Also read in

ইটখলায় বিজেপি কার্যালয়ের পাশে দিনের আলোয় ছিনতাই তিন লক্ষ টাকা, বাঁচাতে গিয়ে গুরুতরভাবে জখম যুবতী

ইটখলায় কাছাড় জেলা বিজেপির কার্যালয় সংলগ্ন স্বামীজি রোডে দিনের আলোয় ছিনতাই হল তিন লক্ষ টাকা। দুষ্কৃতীরা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় এক তরুণীকে মাঝ রাস্তায় অনেকটা ছেঁচড়ে নিয়ে যায়। এতে আহত হয়ে শিলচরের এক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেনয সর্বানি দেব নামের তরুনী, তার অবস্থা অনেকটাই গুরুতর। তার বাবা সুবল চন্দ্র দেব প্রাক্তন বিএসএনএল কর্মী, বর্তমানে পেনশন পান। মঙ্গলবার মেয়েকে নিয়ে নিজের জমানো টাকা ব্যাংক থেকে তোলেন এবং খুব সাবধানে সেটা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় এমন এক ঘটনায় তার টাকাও গেছে এবং মেয়ে হাসপাতলে চিকিৎসাধীন।

তিনি জানান, বাড়ির কাজের জন্য জমানো অর্থ থেকে তিন লক্ষ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পার্ক রোডস্থ শিলচর শাখা থেকে টাকা তোলেন এবং খুব সাবধানে সেটা নিয়ে বাড়ি আসছিলেন। স্বামীজী রোড হয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে রিকশা থেকে নামেন এবং কিছুটা এগোতেই হঠাৎ কালো পালসার বাইকে চড়ে দুই যুবক তার মেয়ের উপর হামলা করে। খুব সাবধানে একটা ব্যাগে টাকাগুলো ঢুকিয়ে সেটা নিয়ে আসছিল তার মেয়ে সর্বানি। দুষ্কৃতীরা ব্যাগে টান দিতেই সে রাস্তায় পড়ে যায় এবং তাকে অনেকটা টেনে ছেঁচড়ে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এত তাড়াতাড়ি ঘটনাটি ঘটে যায়, কেউ কিছু বোঝার আগেই দুষ্কৃতীরা টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। তবে যতক্ষণ ব্যাগটি ছিনিয়ে নিতে পারেনি ততক্ষন দুষ্কৃতীরা তার সর্বানিকে রাস্তায় ছেঁচড়ে নিয়ে গেছে। এতে গুরুতরভাবে জখম হয়েছে সে। তড়িঘড়ি তাকে শিলচরের ভ্যালি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, হাত পা সহ পেটের বড় একটা অংশ রক্তাক্ত, একটা পা ও সম্ভবত ভেঙে গেছে। এমন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সর্বানি দেব।

এলাকায় সেই সময় প্রচুর মানুষ ছিলেন, অনেকেই দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, কেউ কেউ আবার বাইক নিয়ে দুষ্কৃতীদের পিছু নিতে চেয়েছেন, কিন্তু তাদের কোনও কিছু করার আগেই উধাও হয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, গত কয়েকমাসে যতগুলো ছিনতাই হয়েছে সব ক্ষেত্রে দুই যুবক কালো পালসার বাইকে বসে আসছে। তারা এতটাই সিদ্ধহস্ত যে, দিনের আলোয় একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে, সাধারণ মানুষ তাদের সামনে একেবারে অসহায়। সম্প্রতি তারাপুরে একটি ঘটনা ঘটার পর এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তবে মঙ্গলবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় প্রমাণ হলো দুষ্কৃতীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জগদিশ দাস, সদর থানার তরফে দিতুমনি গোস্বামী সহ অন্যান্যরা এলাকায় পৌঁছান। সেখানে যতগুলো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল সবগুলো যাচাই করে দেখা হয়। একটা ক্যামেরায় বাইক চালকের ছবি ধরা পড়েছে। এছাড়া এলাকার মানুষ তাদের বয়ান দিয়েছেন। কিন্তু দুষ্কৃতীদের মুখ ঢাকা থাকায় তাদের কেউ শনাক্ত করতে পারেননি।

সর্বানি দেবের বাবা সহ পরিবারের প্রত্যেকেই এদিন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। শুধুমাত্র জীবনের জমানো অর্থ দুষ্কৃতীরা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে বলে নয়, তাদের মেয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিলচর শহরের আইন-ব্যবস্থা আবারও প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে কি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এতটাই তলানীতে এসে পৌছেছে যে দিনের আলোয় একের পর এক মানুষের টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা, আর প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। এবার সাবধান থাকতে গিয়ে এবং প্রতিবাদ করায় জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে এক যুবতী।

সম্প্রতি কাছাড় জেলায় পাঁচটি থানার নতুন ভবন উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন পুলিশ বিভাগের ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। তারা বিভিন্ন বিষয়ে অনেক কথা বললেও বরাক উপত্যকার আইন ব্যবস্থা নিয়ে মঞ্চে কোনও কথা বলেননি। পরে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি দাবি করেন আইন ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। অথচ তিনি দুদিন শিলচর কাটিয়ে যাওয়ার ঠিক পরের দিন বিজেপি কার্যালয় থেকে প্রায় একশ মিটার দূরে, দিনের আলোয় এক যুবতী টাকা ছিনতাইকারী দুষ্কৃতীদের শিকার হলো। শিলচরের সাংসদ-বিধায়ক থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা এব্যাপারে নীরব থাকেন। জেলাশাসক থেকে শুরু করে পুলিশ বিভাগের আধিকারিকরাও এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন না। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষ কার কাছে গিয়ে নিরাপত্তা চাইবেন?

লাগাতার একই ধরনের ঘটনার ফলে ব্যাংকের কার্যক্রম আপনিও সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কিভাবে দুষ্কৃতীরা খবর পায় কোন ব্যক্তি টাকা তুলছেন, কখন তুলছেন এবং কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। এমনটা তো হতে পারে না যে, দুষ্কৃতীরা হঠাৎ করে কোনও ব্যক্তির উপর হামলা করেছে এবং সৌভাগ্যবশত ব্যাগের মধ্যে টাকা পেয়ে গেছে। বিশেষ করে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে কেউ বড় অংকের টাকা তুললেই ব্যাংকের পাশে চলে আসে কালো বাইকে চড়া দুই যুবক। তারা এটাও জানে কোন ব্যাগে টাকা রয়েছে, আচমকাই হামলা করে এবং টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের আর ধরাও যায়না, এসব সমস্যার সমাধান হয় না। শহরের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, শিলচর এখন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে।

Comments are closed.