Also read in

শিলচরের মালুগ্রামে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার কিস্তি আদায় প্রক্রিয়া রূপ নিল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের

অনারুন বেগম মজুমদার ও আয়েশা বেগম মজুমদার ক্ষুদ্রঋণ কোম্পানি আরোহন থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সংস্থার রংপুর শাখার ম্যানেজার মাশুক আহমেদের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা গত ছয় মাসে একটিও কিস্তি (ইএমআই) পরিশোধ করেননি এবং সেই কারণেই, গ্রুপ প্রধান সহ পুনরুদ্ধার (রিকভারি) এজেন্টদের একটি দল ঋণ গ্রহীতাদের বাড়িতে গিয়েছিল।

অরোহন হল কলকাতায় সদর দফতর থাকা একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান যা আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের গ্রাহকদের গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত ভাবে ঋণ প্রদান করে থাকে। অনারুন বেগম মজুমদার ও আয়েশা বেগম মজুমদার ঋণগ্রহীতাদের যে গ্রুপে আছেন সেই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন লীলা কুর্মি।

মাশুক আহমেদ জানান যে দুই মেয়ে, চার ছেলে এবং গ্রুপের প্রধান তাদের বাড়িতে গিয়েছিল এবং তাদের জানানো হয়েছিল যে তাদের একজন বাসিন্দা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে যার কারণে তারা ইএমআই দিতে পারছে না। “তাদের পাওয়া যাচ্ছিল না তাই আমার কর্মীরা তাদের সাথে ফোনে কথা বলেছে। কলটিও রেকর্ড করা হয়েছে। তারা নিজেরাই আমার কর্মীদের সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করে অফিসে রাখতে বলেছে। তারা বলেছিল যে বকেয়া পরিশোধ করে সিলিন্ডার সংগ্রহ করবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী , আমরা সিলিন্ডার সরিয়ে দিয়েছি।” তবে আয়েশা বেগম মজুমদার এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন যে তারা সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার কথা কখনো বলেননি। তিনি আরো বলেন, আরোহণের ঋণ আদায়কারী দলটি শুধু গ্যাস সিলিন্ডার নয় আরো অন্যান্য গৃহস্থালির জিনিসপত্র এবং টাকাপয়সা উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।

দলটি সিলিন্ডার নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে মালুগ্রামের ঘনিয়ালা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের বাধা দেয়। তারা এ ধরনের বলপূর্বক আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। ঋণ আদায় কারী দলের ছয়জনকে ঘটনাস্থলে আটক করে রাখা হয়। মাশুক আহমেদ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর তাকেও ঘেরাও করা হয়।

সে সময় আটক রাখা ব্যক্তিদের উদ্ধার করার জন্য বাইরে থেকে আসা কয়েকজন প্রয়াস চালায়, এতে উত্তেজনার আরও বৃদ্ধি ঘটে।

শিলচর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বিশাল পূলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অরোহন কর্মীদের উদ্ধার করেন। ওসি ঋণ সুবিধাভোগীদের সাথে কথা বলেছেন এবং বলেছেন যে তারা বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করতে পারেন।

বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছে যে তাদের সাথে কর্মীদের কোনও বিরোধ নেই, তবে তারা ঋণ আদায়ের পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। অপরদিকে বাইরে থেকে আসা কয়েকজনের দলটি জোর দিয়ে বলেছিল যে তারা কর্মীদের উদ্ধার করবে। পুলিশ আধিকারিকদের সামনে ঐ দলটি উচ্চস্বরে বেশ কয়েকটি সতর্কবার্তা ও জারি করে।

অরোহন কর্মীদের উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা ধরে মালুগ্রাম ইদগা এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। ইদগা কমপ্লেক্সে দোকানপাট ভাঙচুর, পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে; কয়েকটি ই-রিকশায় ভাঙচুর করা হয়। ডিএসপি, কাছাড় পুলিশ ডাঃ কল্যাণ কুমার দাস, ওসি শিলচর সদর সিআরপিএফ জওয়ানদের বিশাল ব্যাটালিয়ন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

উল্লেখ্য,ঐ এলাকাটিতে ২০২০ সালেও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।

Comments are closed.