Also read in

"মানুষ অকারণে অভিযোগ করছেন না, জেলাশাসককে মেডিক্যালের ব্যাপারে সরাসরি সিদ্ধান্ত নিতে দিন," অনুরাগ গোয়েলকে বললেন সুস্মিতা

কাছাড় জেলায় প্রায় রোজ নতুন রেকর্ড গড়ছে করোনা ভাইরাস, সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সমস্যাও। সংক্রমণের দরুন কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং কিছু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। বিশেষ করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেসব আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা চলছে তাদের অবস্থা শোচনীয়। এসব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আধিকারিক অনুরাগ গোয়েলকে কাছাড় জেলা পরিদর্শনের জন্য পাঠানো হয়। দুই দিনের সফরে এলাকার হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করা ছাড়া তিনি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। শনিবার সন্ধ্যেবেলা তিনি শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেবের সঙ্গে দেখা করেন। সুস্মিতা বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তার কাছে তুলে ধরেন।

জেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং কোভিড কন্ট্রোল পদ্ধতি নিয়ে নানান অভিযোগ রয়েছে। এসব খতিয়ে দেখতেই অনুরাগ গোয়েলের এই সফর। পাশাপাশি জেলায় সম্পূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন রয়েছে কিনা এবিষয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। এসব ব্যাপারে অনুরাগ গোয়েল বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তিত। কাছাড় রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা, এখানে নানান অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় পাঠানো হয়েছে। আমি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে সেগুলো সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা অবশ্যই রয়েছে। তবে আমাদের আপাতত লক্ষ্য হচ্ছে করোনা চিকিৎসায় পরিকাঠামোগত উন্নতি। বর্তমানে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও বাকি সরকারি হাসপাতাল এবং অন্যান্য কয়েকটি এলাকায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। আমরা শিলচর এনআইটি এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা শুরু করতে চলেছি। দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩০০টি সজ্জার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, ফলে আরও ৬০০ ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। হাসপাতালগুলোয় পরিছন্নতা, খাবার দাবারের ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে নানান অভিযোগ আমাদের কানে এসেছে। প্রত্যেকটি অভিযোগ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো খতিয়ে দেখে সমস্যা মেটানো হবে। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে, ফলে কিছুটা অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক। তবে এখন অনেকেই বাড়িতে থেকে চিকিৎসার অনুমতি পাচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যবিভাগের উপরে রোগীদের চিকিৎসা করানোর চাপ কিছুটা কমবে।’

এদিন প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব অনুরাগ গোয়েলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি জনগণের নানান সমস্যা তুলে ধরেন। পাশাপাশি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খাবার-দাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব জেলা শাসকের অধীনে রাখতে অনুরোধ জানান। বৈঠকের ব্যাপারে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেককে একে অন্যের পাশে থেকে সামাল দিতে হবে। সাধারণ মানুষ যথাসম্ভব এই চেষ্টা করছেন। তবে বিশেষ করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বচ্ছতা, খাবার-দাবার ইত্যাদি নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। সাধারণ মানুষ অকারণে অভিযোগ করছেন না এটা আমি পাশে থেকে নিজের চোখে দেখেছি। এব্যাপারে অনুরাগ গোয়েলের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তাকে অনুরোধ জানিয়েছি, শিলচর মেডিক্যাল কলেজে খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কারণ, জেলাশাসক কীর্তি জল্লির অধীনে যেসব সেন্টার রয়েছে সেখানে তুলনামূলকভাবে খাবার-দাবার এবং স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ কম। তার মানে এসব ব্যাপারে জেলাশাসক শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভালো কাজ করছেন। ফলে মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্ব তার হাতে তুলে দেওয়া হোক। এ ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একের পর এক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন, এব্যাপারে নজর দিতে হবে। হাসপাতলে চিকিৎসা পরিষেবা ছাড়াও বাকি কাজগুলো চিকিৎসকদের দেখতে হয়। যদি অন্যান্য দায়িত্ব প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হয় তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তাররা আরো বেশি মনোনিবেশ করতে পারবেন, এতে সাধারণ মানুষ লাভবান হবেন।”

সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “লকডাউন শুরু হওয়ার প্রথম দিকেই সর্বানন্দ সোনোয়ালের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা এবং পীযূষ হাজারিকা আলাদা আলাদা ভাবে কাছাড় পরিদর্শন করেন এবং নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। তারা একসময় বলেছিলেন এক হাজার বেডের কোভিড কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা হবে, ৩০০ আইসিইউ সম্পন্ন হাসপাতাল হবে, এর কোনটাই হয়নি। অথচ এখন জেলাশাসক বলছেন চিকিৎসার জন্য শিলচর মেডিক্যাল কলেজ সহ সব জায়গায় পরিকাঠামোগত অভাব দেখা দিচ্ছে। মন্ত্রীরা এসে হেডলাইন হওয়ার মত ভাষণবাজি করেন অথচ এর ফলোয়াপ করেন না। তাদের অক্ষমতায় সাধারণ মানুষকে কষ্ট পেতে হয়। আমরা চাই এই পরিস্থিতিতে দলগত রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে প্রত্যেকে একসঙ্গে মিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সহযোগিতা করি।”

অনুরাগ গোয়েল প্রত্যেকটি অভিযোগ শোনেন এবং সেগুলো মেটানোর আশ্বাস দেন। এছাড়া যেসব পরামর্শ জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবেন বলে জানান।

এদিন হাজার সায়ন্তন গ্রুপের পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধিদল অনুরাগ গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে। তারা মেডিক্যাল কলেজে অতিসত্বর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানোর ব্যাপারে অনুরোধ জানান।

Comments are closed.