Also read in

Government officials set a precedent by shifting a pregnant woman to the hospital in the midnight amidst curfew

রাত সাড়ে বারোটায় কাছাড় জেলার কন্ট্রোলরুমে একটি নম্বর থেকে চারবার ফোন আসে। কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মচারিরা তৎক্ষণাৎ পাল্টা ফোন করলে জানতে পারেন রামনগর এলাকায় গর্ভবতী মহিলা অসুস্থ। তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ থেকে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজলেও কোন রাস্তা নেই। জেলায় একের পর এক করোণা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মিলছে এবং সেগুলো সামাল দিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো ব্যস্ত। কন্ট্রোল রুমে কর্মরত দুই কমবয়সী সরকারি আধিকারিক ঠিক করলেন তারা মহিলার পাশে দাঁড়াবেন। তবে এক্ষেত্রে ভাবলেই হয় না, উপর মহলের অনুমতি প্রয়োজন। সেটা মিলল এবং তারা নিজেদের গাড়ি করে রওনা দিলেন। অনেক চেষ্টার পর বাইরের জেলার এক অ্যাম্বুলেন্সকে প্রায় হাতজোড় করে রাজি করানো হল এবং মহিলাকে স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হল। সরকারি আধিকারিকদের এই তৎপরতা রোগীর পরিবার সহ এলাকার মানুষের মন জয় করেছে।

আইসিডিএস প্রজেক্টের আওতায় ব্লক প্রজেক্ট এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করেন পার্থ দাস এবং রণবিজয় দাস। এখন করোনা পরিস্থিতিতে তাদের কন্ট্রোলরুমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টাই নানান সমস্যা নিয়ে মানুষ ফোন করছেন। তরুণ সরকারি কর্মচারিরা প্রায় সবগুলো কল গ্রহণ করছেন এবং সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছেন।

এদিন রাতে এই দুই কর্মী প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ১০৮ অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এদিন রাতে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া কঠিন ছিল কেননা অনেকগুলো অ্যাম্বুলেন্স করোনা আক্রান্তদের পরিবহনের কাজে লাগানো হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করে বাইরের জেলার একটি অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তবে সে কিছুতেই চাইছিলো না পরিষেবা দিতে। তারা প্রায় হাতজোড় করে তাকে রাজি করান। রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের আধিকারিকরা তাদের আটকে নানান প্রশ্ন করতে থাকেন। সরকারি আধিকারিক বলে প্রমাণ দেওয়া এবং সঙ্গে রোগী রয়েছে এমনটা বলার পরও খানিকটা হেনস্থা হতে হয়েছে তাদের। তবুও হাল ছাড়েননি, মহিলা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে উপস্থিত হন। সেখানে হাসপাতালে দরজা বন্ধ এবং ভেতর থেকে বলা হচ্ছে এখন কিছুতেই খোলা যাবে না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে অনুরোধ করার পর দরজা খুলে দেওয়া হয়। প্রাথমিক পরীক্ষার পর মহিলাকে ভর্তি করা হয়। পরে ডাক্তাররা এসে তার চিকিৎসা শুরু করেন। দুদিন চিকিৎসার পর আপাতত মহিলাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তার এখন সন্তান প্রসব হওয়ার সময় হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা দেখি সরকারি আধিকারিকরা যতটুকু প্রয়োজন সেই পরিষেবা দিতে অনীহা ব্যক্ত করেন। এই পরিস্থিতিতে দুই তরুণ সরকারি কর্মী নিজেদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, এটা একটু আলাদা ঘটনা।

অতিরিক্ত জেলাশাসক অভিলাষ বারানওয়াল দুই সরকারি কর্মীর প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রশাসনের অধীনে কাজ করা যুবক-যুবতীরা অত্যন্ত কর্তব্য পরায়ন। তারা অত্যন্ত সাহস ও শ্রদ্ধা নিয়ে কাজ করেন।এই দুর্যোগের মুহূর্তে আমাদের তৃণমূল স্তরে যারা কাজ করছেন এরাই আমাদের আসল শক্তি।

Comments are closed.