Also read in

অনির্বাণ জ্যোতি গুপ্ত'র মুখোমুখি শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বাবুল হোড়

শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ২৪ নভেম্বর।এই নির্বাচনে একাধিক নামিদামি রাজনৈতিক নেতার জড়িয়ে পড়া নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠে। নতুন সভাপতি ও সচিব পদে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এসেছেন গতবারের সভাপতি বাবুল হোড় এবং নবনির্বাচিত সচিব হয়েছেন বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং ওরফে বাদশা । নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও এ নিয়ে বিতর্ক থামার কোনও লক্ষণ নেই। ইতিমধ্যে আসাম অলিম্পিক সংস্থা এই নির্বাচন নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।এই পরিপ্রেক্ষিতে বরাক বুলেটিনের পক্ষে অনির্বাণ জ্যোতি গুপ্ত মুখোমুখি হয়েছিলেন সভাপতি বাবুল হোড়ের।

সভাপতি পদে পুনরায় নির্বাচিত হবার পর কি বলবেন?

আমাকে পুনরায় নির্বাচিত করার জন্য আমি জেনারেল কাউন্সিলের প্রত্যেক মেম্বার সহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যারাই সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং খেলোয়াড় প্রত্যেককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।

শেষ পর্যন্ত যতটা সহজে জয়লাভ করলেন শুরু থেকেই কি ততটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ?

শুরুতে আমি সভাপতি হব কি না হব তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। নানা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমি হয়তো সভাপতি নাও হতে পারতাম। শেষ পর্যন্ত সদস্যদের সমথর্নে আবার সভাপতি হতে পেরেছি।

সভাপতি পদে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?

দীপায়ন চক্রবর্তী খুব ভালো ছেলে, করিতকর্মা। তবে ক্রীড়া জগতের সাথে সে ততটা জড়িত নয়। এতে আমার কাজটা সহজ হয়ে যায়।

ডিএসএ নির্বাচনের ঠিক আগে গণমাধ্যমে বহুল চর্চিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আপনাকে করা ফোন কল বিতর্ক তো বাস্তবে আপনার পক্ষেই সহানুভূতির ঢেউ তুলে দিয়েছিল?

তা হতে পারে , তবে এ নিয়ে আমি ভাবছি না । এখন এই চ্যাপ্টার ক্লোজড। তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করে আর বিতর্ক বাড়াতে চাই না।

মুখ্যমন্ত্রী কি সত্যিই আপনাকে ফোন করেছিলেন ? এ নিয়ে কি আপনি বিভ্রান্তি ছড়াননি?

দেখুন এখনতো মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আমার নিয়মিত কথাবার্তা হয় না। তাই ত্রিশ পঁয়ত্রিশ সেকেন্ডের বার্তালাপে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় । তবে আমি আবার বলছি এ নিয়ে আমি আর কোনও বিতর্কে যেতে চাই না।

রাজ্য বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বলেছেন এনিয়ে আপনি মিথ্যে কথা বলেছেন। আপনাকে আসলে মুখ্যমন্ত্রীই ফোন করেছিলেন?

দেখুন আমি এ নিয়ে যা বললাম সেটার বাইরে কিছু বলতে চাই না।

ডিএসএ নির্বাচনের দিন উপাধ্যক্ষ গণমাধ্যমে বলেছিলেন আপনি “দেব বাড়ির”গোলাম ! এর জবাবে আপনি কিছু বলবেন কি?

(হেসে) নো কমেন্টস!

আপনার আর উপাধ্যক্ষের মধ্যে নির্বাচন ঘিরে একটি ফোন বার্তালাপ সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেছে !

দেখুন, আমি তো জানিনা আমার ফোনের সঙ্গে উপাধ্যক্ষের ফোনে কোনও কথা হয়েছে ! আমার ফোন আইফোন। ওটাতে টেপ থাকে না,রেকর্ডিংও করা যায় না। আমি সে ব্যাপারে ওয়াকিবহালও নই। তাই উপাধ্যক্ষ কি নিয়েছেন আর কি ভাবে করেছেন সেটা আমি জানিনা !

