Also read in

শহরকে জঞ্জালমুক্ত করতে ফুটপাত-সাফাই অভিযান ট্রাফিক পুলিশের, "শুধুমাত্র আমাদের ওপর জুলুম হয়" অভিযোগ হকারদের

নির্বাচনের আগে শহরের রাস্তাঘাটের ফুটপাত গুলোকে দখলমুক্ত করতে সোমবার দিনভর অভিযান চালায় ট্রাফিক পুলিশ। অবশ্য এতে ব্যবসায়ীদের রোষের মুখে পড়তে হয় তাদের। নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে ফুটপাত দখলমুক্ত করার নামে শুধুমাত্র দুর্বল ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম চালাচ্ছে পুলিশ, এমনটাই অভিযোগ করেন ফুটপাতে ব্যবসা করা হকাররা। তাদের বয়ান, “প্রশাসন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার জন্য নির্ধারিত জায়গা দিচ্ছেনা, অথচ যখন-তখন আমাদের উচ্ছেদ করে আর্থিকভাবে কোমর ভেঙে দিচ্ছে।” ট্রাফিক আধিকারিকরা বলেন, শহরে ফুটপাতগুলো জবরদখল করে রেখেছেন কিছু ব্যবসায়ী, এতে সাধারণ মানুষের চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় এবং বিপদের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই এই অভিযান চালানো হচ্ছে, আগামীতে শহরের সবগুলো ফুটপাত থেকে জবরদখল হটিয়ে সাধারণ মানুষের চলাফেরার সুবিধা করে দেওয়া হবে।

সোমবার সকাল থেকেই ট্রাফিক আধিকারিকরা দলবেঁধে শহরের ফুটপাত থেকে জবরদখল হঠানোর কাজে নেমে পড়েন। এতে নেতৃত্ব দেন ট্রাফিক আধিকারিক শান্তনু দাস। অফিসপাড়া সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে দেবদূত পয়েন্ট হয়ে সেন্ট্রাল রোড পর্যন্ত এলাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয় এদিন। প্রথমে ব্যবসায়ীদের বলা হয় তারা যেন নিজে থেকেই দোকান গুটিয়ে নেন। যারা এতে বাধা দিয়েছেন, পুলিশের আধিকারিকরা নিজেই দোকানগুলো হটিয়ে দিয়েছেন।

ট্রাফিক আধিকারিক আতিকুর রহমান বলেন, “শহরের রাস্তাঘাটে এমনিতেই যানবাহনের সংখ্যা বেশি, এই অবস্থায় ফুটপাত দখল হয়ে থাকায় সাধারণ মানুষকে হেঁটে চলা ফেরা করতে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা অসুবিধায় পড়েন। আমরা দেখেছি এক পড়ুয়া ফুটপাতে জায়গার অভাবে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেছেন। এমন আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই আমরা আগে এই অভিযান চালাচ্ছি। একেবারে আইন মেনে কাজ করা হচ্ছে, ফলে কেউ আমাদের দোষারোপ করে লাভ নেই। আগামীতে শহরের অন্যান্য রাস্তায়ও জবরদখল হটিয়ে দেওয়া হবে।”

তবে ব্যবসায়ীরা বলেন, “করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এবং লকডাউন ইত্যাদি কাটিয়ে আমরা আর্থিকভাবে একেবারেই বিপর্যস্ত। ছোটোখাটো জিনিসপত্র বিক্রি করে আমরা আবার স্বাভাবিক স্রোতে ফিরতে চাইছি। বহুবার প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানিয়েছি, আমাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে দিতে যেখানে বসে ব্যবসা করা যায়। কেউ আমাদের কথায় কান দেয়না, আমরা একেবারেই অভিভাবকহীন। সারাবছর ফুটপাতে ব্যবসা করি, হঠাৎ করে এভাবে আগাম নোটিশ না দিয়ে আমাদের দোকান ভেঙে দেওয়া অমানবিক। প্রশাসন শুধু আমাদের যখন-তখন হেনস্থা করতে এগিয়ে থাকেন, অথচ বড় ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে বিল্ডিং বানালে সেগুলো তাদের চোখে পড়ে না। এমনকি বিধায়ক সাংসদরাও বড় বড় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান। আমরা তাদের কাছে প্রশ্ন করছি, শুধুমাত্র আমাদের প্রতি এমন ব্যবহার কেন?”

শিলচর শহরে অতীতে বহুবার এভাবে ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। দখলমুক্ত হওয়ার পরেই ব্যবসায়ীরা আবার নিজেদের দোকান গড়ে তোলার কাজে লেগে পড়েন। সাধারণ মানুষ একদিকে যেমন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে অসুবিধার সম্মুখীন হন, প্রতিবাদ করলে ফুটপাতে বসে ব্যবসায়ীরা উল্টো মানুষের ওপর চড়াও হন, তাদের অপমান করেন। পুলিশ একদিন বা দুইদিন অভিযান চালালেও পরবর্তীতে তাদের সামনেই হয়তো এই ব্যবসায়ীরা আবার দোকান খুলে বসবেন এবং কেউ কিছুই বলতে পারবে না। এটাই শিলচর শহরের স্বাভাবিক চিত্র।

Comments are closed.