Also read in

'পত্রিকার মাধ্যমে করোনা ছড়ায়,' এই মন্তব্য ভিত্তিহীন এবং নিন্দনীয়: কেজি সুরেশ

সম্প্রতি ইন্ডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার একজন পদাধিকারি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, সংবাদপত্র নাকি করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সহায়তা করছে। তিনি তার পরিচিত মহলের প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরামর্শ দিলেন, তারা যেন সংবাদপত্র পড়া বন্ধ করেন। হয়তো এটা তার ব্যক্তিগত মতামত, তবে তিনি যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সেটি একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান। করোনা সংক্রমনের এই কঠিন সময়ে যারা সব থেকে বেশি পরিশ্রম করছেন, সেই চিকিৎসক সমাজের প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। ফলে তার মন্তব্য সমাজে একাংশ মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে সমর্থ।

এই মন্তব্যের পেছনে পর্যাপ্ত তথ্য এবং যুক্তি রয়েছে কিনা, এটা অনেকেই জানতে চাইলেন। যুগশঙ্খ পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক অরিজিৎ আদিত্য ফেসবুকের মাধ্যমে প্রশ্নটি জনসমক্ষে তুলে ধরেন। যদিও চিকিৎসক সমাজের পক্ষ থেকে এব্যাপারে সরাসরি কোনও উত্তর আসেনি, তবে সাধারণ মানুষ অনেকেই উত্তর জানতে চেয়েছিলেন।
আমরা এব্যাপারে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। দেশের অন্যতম সেরা সাংবাদিক তথা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশনের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল কেজি সুরেশ এই মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ করেছেন। তিনি গত বছর শিলচর শহর পরিদর্শন করেছিলেন, এই অঞ্চলের সংবাদমাধ্যমের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। এই শহরের সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যম তার কাছে অপরিচিত নয়।

তিনি শুরুতেই বলেন, “যেভাবে করোনা ভাইরাস আক্রমণের এই সময়টাকে ‘প্যান্ডেমিক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, ঠিক একইভাবে আমরা অপ্রয়োজনীয় তথ্যের অতিরিক্ত প্রচারকে ‘ইনফোডেমিক’ বলি। আপনাদের মাধ্যমে আমরা শুনতে পেলাম, একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের সদস্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, সংবাদপত্র সমাজে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সহায়তা করছে, এই মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অবশ্যই একটি ডাহা মিথ্যা কথা। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক পরিষ্কার করে এব্যাপারে বলে দিয়েছে, সংবাদপত্র কোনভাবেই ভাইরাস সংক্রমনের সহায়তা করে না। কেন্দ্র সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বারবার করে কথাটি বলেছেন, কোনভাবেই সংবাদপত্রের সংস্পর্শে করোনার সংক্রমণ হয় না। আমরা যারা সমাজে নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবি করি, আমাদের আচরণে সেই শিক্ষার প্রতিফলন থাকা জরুরী।
শুধুমাত্র ভারতবর্ষ নয় সারা বিশ্বে, এই কঠিন সময়ে সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়নি। আমরা বহু জায়গায় দেখছি যারা সংবাদপত্র বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন, তাদের মাস্ক-গ্লাভস ইত্যাদি লাগানো রয়েছে। তারা স্যানিটাইজার-হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদি প্রয়োজন মত ব্যাবহার করছেন। সমাজে চিকিৎসক বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে করোনা ওয়ারিয়র, সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তিও তাই।”

তিনি ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলেন, “এই যে আপনার সঙ্গে এখন আমি কথা বলছি আমার হাতে একটি সংবাদপত্র রয়েছে। আমি রোজ সংবাদপত্র পড়ি, তবে জোড় গলায় বলতে পারি সংবাদপত্র থেকে আমার মধ্যে করোনা ছড়ায়নি, ছড়ানো সম্ভব নয়।”

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই কঠিন সময়ে সাংবাদিকরা দিনরাত কাজ করলেও সংবাদপত্রের ব্যবসার উপর বিরূপ প্রভাব অবশ্যই দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতবর্ষেও অনেক সংবাদকর্মী চাকরি হারিয়েছেন, পত্রিকা হাউসগুলোও সংবাদকর্মীদের বেতন কর্তন করেছে। তবে সাধারণ মানুষ অবশ্যই সংবাদমাধ্যমের উপর বিশ্বাস হারাননি। পৃথিবীর বিভিন্ন রিসার্চ স্কলাররা দাবি করেছেন, সংবাদপত্র না থাকলে করোনা ভাইরাসের প্রভাব কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেত। অনেক বেশি সংক্রমণ ঘটতো এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে পারত।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, অসম রাজ্য শাখার যুগ্ম সম্পাদক ডায়মন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কর্ণধার রণবীর পালের মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে যুগশঙ্খ পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক অরিজিৎ আদিত্য সম্প্রতি তার ফেসবুকের ওয়ালে একটি পোস্ট করেন। তার পোস্টে শহরের সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার লোকজনেরা সমর্থন জানান। প্রত্যেকেই রনবীর পালের মন্তব্যের পিছনে যুক্তি রয়েছে কিনা এটা জানতে চান। বলা বাহুল্য, এধরনের কোনও যুক্তি কোনও বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসক দিতে পারেননি। ফলে আমরা এই প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে তুলে ধরছি। আমরা মনে করি, এই দুঃসময়ে অকারনে একে অন্যের ওপর ভিত্তিহীনভাবে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকাই সুস্থ সমাজের সমাজের কর্তব্য।

Comments are closed.