ক্রীড়া প্রশাসনে রাজনৈতিক লোকের নাকগলানোকে আপনি কি চোখে দেখেন ?

আমি মনে করি যারা রাজনীতির লোক খেলার সাথে জড়িত আছেন তারা সবসময় আসতে পারেন এবং আসছেনও । অতীতেও এসেছেন ।আসামের অন্যান্য জেলার সাথে আমাদের এখানেও এটা অতীতে ঘটেছে ।
এবারে এটা কোনও নতুন ঘটনা নয় । এ ধরণের লোকের সাহায্য সহযোগিতা সংস্থার সব সময়ই প্রয়োজন ! কারণ বর্তমানে এঁদের হাতেই বিভিন্ন স্কিমের টাকা থাকে, যা পরিকাঠামো উন্নয়নে কাজে লাগে ।

তাহলে এবারে এই নিয়ে যে গেলো গেলো রব উঠলো?

বাবুল হোড় :- না ঠিক সেরকম কিছু হয়েছিল বলে আমি মনে করিনা ।তবে একটা কথা সেই ব্যক্তিকে ক্রীড়া জগতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক যুক্ত হতে হবে ।

আচ্ছা শিলচরের সাংসদ কি কখনও আপনাকে বলেছেন যে তিনি শিলচর ডিএসএ’ র সভাপতি হতে চাইছেন ?

আমাকে কখনও সেইভাবে বলেননি । আর শেষ অবধিও আমাকে বলেননি যে উনি আসবেন । উনার ইচ্ছে হয়ত ছিল।উনি বলছেন ভেবে- চিন্তে করবেন !

আপনার সম্পর্কে এই অভিযোগও উঠেছে যে আপনার পাখির চোখ ছিল সচিব পদের দিকে ? তাই পুরো চিত্রনাট্যটা আপনারই তৈরি করা ? শেষ পর্যন্ত আপনার প্রথম গেম-প্ল্যানটি ভেস্তে যায় ?

কখনোই না। আমি প্রথমেই বলে দিয়েছিলাম দীর্ঘদিন আমি সচিব পদে ছিলাম । ভালোমন্দ যাই করেছি ক্রীড়াজগতে যারা যুক্ত আছে তারাই সে ব্যাপারে বলবে । ইতিহাসই বলে দেবে আমি সচিব থাকাকালীন কি সাফল্য এসেছে । সবকিছুরই রেকর্ড রয়েছে ।আমাকে কিছু বলতে হবে না । তাই নতুন করে সচিব হবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমি প্রকাশ করিনি ।তবে কেউ কেউ আমাকে সচিব পদে পুনরায় আসার কথা বলেছিল।আমি তখন তাদের পরিষ্কার বলে দিয়েছিলাম এই প্রস্তাবে আমার বিন্দুমাত্র সায় নেই । তাছাড়া আমার ছোটভাইয়ের মত বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং যেখানে সচিব হতে ইচ্ছুক সেখানে আমার যাবার প্রশ্নই নেই ।

এই কথাও তো উঠেছে যে আপনার প্রথম পরিকল্পনা (সচিব হওয়া) সফল না হওয়ায় আপনি সভাপতি পদটি কিছুতেই হারাতে চাইছিলেন না ! তাই আপনি বর্তমান সাংসদকে প্রতিহত করতে প্রাক্তন সাংসদকে লড়াইয়ের ময়দানে টেনে আনেন?

আমি তো সভায় বলেইছিলাম মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ কে আমি সম্মান জানাবো ।তারপর সভা প্রস্তাব দেয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সরাসরি ফোন-কলের ! আর প্রাক্তন সাংসদকে আমি সেইভাবে কিছু বলিনি। আমি তাকে সভাপতির পদ ছেড়ে দেবো এরকমও কিছু বলিনি !

আপনি চাননি বর্তমান সচিব এবং তার প্যানেল জয়লাভ করুক ।এইধরনের অভিযোগও তো কান পাতলে শোনা যায় !

