হচ্ছে। তাই শিশু খাদ্য সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতি বনধ করতে তার গুনগত মান যাচাই করতে তদন্ত কমিটি গঠন করতে তিনি জেলা উপায়ুক্ত কে অনুরোধ জানান ।। মধুমিতা গুপ্ত বলেন , অন্য সরকারি বিভাগের আধিকারিক দ্বারা শিশু খাদ্য গুলো সরকারি গাইড লাইন মতে পরীক্ষা করে দেখার পর তা,বিতরণ করা হলে দুর্নীতি হ্রাস পাবে।। পরীক্ষা নিরিক্ষার পর অনুমতি পাওয়ার পর বিভাগীয় কার্যালয়ের গোডাউন থেকে কর্মীদের মধ্যে বন্টন করার দাবি জানান তিনি।। প্রদত্ত স্মারকপত্রে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়িকা সংস্থার সম্পাদিকা আরও অভিযোগ করে বলেন, অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজাররা নিজ নিজ এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শন করে কর্মীদের কাছ থেকে অফিসিয়াল সব তথ্য সংগ্রহ করার কথা থাকলেও তা তারা করেন না। উল্টো লকডাউনের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই অংগনওয়াদি কর্মীদের লালা আই সি ডি এস প্রকল্পের কার্যালয়ে ডেকে পাঠান । যার ফলে লকডাউনের সময় কর্মীদের যাতায়াত করতে খুবই অসুবিধার পাশাপাশি অধিক খরচ বহন করতে হচ্ছে । তাই এব্যাপারে সুপারভাইজাররা সংশ্লিষ্ট এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে অফিসিয়াল তথ্য জোগাড় করার জন্য বিশেষ দাবি তুলে ধরেন তিনি । এছাড়াও বিভাগীয় তরফে জারি করা পন্য সামগ্রীর মূল্য তালিকা থেকে বাজার মূল্য অনেক বেশি থাকে । যার ফলে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা অনেক সময় বিপাকে পড়তে হচ্ছে । তাই এব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি লালা আই সি ডি এস প্রকল্প কার্যালয় যেহেতু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সহায়িকা অর্থাৎ মহিলাদের কার্যালয়, সেহেতু মহিলাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে উক্ত কার্যালয়কে সি সি টিভির আওতাধীন আনার দাবি জানিয়েছেন মধুমিতা গুপ্ত । একই সঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সরকারি নির্দেশে মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কর্তব্য
পালন করতে হচ্ছে।৷ তাই মেডিক্যাল টিমের মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিরোধ মূলক কিটস অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রদান করতে তিনি জেলাশাসকের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে হাইলাকান্দি জেলায় সমাজ কল্যান বিভাগে অনিয়মের উত্থাপিত অভিযোগটি অসম রাজ্য শিশু সুরক্ষা অয়োগের দৃষ্টি গোচর হয়েছে বলে জানা গেছে ।‌অসম রাজ্য শিশু সুরক্ষা অয়োগের সদস্য অজয় দত্ত জানান, শিশু সুরক্ষা কমিশন উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে।‌ একইভাবে জেলা সমাজ কল্যান আধিকারিক জ্যোতির্ময় দৈমারি ও জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Comments are closed.