Also read in

তবে কি গুয়াহাটির পর গোষ্ঠী সংক্রমনের দিকে এগোচ্ছে শিলচর !

আসাম টার্গেটেড সার্ভিলেন্স প্রোগ্রামের আওতায় কাছাড় জেলার প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায় শনিবার, জয়পুর থানার এক পুলিশ কর্মী। রবিবার এর আওতায় দ্বিতীয় ব্যক্তির খোঁজ মেলে, আইরংমারা এলাকার বাসিন্দা, ৩০ বছর বয়স্ক অসিত দাস। তবে যুবকটি গত পাঁচ দিন ধরে বড়খলা বিধানসভা সমষ্টির অন্তর্গত ছোট দুধপাতিল গ্রামের দুর্গাবাড়ি এলাকায় ছিল। এদিকে শিলচর শহরের দাস কলোনি এলাকায় চন্দ্রা সাহা নামের এক মহিলা পজিটিভ হন। এলাকাবাসীর মতে তিনি হোম কোয়ারেন্টাইন উপেক্ষা করে জনসমক্ষে ঘুরে বেরিয়েছেন। তারাপুর চাঁদমারি এলাকার আক্রান্ত মহিলা ২৫ বছরের শর্মিষ্ঠা পালের পরিবারের এক সদস্য এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছেন।

রবিবার সন্ধ্যেবেলা এদের কোভিড পজিটিভ হওয়ার খবর বেরোনোর পর যদিও স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে, রিপোর্ট আসার আগে এরা যেভাবে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন, এতে আগামীতে গোষ্ঠী সংক্রমনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

আমাদের এই প্রতিবেদনে আমরা চারটি ঘটনা তুলে ধরছি-

প্রথম ঘটনা এটিএসপি’র পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়া অসিত দাসের। তিনি কাজের সূত্রে বড়খলা বিধানসভা সমষ্টির ছোটদুধপাতিল গ্রামের দুর্গাবাড়ি এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছেন। দুর্গাবাড়ি এলাকাটি ছোটদুধপাতিল গ্রামের মূল বাজার। প্রতিদিন হাজারখানেক লোক এখানে জমায়েত হন। সঙ্গে রয়েছে একটি বিরাট মাছের আরত। অসিত দাসের আত্মীয় এই মাছ বাজারের ব্যবসায়ী। শোনা গেছে তিনি নিজেও মাঝে মাঝে মাছ বাজারে এসেছেন। তার যদি আগে থেকেই করোনার সংক্রমণ থেকে থাকে তবে বাজার এলাকার প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তি সন্দেহের আবর্তে চলে আসবেন। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে এসব এলাকায় কনটেইনমেন্ট জোন করার সম্ভাবনা রয়েছে। অসিত দাস দুধ পাতিল থেকে বেরিয়ে শিবচরের মালুগ্রাম এলাকায় এসেছেন বলেও খবর রয়েছে। দুধ পাতিল থেকে মালুগ্রাম আসতে মধুরাঘাট বা ইটখলাঘাট দিয়ে পেরোতে হয়, নৌকায় অনেক মানুষ একসঙ্গে নদী পার করেন। তিনি যদি নৌকায় চড়ে নদী পেরিয়ে থাকেন তবে অনেক বেশি মানুষের সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।

দ্বিতীয় ঘটনা দাস কলোনির বাসিন্দা চন্দ্রা দাসের। তিনি তার স্বামী উত্তম সাহা এবং দুই সন্তানের সঙ্গে দাস কলোনির উত্তমাশা লেনে থাকেন। সম্প্রতি পরিবারের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তারা ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরেছেন। সরকারের নতুন এসওপি অনুযায়ী, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি বিমানে ফিরলে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। রবিবার বিকেলে চন্দ্রা সাহার পজিটিভ হওয়ার খবর এসেছে। তবে শোনা গেছে, সোমবার সকালে তাদের বাড়িতে একটি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান রয়েছে। রবিবার সকালে তাদের বাড়িতে বেশ কিছু শাস্ত্রীয় আচার পালন করা হয়েছে এবং এতে পুরোহিত, নাপিত ইত্যাদি মানুষ গেছেন। এছাড়া চন্দ্রা দাস সহ তার পরিবারের কিছু সদস্য এলাকার দোকান ও বাজারে গেছেন। এই কথাগুলো যদি সত্যি হয়, তবে দাসকলোনি এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমনের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

তৃতীয় ঘটনা তারাপুর চাঁদমারি এলাকার মহিলা ২৫ বছরের শর্মিষ্ঠা পালের। শর্মিষ্ঠা এবং তার স্বামী সম্প্রতি মুম্বাই থেকে ফিরেছেন। এলাকাটি জনবহুল এবং আগে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের সরকারি কোয়ারেন্টাইনে পজিটিভ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়ায় এলাকাটি কনটেইনমেন্ট জোন হয়েছিল। এবার শর্মিষ্ঠা পালের পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে যদি এলাকায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তবে পুরো এলাকা কনটেইনমেন্ট হয়ে যেতে পারে। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে স্বাস্থ্যবিভাগের আধিকারিকদের সিদ্ধান্তের উপর।

চতুর্থ ঘটনা জয়পুর থানার পুলিশ আধিকারিক আশরাফুল আলম বড়ভূইয়ার। শোনা যাচ্ছে, আশরাফুল গত ২০ জুন প্রশাসনের নির্দেশে জয়পুর শিবস্থানে গিয়েছিলেন। যে গাড়িতে গিয়েছিলেন সেই গাড়িটিতে আর কে কে ছিলেন এটা স্পষ্ট হয়নি। ২৬ জুন জয়পুর পুলিশ স্থানীয় গ্রাম রক্ষীবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে একটি সচেতনতা মিছিল আয়োজন করেছিল। সেই মিছিলেও উপস্থিত ছিলেন এই পুলিশকর্মী আশরাফুল। গ্রাম রক্ষীবাহিনীর কর্মীরা জয়পুর, কনকপুর, বালাধুন, সুভাষনগর, লেদিয়াছড়া, হরিনগর, দলছইড়া ইত্যাদি এলাকা থেকে যোগদান করেছিলেন। এছাড়া পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন আশরাফুল।

করিমগঞ্জ জেলায় ইতিমধ্যে অনেকের এটিএসপির অধীনে পরীক্ষা করিয়ে পজিটিভ এসেছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। যদিও তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। শনিবার কাছাড় জেলার বিএসএফ এবং আর্মির জওয়ানরা আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা সবাই দেখেছি ত্রিপুরায় কিভাবে বিএসএফ জওয়ানরা একের পর এক আক্রান্ত হয়েছিলেন। কাছাড় জেলায় মোট ২৫ জন পুলিশের পরীক্ষা হয়েছিল এর মধ্যে একজন পজিটিভ হয়েছেন। বাকিদের সরকারি কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর শহরভিত্তিক শনি-রবি লকডাউন নিয়ে জনমনে কিছুটা ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ একে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে শনিবার এবং রবিবার এর কয়েকটি ঘটনায় প্রত্যেক ব্যক্তিকে আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। তবে কি গুয়াহাটির পর শিলচর শহর তথা কাছাড় জেলায় গোষ্ঠী সংক্রমনের সম্ভাবনা দেখা দিতে শুরু করেছে!

Comments are closed.