সমস্ত ভুল ভ্রান্ত ধারণা । এধরনের কোনও পরিকল্পনা আমার ছিল না । ও শুরুতেই বলেছে যদি আমি সভাপতি থাকি তাহলে ও সচিব হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী এবং আমিও তাকে বলেছি তুমি সচিব হবার জন্য কাজ চালিয়ে যাও। আমিও চেষ্টা করবো সভাপতি থাকার জন্য ।আমি কখনও তার বাধা হয়ে দাঁড়াইনি । আটকানোর জন্যও কাউকে অনুরোধ করিনি । বরং একাংশ প্রচার মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছিল আমাদের দুজনের প্যানেলই প্রায় এক !

অভিযোগ উঠেছে আপনি নির্বাচনের আগে কোনও কোনও প্রার্থীকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন ?

দেখুন আমাদের সদস্যদের মধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক হয় , কোনও কোনও বিষয়ে মতপার্থক্য হয় । কথা বলার ধরণও সকলের এক নয় । তাই কারো কোনও কথা অন্যের ভালো নাও লাগতে পারে । তবে তার মানে এই নয় যে আমি কাউকে হুমকি দিয়েছি । “ফোনের কথাবার্তাকে” এইভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয় ।

আপনি তাহলে “এই ধরণের” কথাবার্তার কথা স্বীকার করছেন ?

দেখুন এটাকে যদি “হুমকি” বলেন তাহলে বলতে হয় জীবনে বিভিন্ন জায়গা থেকে এর চাইতে অনেক বেশী “হুমকি” আমি পেয়েছি ! কই আমিতো সেসব কিছু মনে রাখিনি !

শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদ্য সমাপ্ত দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে আসাম অলিম্পিক সংস্থা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং তদন্ত কমিটি এর জন্য শিলচর সফরে আসছেন ! এটাতো অভূতপূর্ব ঘটনা ?

হ্যাঁ আমরাও অপেক্ষায় আছি ।দেখি তারা কি বলেন । তবে আসাম অলিম্পিক সংস্থার সংবিধানের কথা উল্লেখ করে আমাদের দ্বিবার্ষিক সভার আগাম অনুমতি নেবার কথা যেটা বলা হয়েছে এ ধরনের কোনও কথা সংবিধানে নেই । কারণ আমাদের এটা ছিল সাঁইত্রিশতম দ্বিবার্ষিক সভা। অতীতে কখনোই অনুমতি নেবার প্রয়োজন হয় নি কিংবা কোনও পর্য্যবেক্ষককে সভায় আমন্ত্রণ জানানোর কথা ওঠেনি । আর এ নিয়ে কখনও কোনও প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হয় নি ।

ডিএসএ’ র সংবিধান ঘিরে এবার কিছু বিতর্ক উঠেছে ?

হ্যাঁ। বিশেষ করে আজীবন সদস্যদের ভোটাধিকার নিয়ে। এই বিষয়টি এবং সদস্যদের পরামর্শে আরও কিছু পরিবর্তন করতে হলে এটা সভার মাধ্যমেই স্থির হবে ।

সভাপতি পদে সাংসদকে বসালে পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে অর্থের অভাব হবে না বলে শোনা গিয়েছিল । কিন্তু সেটাতো হলো না । এখন কি হবে ?

সেটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না । সেটার উত্তর যারা বলেছিলেন তারাই ভালো দিতে পারবেন (হাসি) !

এবারের নির্বাচন ঘিরে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা প্রবাহ ছিল তারপর আপনারা আবার “টিম ডিএসএ” হয়ে কাজ করতে কতটা সফল হবেন ?

সেটা এখন অতীত। আমরা খেলার মাঠের মানুষ ।আমাদের স্পোর্টিং স্পিরিট আছে। খেলাধূলার প্রসারে আমরা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারব বলেই আমার বিশ্বাস। কে হারল কে জিতল সেটা বড় কথা নয় ।আমরা সবাই মিলে কাজ করব ।

নতুন কমিটির কাছে এই মুহূর্তে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কি বলে আপনার মনে হয় ?

দেখুন , আমি মনেকরি খেলাধূলার প্রসার এবং সেই সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত । আমার বিশ্বাস নতুন সচিবও এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করবেন ।

আমাদের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ ।

Comments are closed.