Also read in

গুয়াহাটির চাপে সিদ্ধান্ত বদল! কাছাড়ে সোমবার এবং হাইলাকান্দি-করিমগঞ্জে সোম ও মঙ্গলবার চাকা বনধ্ মানছেন চালকরা

গাড়ি ভর্তি যাত্রী অথবা দ্বিগুণ ভাড়া, পাশাপাশি দীর্ঘদিনের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া, এই দাবিতে সোমবার থেকে সারা রাজ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ডেকেছিল সারা আসাম মোটর ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন। রাজ্যস্তরে এটি ঘোষণার পর বরাক উপত্যকায় সংস্থার প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা বনধে নৈতিক সমর্থন করবেন। কিন্তু চালকদের রোজগার যাতে বন্ধ না হয়, সেই কথা ভেবে, উপত্যকার তিন জেলায় চাকা বন্ধ করা হবে না। তবে রবিবার রাতে সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে। কাছাড় জেলায় সোমবার চাকা বন্ধ থাকছে, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দিতে সোম ও মঙ্গলবার বন্ধ পালন করা হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্ত বদলের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারীর সঙ্গে বৈঠক। জানা গেছে, বনধ্ ঘোষণার পর চন্দ্রমোহন পাটোয়ারীর পক্ষ থেকে সারা আসাম মোটর ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল তারা যেন এই মুহূর্তে বনধ্ পালন না করেন। তবে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, অনেক বয়ান ও কথাবার্তার পরও তাদের দাবি মিটিয়ে দেওয়া হয়নি, ফলে এবার বনধ্ হচ্ছেই। শেষমেষ মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয় মঙ্গলবার বিকেল চারটেয় মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করবেন। যেহেতু মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠক এবং এতে সমাধান বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই চাকা বন্ধ অনির্দিষ্টকালের না হয়ে দুইদিনে সীমিত হয়েছে। এটা ভেবে বরাক উপত্যকার তিন জেলার প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নেন তারা অন্তত দুই দিন বন্ধ পালন করবেন।
কাছাড় জেলায় শুধুমাত্র সোমবার অর্থাৎ আজ বন্ধ পালন হচ্ছে। করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি জেলায় মঙ্গলবার ও পালিত হবে। বনধের ফলে বাস, ম্যাজিক গাড়ি, ট্রেকার, ই-রিক্সা ইত্যাদি চলবে না। এতে অবশ্যই সাধারণ মানুষের চলাফেরা ক্ষেত্রে অনেকটাই প্রভাব পড়বে।

বনধের আয়োজকদের পক্ষ থেকে কিশোর কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, “দীর্ঘদিনের বকেয়া মিটিয়ে দেয়নি সরকার। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রায় প্রত্যেকটি নির্বাচনে গাড়ি নেওয়া হয়েছে। বরাক উপত্যকার তিন জেলা মিলিয়ে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার বকেয়া রয়েছে। এই দুঃসময়ে যখন মাসের-পর-মাস চালকরা একটাকাও রোজগার করতে পারেননি, সে সময়ে সরকার শুধু একের পর এক নিয়ম চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিলে অন্তত চালকদের পরিবারের কিছুটা সুরাহা হত। এছাড়া কোভিড প্রটোকলের নামে বলে দেওয়া হয়েছে গাড়িতে অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে, যদি যাত্রী অর্ধেক হয় তাহলে ভাড়া দ্বিগুণ করতে হবে। কেউ কেউ দ্বিগুণ ভাড়া নিতে শুরু করলে পুলিশ তাদের আটকে হেনস্তা করছে। এই কথাগুলো ভেবেই বনধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে বরাক উপত্যকায় অনির্দিষ্টকালের বন্ধ পালন করলে চালকদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হতো। আগামীতে পুজো রয়েছে, যদি পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকে, এই সময়ে কিছুটা রোজগারের সংস্থান হবে। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম নৈতিক সমর্থন দেওয়া হলেও চাকা বন্ধ হবে না। এখন যেহেতু আলোচনার একটা আশা দেখা যাচ্ছে, তাই অন্তত দুই দিনের জন্য বন্ধকে সরাসরি সমর্থন করছি আমরা।”

একই সুরে শিলচর সিটি বাস মিনিবাস মালিক সংস্থার পক্ষ থেকে নীলোৎপল সেন বলেন, “শুধুমাত্র নির্বাচন নয় অন্যান্য কাজেও সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের গাড়ি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে গত ছয় মাস করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এতে দিনে-রাত্রে যখন তখন আমাদের গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। আমরাও সরকারের পাশেই থেকেছি। কিন্তু সময়মতো বকেয়া মিটিয়ে দিলে চালকদের সুবিধা হয়। সরকার কথাগুলো উপেক্ষা করছিলেন তাই বনধ ডাকা হয়েছিল। এবার দেখা যাক আলোচনায় কি হয়।”

এবার প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথমে বনধের নৈতিক সমর্থন করে চাকা বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে কেন সিদ্ধান্ত বদলাতে হল বরাক উপত্যকার প্রতিনিধিদের? তবে কি গুয়াহাটির চাপে এমনটা করতে হলো? দেখার বিষয় হচ্ছে, মন্ত্রী পাটোয়ারীর বৈঠকে চালকদের স্বার্থ কতটুকু স্থান পায়।

Comments are closed.