Also read in

শিলচরের সপ্তরাজ বিভাজনের আগে জম্মু ও কাশ্মীরে শুটিং নিয়ে তার ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন

চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শুটিং করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু ‘অটোমোবাইল জায়ান্ট মাহিন্দ্রা’র এই বিজ্ঞাপন ছবিটি স্মৃতির ঘরে দীর্ঘদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে, বললেন শিলচরের সপ্তরাজ চক্রবর্তী,একজন সুপ্রতিষ্ঠিত পরিচালক ও প্রযোজক, সম্ভবত জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ হিসেবে লেহ’তে ছবি করার শেষ চলচ্চিত্র নির্মাতা।

“আমরা একাধিক লোকেশনে শুটিং করেছি এবং লেহ হচ্ছে তাদের মধ্যে একটি। আমাদের দলের কয়েকজন কয়েকদিন আগে থেকেই সেখানে গিয়ে সবকিছু দেখাশোনা করেন। আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম তখন সবকিছু ঠিকঠাক হলেও আমাদের চারপাশে যে উত্তেজনা বাড়ছিল তা আমরা বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম, জম্মু-কাশ্মীরে এটি আরও একটি দিন মাত্র”, বললেন সপ্তরাজ।

সপ্তরাজ জানালেন, দ্বন্দ্ব বা টানাপোড়নের চেয়েও অক্সিজেনের স্তর কম থাকা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। “আপনি যখন প্রচুর উচ্চতায় থাকেন, তখন আপনি কোন ভাবেই প্রচন্ড সক্রিয় থাকতে পারবেন না। আপনার ঘনঘন বিরতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। তাই আমরা সেরকম ভাবেই আমাদের শুটিংয়ের সময়সূচি রেখেছিলাম, যাতে করে কেউ ক্লান্ত না হয়ে পড়েন,” তিনি জানান।

কয়েকদিন পর পুরো দল লাদাখে পৌঁছায় এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী শুটিং শুরু হয়। ইতিমধ্যে সপ্তরাজ এবং তার দল ইন্টারনেটে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়া গুজব পড়তে শুরু করেন। ” শুটিং এর দ্বিতীয় দিনে আমাদের একটা সরকারি বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয় যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের ‘প্যাকআপ’ করতে হবে। সেটা সত্যিই আমাদের জন্য ঘাবড়ে যাওয়ার মত একটা মুহূর্ত ছিল। আমরা জানতে পারলাম যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়তে হবে” তিনি জানালেন‌।

 

পুরো দলটি পরিকল্পনা অনুযায়ী শুটিং শেষ করে হোটেলে জড়ো হলো। আমাদের শুটিং ঠিকঠাক সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য খুব হাসি খুশি মেজাজে আমরা ছিলাম।কিন্তু সঙ্গে আলোচনা শুরু হলো জম্মু-কাশ্মীরে আসলে কি হতে চলেছে। কেউ বলল, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মত কিছু একটা।কেউ বলল উগ্রপন্থী আক্রমণ হতে পারে। তবে সবচাইতে মজার ব্যাপারটা হচ্ছে, প্রচার মাধ্যমও আমাদের মত অনুমান করছিল।আমার ঠিক মনে আছে, বারবার আমরা টুইটারে হ্যাশট্যাগ চেক করতে শুরু করছিলাম তাজা খবর পাওয়ার জন্য” সত্যরাজ যোগ করলেন।

দলের অনেকেরই সড়ক পথে ফেরার পরিকল্পনা ছিল। তারা বাধ্য হয়ে তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে বিমানের টিকিট কাটলেন। সপ্তরাজ জোরের সঙ্গে বললেন,” এটা একটা ভাল ছিল যে ভারত সরকার বিমান সংস্থাগুলোকে চাহিদা বেশি হওয়া সত্ত্বেও দাম নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছিল। আমাদের সকলের টিকিট কাটা হল এবং পরের দিন আমরা রওয়ানা হব।”

 

হোটেলের ম্যানেজার পুরো দলটাকে খুব সাহায্য করেছেন।”তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের জানালেন যে বিমানবন্দরে ভিড় হওয়ার সম্ভাবনায় আমাদের তাড়াতাড়ি সেখানে পৌঁছানো উচিত। আমাদের হোটেলটি মাত্র ৫ মিনিট দূরে থাকা সত্ত্বেও বিমানের নির্দিষ্ট সময়ের ৩ ঘণ্টা আগেই আমরা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম, দেখলাম মানুষে ঠাসা বিমানবন্দরটি। মানুষগুলো যেন অনিশ্চয়তার সমুদ্রে ভাসছে। আমরা আমাদের বিমানে করে মুম্বাই পৌঁছলাম‌। পরের দিন অমিত শাহকে সংসদে এ নিয়ে ঘোষণা করতে দেখলাম” তিনি উল্লেখ করেন।

কথোপকথনের সময় সপ্তরাজ তার শেষ ‘ট্রিপ’র একটি মুহূর্ত নিয়ে বিশেষভাবে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি লাদাখের একটি স্কুলে গিয়ে বোর্ডে জম্মু-কাশ্মীর লেখা দেখে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করলেন যে বিদ্যালয়টি জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের অধীনে রয়েছে কিনা। উত্তরে জানতে পারেন যে এটি জম্মু-কাশ্মীর সরকারের অধীনস্থ। “আমি তাদের কাছে পড়াশোনার বিষয় গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানালো যে সন্যাস অধ্যয়ন নিয়ে একটি বিষয় রয়েছে। এটা জানার পর সব চাইতে প্রথমে আমার বোর্ডের কথা মনে পড়লো এবং কিভাবে সব কিছু পরিবর্তিত হতে চলেছে। তবে আমার এই সর্বশেষ যাত্রা নিয়ে বলতে হয়, এটি ছিল আমার কাছে একটি ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা।”সপ্তরাজ শেষ করলেন।

Comments are closed.