Also read in

১৬ ঘন্টা পরেও জ্বলছে পানপট্টির গোদাম, কোটি টাকার ক্ষতি, বিল্ডিং ধসে পড়ার আশঙ্কায় এলাকায় আতঙ্ক

শনিবার সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ পানপট্টির এক জুতার দোকানে আগুন লেগেছিল এবং সেটা ধীরে ধীরে ভেতরের গুদামঘর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। গুদামঘরে বিরাট পরিমাণের জুতোর স্টক ছিল, ফলে মাত্রা ছাড়ায় আগুন। পুলিশ এবং সুরক্ষা বাহিনীর রাতভর তৎপরতায় আগুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারেনি, কিন্তু জুতোর গুদামে এখনো জ্বলছে আগুন। ভোররাত পর্যন্ত ভেতর থেকে লাল আগুনের শিখা চোখে পড়ছিল, কিন্তু সকালে সেটা প্রচন্ড ধোঁয়ায় পরিণত হয়। দোকানের মালিক পক্ষ জানিয়েছেন ভেতরে চামড়া এবং রাবারের জুতোর বিরাট স্টক রয়েছে। সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরি ছাই হবে না আগুন থাকবে।

তিন হাজার স্কয়ার-ফুটের তিন-তলার গুদামঘরটির জানালা-দরজা খুবই কম, পুরোপুরি একটা গম্বুজের মত হলঘর। ফলে বাইরে থেকে খুব একটা ভেতর পর্যন্ত জল বা অন্যান্য কেমিক্যাল পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। সুরক্ষা বাহিনীরা বিভিন্ন দিক থেকে দেয়াল ভেঙে ভেতরে জল ছেঁটানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেটা খুব দূর এগোয়নি। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে ভেতরে স্তুপাকৃত ছাঁই এবং সেখান থেকে কালো ধোঁয়া এখনও বেরোচ্ছে। পুরো এলাকায় প্লাস্টিক-পোড়া গন্ধ রয়েছে।

শিলচর পুরসভার পক্ষ থেকে রাতেই আবর্জনা সরানোর কাজ শুরু হয়। দোকানের সামনের দিকে যে অংশ পুড়ে গেছে সেই আবর্জনা পরিষ্কার করে সুরক্ষা বাহিনীরা ধীরে ধীরে গুদাম ঘরের সামনের অংশ পর্যন্ত পরিষ্কার করে নিয়েছেন। আবর্জনাগুলো পুরসভার ট্রাকে করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার সুমিত সত্যওয়ান জানিয়েছেন, মূলত কাজটি হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবেলা বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং তাঁরা নিজেদের কর্মী এবং গাড়ি ইত্যাদি দিয়ে কাজে সাহায্য করছেন। এমনকি কিছু বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকেও গাড়ি ইত্যাদি প্রয়োজনে নেওয়া হচ্ছে।

জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি, পুলিশসুপার বিএল মিনা, অতিরিক্ত পুলিশসুপার জগদিশ দাস সহ অন্যান্য আধিকারিকরা প্রায় ভোররাত পর্যন্ত এলাকায় ছিলেন। সকালে পুলিশের আরেকটি বাহিনী এবং প্রশাসনের কিছু আধিকারিক এলাকায় উপস্থিত হন এবং কাজের তত্ত্বাবধান করতে থাকেন। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে মূল বিল্ডিংয়ের ইন্সুরেন্স রয়েছে ৭৫ লক্ষ টাকার। জুতোর দোকানের মালিকের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন বিল্ডিংটি বানাতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছিল। তবে এলাকাবাসীরা বলছেন ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি, কেননা এই বিল্ডিংয়ে বিরাট আকারের জুতোর স্টক ছিল এবং তাতে অত্যন্ত দামী দামী ব্র্যান্ডের জুতো ছিল। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনায়াসে কোটি টাকার বেশি হবে। মালিকপক্ষ জানিয়েছেন তারা এখনও স্টক গুনে দেখেননি, ফলে পরিষ্কার হিসেব দিতে পারছেন না।

এলাকায় আশেপাশে অন্যান্য ঘরগুলো কিছু কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গোদাম-ঘরটি ধসে পড়ার সম্ভাবনায় অনেকে আতঙ্কিত। ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘরের ভিতরে আগুন জ্বলছে, এতে দেওয়ালগুলো প্রচন্ড ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যেহেতু পুরো ঘর শুধু চার দেয়ালের এবং সেটা ইট এবং কংক্রিটের বানানো, ফলে একসময় দেওয়ালগুলো ভেঙে পড়তে পারে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এলাকার মানুষ আতঙ্কিত কেননা যদি সরাসরি মাটিতেই দেয়ালটি ঘর ধসে পড়ে তাহলে হয়তো আশেপাশের ঘরগুলোর ক্ষতি হবে না। কিন্তু যদি কোনও এক দিক থেকে ভাঙতে শুরু করে এবং পাশের বিল্ডিং গুলো এর আওতায় আসে, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগের তরফে জেসিকা রোজ লালসিম এব্যাপারে বলেন, “আমাদের আধিকারিকরা সারাক্ষণ সেখানে রয়েছেন এবং পরিস্থিতির ওপর চোখ রাখছেন। আমরা এখনই কাল্পনিক কোনও বক্তব্য দিতে চাই না, তবে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে তৈরি আছি। আগুনে দেয়ালগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু সেটা ভেঙে পড়তে পারে কিনা এব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।”

গোদাম ঘরটি যেভাবে বানানো হয়েছে এতে একেবারেই কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শিলচর শহরের সবথেকে জনবহুল এলাকায় এভাবে একটি ঘর গড়ে তোলা হলো এবং পুরসভা বা প্রশাসন বাধা দিল না, এটা কেমন করে হয়? অনেকেই এই প্রশ্ন করেছেন।

জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি গতকাল রাত এই বিষয়ে বলেছিলেন, “শিলচর শহরে এমন অনেক বিল্ডিং গড়ে উঠেছে যেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়নি, তবে এটা এক-দু’দিনের কথা নয়, বহু দশক ধরে ধীরে ধীরে শহর এই পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছে। আমরা এব্যাপারে চিন্তিত, তবে এখন প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনা। ভবিষ্যতে আমাদের বিশেষজ্ঞরা এলাকা পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন এলাকায় গড়ে ওঠা বিল্ডিংগুলো কতটুকু বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। আমরা আনন্দিত যে এত বড় ঘটনায় কোনও ব্যক্তি আহত হননি। আমি পুলিশ সহ প্রত্যেক সুরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সাধুবাদ জানাতে চাই তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য।”

পুলিশ সুপার বিএল মিনা জানিয়েছেন, পুলিশ এবং সুরক্ষা বাহিনীরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেননি। অনেকেই দোষারোপ করছেন যে আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে অথবা সুরক্ষা কর্মীদের এলাকায় পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে বলে। তবে যেহেতু এটা দুর্ঘটনা, আমরা আগে থেকে জানতে পারি না। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকে ছুটে এসেছেন এবং এতে যতটুকু সময় লেগেছে, সেটা স্বাভাবিক। তবে এলাকায় পৌঁছানোর পর তারা যে পরিশ্রম করেছেন তার জন্য তাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়।

Comments are closed.