Also read in

বাবা যে কেন্দ্রের সুপারভাইজিং অফিসার সেই কেন্দ্রেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ছেলে! স্কুল পরিদর্শকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন শিক্ষক মহলে, জিলকদর আলি স্কুলে কেলেঙ্কারি

কাছাড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষাকে ঘিরে ফের অনিয়ম। বাবা যে পরীক্ষা কেন্দ্রের সুপারভাইজিং অফিসার(এসও) সেই কেন্দ্রে দিব্যি পরীক্ষা দিচ্ছে তাঁর ছেলে! এই ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে জেলার শিক্ষক মহলে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসায় চাপে পড়ে ওই সুপারভাইজিং অফিসারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন কাছাড়ের জেলা স্কুল পরিদর্শক সেমিনা ইয়াসমিন আরা রহমান। তবে সরিয়ে দিলেও এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে স্কুল পরিদর্শকের ভূমিকা নিয়েও।

জানা গেছে, এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় কাছাড়ের অরুণাচলের জিলকদর আলি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্রে আশপাশ এলাকার মোট ৫ টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। এই পরীক্ষা কেন্দ্রে সুপারভাইজিং অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে বড়যাত্রাপুরের সিরাজুল অালি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম লস্করকে। কেলেঙ্কারি হয়েছে এখানেই। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই জিলকদর আলি হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল সেন্টারেই পরীক্ষা দিচ্ছে সুপারভাইজিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম লস্করের ছেলে আল নূর অ্যাকাডেমি স্কুলের ছাত্র শাহিন আহমেদ লস্কর। শেষমেশ ধরা পড়েগেছে এই ঘটনা।
অভিযোগ উঠেছে, বাবার অধীনে এবং ছত্রছায়ায় পরীক্ষা দিয়ে অনৈতিক বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে শাহিন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনও ব্যক্তির ছেলে মেয়ে বা নিকট আত্মীয় কেউ পরীক্ষার্থী থাকলে ওই ব্যক্তিকে সেই কেন্দ্রে সুপারভাইজিং অফিসার হিসেবে নিযুক্তি দেওয়া যায় না। কিন্তু জিলকদর আলি পরীক্ষা কেন্দ্রের বেলায় এই নিয়মের কোনও তোয়াক্কাই করা হয়নি। ফলে কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে সুপারভাইজিং অফিসার বাবার তত্তাবধানেই ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কয়েকদিন পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছে শাহিন আহমেদ লস্কর।

এ দিকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সুপারভাইজিং অফিসারদের নিয়োগ করেন স্কুল পরিদর্শক, তাই এসও হিসেবে নিযুক্ত বাবার কেন্দ্র ছেলের পরীক্ষা দেওয়ার দায় এড়াতে পারেন না তিনিও। এ নিয়েও বলাবলি শুরু হয়েগেছে। যদিও এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনও দায় নিতে রাজি হননি স্কুল পরিদর্শক সেমিনা ইয়াসমিন আরা রহমান। উল্টে সংশ্লিষ্ট এসও-র কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে তিনি বলেছেন, সিরাজুল ইসলাম লস্করের জানানো উচিত ছিল যে কেন্দ্রে তিনি এসও-র দায়িত্ব পেয়েছেন সেখানেই পরীক্ষা দিচ্ছে তাঁর ছেলে। কারন কারো ছেলেমেয়ে বা নিকট আত্মীয়স্বজন কেউ সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী হয়ে থাকলে সুপারভাইজিং অফিসার সহ ইনভিজিলেটরদের তা আগে নিজে থেকেই জানিয়ে দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। অথচ সিরাজুল ইসলাম লস্কর তা করেন নি।

অন্যদিকে স্কুল পরিদর্শক সাফাই গাইলেও নিয়ম হচ্ছে যাঁদের এসও- পদে নিযুক্তি দেওয়া হয়, তাঁদের ছেলেমেয়ে কিংবা অাত্মীয়স্বজন কেউ পরীক্ষার্থী হলে পরীক্ষা শুরুর কয়েকদিন আগে এ নিয়ে লিখিত ‘অান্ডারটেকিং’ দিতে হয়। সিরাজুল ইসলাম লস্করের কাছ থেকে আদৌ কোনও আন্ডারটেকিং নেওয়া হয়েছে কি? না, নেওয়া হয়নি। সেমিনা ইয়াসমিন আরা রহমান তা স্বীকার করেছেন সংবাদ মাধ্যমের কাছে। যদিও ঘটনাটা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে সিরাজুল ইসলাম লস্করকে এসও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অাবার ঘটনার দায়ভার পুরোপুরি স্কুল পরিদর্শকের দিকে ঠেলে দিয়ে জিলকদরের এসও সিরাজুল ইসলাম লস্কর বলেছেন বিভাগ তাঁকে যে দ্বায়িত্ব দিয়েছে সেটা তিনি পালন করেছেন। জিলকদর পরীক্ষা কেন্দ্রে তাঁর ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছে এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে স্কুল পরিদর্শক কার্যালয় থেকে তাঁর কাছে কেউ কিছু অাগে জানতে চায়নি। জিজ্ঞাসাও করেনি। ফলে সবমিলিয়ে এই ঘটনায় কোনও বড় ধরনের বোঝাপড়া জনিত কেলেঙ্কারি রয়েছে কিনা তাও উড়িয়ে দিচ্ছে না শৈক্ষিক মহল।

Comments are closed.