Also read in

বিমানে ফেরা দুই শিক্ষিকা পজিটিভ: ৫ দিনের কোয়ারেন্টাইনে যাচ্ছেন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা

বিদ্যালয় খোলার পর থেকে ধীরে ধীরে ছাত্রীদের উপস্থিতি বাড়ছিল, ফলে শিক্ষকদেরও কাজে যোগ দিতে বলেন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা সোমা শ্যাম। বহির্জেলায় থাকা দুই শিক্ষিকা, পিংকিমনি পাঠক এবং মীনাক্ষী মেস তার কথায় সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার বিমানে শিলচরে আসেন। বিমানবন্দরে তাদের বলা হয়েছিল, পারলে পাঁচদিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে। অন্তত আরটিপিসিআর পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ আসা পর্যন্ত তারা যেন অপেক্ষা করেন। তাদের স্যাম্পল সংগ্রহ করে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তবে দুই শিক্ষিকা অধ্যক্ষাকে জানালেন বিমানবন্দরে রেপিড এন্টিজেন টেস্টে তাদের রেজাল্ট নেগেটিভ হয়েছে। অধ্যক্ষা বিদ্যালয় পর্যবেক্ষকের অনুমতি নিয়েই তাদের ক্লাসে যোগ দিতে বলেন। শুক্রবার যখন তারা ক্লাস করাচ্ছেন এমন সময় গুরুচরণ কলেজের কন্টাক্ট ট্রেসিং সেন্টার থেকে জানানো হলো দুই শিক্ষিকার আরটিপিসিআর রেজাল্ট পজিটিভ। এতে প্রাথমিকভাবে স্কুলে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যারা ঐ দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, প্রত্যেকেই অন্তত পাঁচ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করে তবেই ফিরবেন; সঙ্গে তাদের কোভিড পরীক্ষাও হবে।

বিমানবন্দরে পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও তাদের হাতে কোনও কাগজ দেওয়া হয়নি, এমনটাই দাবি দুই শিক্ষিকার। তাদের কথায় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা এবং বিদ্যালয় পর্যবেক্ষক অসুস্থ হয়ে ক্লাসে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। যদিও আন্তঃজেলা পরিবহনে হোম কোয়ারেন্টাইন এখন আর বাধ্যতামূলক নয় তবে বিমান যাত্রীদের জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে। যারা বিমানে ফিরবেন তাদের আরটিপিসিআর পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন জনসমক্ষে না আসেন, এমনটাই বলে দেওয়া হয়। অবশ্যই এই দুই শিক্ষিকাকেও এই কথাটুকু বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। তবু তারা কেন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষাকে অন্ধকারে রাখলেন? অথবা আদৌ তারা কি মিথ্যে কথা বলেছেন না ঘটনাটি পুরোপুরি কাকতলীয়? এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

বিদ্যালয় পর্যবেক্ষক সামিনা ইয়াসমিন রহমান বলেন, “বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ক্লাসে ফিরতে বলছি। রাজ্যের অন্যান্য জেলার অনেকেই কাছাড়ে কর্মরত। লকডাউন পরিস্থিতি শুরু হওয়ার সঙ্গেই যখন বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারা অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছিলেন। এবার তাদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য বলায় পর্যাপ্ত পরীক্ষা করিয়ে তারা ফিরছেন। এই দুই শিক্ষিকা বিমানে ফেরার পর আমাদের জানিয়েছিলেন তাদের রেজাল্ট নেগেটিভ। আমরা তাদের কথায় বিশ্বাস করে তাদের যোগ দিতে বলেছিলাম। বিমানবন্দরে তাদের কি বলা হয়েছে সেটা আমরা জানিনা। তারা বিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে কাজ করতে শুরু করেছেন, এরপর আমরা জানতে পারলাম রেজাল্ট পজিটিভ। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে এব্যাপারে আলোচনা করেছি এবং তাদের পরামর্শে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিন যারাই বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রী, প্রত্যেকেই অন্তত পাঁচদিনের হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করবেন। তারা বিদ্যালয় ফেরার আগে স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় পরীক্ষা করা হবে এরপরেই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবেন প্রত্যেকে। প্রথম দিন থেকেই প্রতিদিন পঞ্চাশ শতাংশ শিক্ষককে কাজে লাগানো হচ্ছে। ফলে সবাই এদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। যারা দুই শিক্ষিকার সংস্পর্শে আসেননি, তাদের কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয় খোলা রাখা হবে।”

শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক রাজীব রায় জানিয়েছেন, পুরো ব্যপারের নিরপেক্ষ তদন্ত হবে এবং যদি দুই শিক্ষিকা ইচ্ছাকৃতভাবে কাজটি করে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন। তিনি বলেন, “বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের ক্লাস রুম পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তির বয়ান নিয়ে যাচাই করা হবে আদৌ এই দুই শিক্ষিকা জেনেশুনে কাজটি করেছেন কিনা। যদি ঘটনায় তাদের দোষ না থাকে তাহলে আমরা কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেবনা। তবে যদি দেখা যায় তারা জেনেশুনেই ছাত্রীদের বিপদে ফেলেছেন, তবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

পজিটিভ হওয়া দুই শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে আসল ঘটনা জানতে চেষ্টা করি আমরা। তবে বিদ্যালয়ের তরফে তাদের যে নম্বর দেওয়া হয়েছে তাতে যোগাযোগ করলে কেউ উত্তর দেয়নি।

গত সোমবার থেকে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে, এখনো উপস্থিতি অত্যন্ত নগণ্য। তবে ধীরে ধীরে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে রাজি হচ্ছেন। তবে এই ঘটনায় অবশ্যই আবার কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।

Comments are closed.