Also read in

নেগেটিভ হয়েও বিনাচিকিৎসায় মেডিক্যালের কোভিড ওয়ার্ডে ১৮ ঘন্টা থাকলেন শ্বাসকষ্টে ভোগা যুবক

শ্বাসকষ্ট চরম পর্যায়ে পৌঁছায় সোমবার রাতে তড়িঘড়ি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন রাধামাধব রোডের রাজদীপ পাল। সেখানে কোভিড পরীক্ষায় তার রেজাল্ট নেগেটিভ হয়, অথচ কোভিড ওয়ার্ডেই তাকে সারারাত কোন চিকিৎসা ছাড়া রেখে দেওয়া হয়। সকাল থেকেও তার সঙ্গে একই ব্যবহার, শেষে অনেক বলাবলির পর মঙ্গলবার সন্ধেবেলা তার চিকিৎসা শুরু হয়। একসময় তার মনে হয়েছিল আর বাঁচবেন না। হাসপাতালে এসে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও ডাক্তাররা তার সঙ্গে অস্পৃশ্যের মত ব্যবহার করছিলেন, এমনটাই অভিযোগ বছর তিরিশের রাজদীপ পালের।

রাধামাধব রোডের বাসিন্দা রাজদীপ পাল এখন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনের সাহায্যে রয়েছেন। চিকিৎসকরা চিকিৎসার শুরুতেই তাকে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে রেখেছেন। তাদের মতে তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তবে এটুকু পরিষেবা পেতে তাকে ১৮ ঘন্টা কোভিড ওয়ার্ডে বিনাচিকিৎসায় থাকতে হয়েছে, এছাড়া ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে বারবার হাত জোর করতে হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড থেকে ফোনে রাজদীপ পাল বলেন, “আমি শ্বাসকষ্টের রোগী, সোমবার রাতে হঠাৎ করে স্বাস্থ্যের অবনতি হয় এবং কোন কিছু না ভেবেই আমরা শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে যাই। সেখানে প্রথমেই রেপিড এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা হয় এবং কিছুক্ষণ পরে জানানো হয় আমার রেজাল্ট নেগেটিভ। কিন্তু তারা আমাকে কোভিড ওয়ার্ডেই রেখে দেন। কিছু ওষুধ দেন যেগুলো মূলত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেওয়া হয়। তাদের বারবার বললে উত্তর দেন, ১৮ ঘণ্টা আগে আপনাকে কোন ডাক্তার স্পর্শ করবে না, তাই আপাতত শান্ত হয়ে অপেক্ষা করুন। রাতে শ্বাসকষ্ট এমন জায়গায় পৌঁছে যায় মনে হচ্ছিল আর জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরব না। সকাল হতেই চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে হাতজোড় করতে থাকি তারা যেন আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কেউ কেউ উত্তরে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আপনার পরীক্ষার ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আমরা কোনও পরিষেবা দিতে পারব না। ফোনে পরিচিত আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবের কাছে আবেদন রাখি, তারা যেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান। কোনওভাবে যাতে চিকিৎসা শুরু হয়। শেষমেষ প্রায় সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ চিকিৎসা শুরু হয়েছে।”

আমরা সবাই জানি কিছুদিন আগে এভাবেই চিকিৎসার অভাবে শ্বাসকষ্টে ভোগা এক তরুণ শিলচর মেডিক্যাল কলেজে প্রাণ হারান। এছাড়াও চিকিৎসার গাফিলতিতে আরো যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ বারবার সরব হলেও শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের মনোভাবে কোনভাবে পরিবর্তন আসে না। বরাতজোরে রাজদীপ পাল হয়ত বেঁচে গেছেন, না হলে আরেক সায়ন দাসের ঘটনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল।

Comments are closed.