Also read in

Assam - Mizoram conflict: Marathon meeting at Lailapur

আসাম মিজোরাম সীমান্ত সংঘাত: লায়লাপুরে চলছে হোম সেক্রেটারি স্তরের ম্যারাথন বৈঠক, এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা

আসাম মিজোরাম সীমান্ত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এদের মধ্যে নানান বৈঠক হয়েছে, তবে সমস্যা সমাধানের দিকে এগোয়নি। এবার দুই রাজ্যের হোম সেক্রেটারির নেতৃত্বে সরাসরি বৈঠক হচ্ছে। অসমের তরফে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন কমিশনের সেক্রেটারি হোম, জ্ঞানেন্দ্র ত্রিপাঠী, স্পেশাল ডিজিপি (সীমান্ত) মুকেশ আগারওয়াল, ডিআইজি দিলীপ দে, কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি ও পুলিশসুপার বিএল মিনা সহ অন্যান্যরা। মিজোরামের তরফে বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হোম সেক্রেটারি পি লালবিয়াকসাঙ্গি, আইজিপি এল এইচ সানলিয়ানা, ডিআইজি পিইউ লালবিয়াকথাঙ্গা সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।

রাজ্য সরকারের হোম সেক্রেটারি পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা প্রায় তিন দিন ধরে কাছাড় জেলায় রয়েছেন এবং লাগাতার লায়লাপুর সীমান্ত পরিদর্শন করছেন। তবু গত এক সপ্তাহে অসমের প্রায় আড়াই কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করেছে মিজোরাম। সম্প্রতি কেন্দ্র সরকারের মধ্যস্থতায় দুই রাজ্যের মুখ্যসচিব ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেছেন, তবু সমস্যা সমাধানের দিকে এগোচ্ছে না। এবার দুই রাজ্যের হোম সেক্রেটারি সরাসরি লায়লাপুরে বৈঠকে বসছেন। বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় বৈঠক হয়েছে। একে ঘিরে এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে। অসম এবং মিজোরামের পুলিশের সশস্ত্র আধিকারিকরা পুরো এলাকা ঘেরাও করে রেখেছেন। সাধারণ মানুষ দূর থেকে দেখার চেষ্টা করছেন কিন্তু কাছাকাছি আসার কারণ অনুমতি নেই।

অসমের তরফের সাধারণ মানুষ বলছেন তাদের এই সমস্যা বহুদিনের। শুধুমাত্র মিজোরামের সাধারণ মানুষ নন, সেখানের পুলিশের আধিকারিকরা লাগাতার জুলুম চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, মিজোরাম পুলিশের কাছে অনুমতি রয়েছে তারা প্রয়োজনে আমাদের গুলি করতে পারে অথচ আমাদের পুলিশ শুধুমাত্র শান্তির বার্তা দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। মিজোরামের পক্ষ থেকে অসম সীমান্তের ভেতরে আকাশে ড্রোন ক্যামেরা পাঠানো হচ্ছে। অসমের জমিতে একের পর এক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৮টি অস্থায়ী দোকান এবং তিনটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সুপারসহ বিরাট বাহিনী ২৪ ঘন্টা পাহারা দিচ্ছেন। এদিকে একের পর এক রাজনৈতিক নেতারা পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু যেসব এলাকা অধিগ্রহণ হয়েছে সেখানে পুলিশ আধিকারিক ছাড়া অন্য কেউ ঢুকতে পারছেন না। রোজ রাতেই জমি অধিগ্রহণের কাজ চলে, প্রথমে দুই কিলোমিটার অধিগ্রহণ হয়েছিল সেটা এখন তিনের উপর গিয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে আলোচনা চলছে আর অন্যদিকে মিতু নামের অধিগ্রহণ।

বৈঠকের আগে হোম সেক্রেটারি জিডি ত্রিপাঠী এবং ডিজিপি মুকেশ আগারওয়াল শিলচরের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। জিডি ত্রিপাঠি বলেন, ‘আমরা সর্বাবস্থায় এলাকায় শান্তি প্রতিস্থাপন করতে চাইছি। যেসব সমস্যা রয়েছে সেটা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তবে একতরফা চেষ্টা করে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়না। আমরা আশা করছি মিজোরাম সরকার আমাদের সহযোগিতা করবে। বৈঠকে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে, তাদের যেসব আবদার এবং অভিযোগ রয়েছে সেটা আমরা শুনব। সঙ্গে আমাদের বক্তব্যও তুলে ধরব। কোনওভাবেই এলাকায় অশান্তি এবং সাধারণ মানুষের জীবনের ঝুঁকি মেনে নেওয়া যায় না।

জমি অধিগ্রহণ নিয়ে মুকেশ আগারওয়াল বলেছিলেন, ‘অনেকেই বলছেন আমরা কেন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি না। আমরা বলব, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা নয়। ভারতবর্ষের অধীনে থাকা দুই রাজ্যের সীমানা নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। মিজোরাম কোন শত্রু দেশ নয় যে আমরা হঠাৎ করে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বো। আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। লাগাতার আলোচনা হচ্ছে সেটা একেবারে পুলিশ স্তরের হোক বা মুখ্যসচিব স্তরের, সরকারপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে নেই। আমাদের উপর নির্দেশ রয়েছে সর্বাবস্থায় সহাবস্থানের পরিস্থিতি করে তুলতে হবে। সাধারণ মানুষের মনে যদি কোনও ভুল বার্তা গিয়ে থাকে সেটা শুধরে নিতে হবে। এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমও বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বুধবার সকালের বৈঠকে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরব, কতটুকু জমি অধিগ্রহণ হয়েছে তার হিসেব আমাদের কাছে রয়েছে। শান্তিপূর্ণ আলোচনা হবে কিন্তু আমরা আমাদের জমি ছেড়ে দিয়ে চলে আসব এমনটা নয়। রাজ্যের প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের উপর রয়েছে, পাশাপাশি এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে হবে। এসবগুলো কথা মাথায় রেখেই বৈঠকে আলোচনা হবে।’

Comments are closed.