Also read in

Impact of Lockdown : No Gandhi Mela and exhibition this year

মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুর পর তার চিতাভস্ম শিলচরে এসেছিল। ধীরে ধীরে প্রতিবছর মহাত্মা গান্ধীর জীবনাদর্শকে ঘিরে প্রদর্শনী শুরু হয় এবং সেটা একসময় রূপ নেয় গান্ধীমেলার। শীতের মরশুমে বরাক উপত্যকার তিন একটি করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শিলচরে ৩০ জানুয়ারি অর্থাৎ আজকের দিনে গান্ধী মেলা শুরু হয়। গত কয়েক দশকে গান্ধীমেলা বন্ধ হয়নি, তবে এবার করোনা ভাইরাসের প্রকোপে মেলাটি হচ্ছেনা। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে গান্ধীমেলা না হওয়ার কোনও ঘোষণা এখনও করেনি শিলচর পুরসভা, তবে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা আয়োজন করার জন্য কেউ আবেদনও করেননি, বলে জানিয়েছেন তারা। ফলে আপাতত এটুকুই বলা যায় নির্ধারিত দিনে গান্ধীমেলা শুরু হচ্ছে না, হয়ত এবছর মেলা আয়োজন হবেই না।

গতবছর শিলচরে গান্ধী-মেলা চলাকালীন সময়েই করোনা ভাইরাসের প্রভাব গাঢ় হয়, হঠাৎ করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউন ঘোষণা করেন। এতে মেলায় অংশ নিতে আসা ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অনেকেই মাসের-পর-মাস কাছাড় জেলায় আটকে পড়েন। পরবর্তীতে প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের ধীরে ধীরে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করলেও তারা প্রায় সর্বস্বহারা হয়ে ফিরে যান।

গান্ধী-মেলা এবং চৈত্র সেলকে সামনে রেখে বরাক উপত্যকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বছরের জমানো পুজির বড় একটা অংশ খরচ করে অনেক বিক্রয়যোগ্য জিনিসপত্র কিনে আনেন। গতবছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ ফাল্গুন মাসে লকডাউন শুরু হওয়াতে গান্ধীমেলা এবং চৈত্রসেল দুটোই তাদের হাতছাড়া হয়, তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অনেকেই ভেবেছিলেন কেনা সামগ্রীগুলো দুর্গাপুজোর আগে বিক্রি করে মুনাফা তুলবেন, কিন্তু সেটাও হয়নি। অনেক পরিশ্রম করেও মুনাফা তো দূর, তাদের মূলধনও তুলতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। আর্থিকভাবে তাদের কোমর ভেঙে পড়েছে, এই অবস্থায় আবার গান্ধীমেলায় অংশ নেওয়ার মতো ক্ষমতা অনেকের ছিলনা। তাই তারা কোনওভাবেই মেলায় অংশ নিতে আগ্রহ দেখাননি।

অসমের বিভিন্ন এলাকা সহ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্য থেকে যে ব্যবসায়ীরা বরাক উপত্যকার তিনটি মেলায় অংশ নিতে প্রতিবছর আসেন, তারা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরে যাওয়ার পর অন্তত এবার মেলায় যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখাননি। এদিকে শিলচর পুরসভার নির্বাচিত বোর্ড গত বছর তার মেয়াদ শেষ করেছে। এবার জেলা প্রশাসনের অধীনে কাজ করছে পুরসভা, সেখানে এক্সিকিউটিভ অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন সুমিত সত্যওয়ান। তিনি বলেন, ‘গত বছর যে পরিস্থিতিতে গান্ধীমেলা মাঝপথে বন্ধ হয়েছে এরপর এই বছর সেটা আয়োজন করা কঠিন ব্যাপার ছিল। তবে আমরা অপেক্ষা করেছিলাম, যদি কেউ আবেদন করেন তাহলে সেটা নিয়ে সরকার পক্ষের কাছে জানাবো। দুর্ভাগ্যের বিষয় কেউ আবেদনই করেননি। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে গান্ধীমেলার মতো বড় জনসমাগম আয়োজন করার ক্ষেত্রে আমরাও কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। প্রতিবছর ৩০ জানুয়ারি মেলা শুরু হয় এবং তবে এবার এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনও আবেদন আসেনি, ফলে নির্ধারিত দিনে মেলা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। আগামীতে কি হবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়।’

বরাক উপত্যকার তিন জেলার মধ্যে শুধুমাত্র হাইলাকান্দিতে একদল ব্যবসায়ী জেলাশাসকের কাছে মেলা আয়োজনের ব্যাপারে অনুমতি চেয়েছিলেন। জেলাশাসক মেঘ নিধি দাহাল রাজ্য সরকারের কাছে সেই আবেদন ফরওয়ার্ড করেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে জবাব আসে, মেলা আয়োজন করতে কোনও বাধা নেই, তবে কোনভাবেই যাতে কোভিড প্রটোকল লংঘন না হয়। এরপর জেলাশাসক স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন, কিন্তু শেষমেশ মেলা আয়োজনের মতো পরিস্থিতি গড়ে ওঠেনি।

যতক্ষণ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানডেমিক শেষ হচ্ছে না, প্রশাসনিক স্তরে সবধরনের অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব জেলা দুর্যোগ মোকাবেলা বিভাগের। বিভাগের কাছাড় জেলা শাখা থেকে শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, তাদের কাছে গান্ধীমেলা আয়োজন করার জন্য কোনও আবেদন আসেনি। তিনি বলেন, ‘যেকোনও জনসমাগম হওয়ার সম্ভাবনা থাকা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে দুর্যোগ মোকাবেলা বিভাগের পক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হয়, সরকারের পক্ষ থেকে এমনটাই নিয়ম বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের কাছে গান্ধীমেলা আয়োজন করার কোনও আবেদন আসেনি, ফলে এব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।’

শিলচর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীহারেন্দ্র নারায়ন ঠাকুর এব্যাপারে বলেন, ‘পুরো ব্যাপারের জন্য পরিস্থিতিই দায়ী, এখানে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না। শুধুমাত্র বরাক উপত্যকায় নয়, সারাবিশ্বে সব ধরনের বড় অনুষ্ঠান বা জনসমাগম বন্ধ রয়েছে। আগে পুরো সমাজ সুস্থ থাকবে তারপরে এধরনের আনন্দ অনুষ্ঠান হবে। আমি আশাবাদী ভবিষ্যতে আমাদের উজ্জ্বল দিন আবার ফিরবে এবং স্বাভাবিক ছন্দে শিলচর গান্ধী মেলা আয়োজিত হবে।’

সাধারণত ব্যবসায়ীরা প্রথমে করিমগঞ্জের রবীন্দ্রমেলায় অংশ নেন, তারপর হাইলাকান্দির সুভাষমেলায় অংশ নিয়ে ধীরে ধীরে শিলচর গান্ধীমেলা। এতে তাদের পরিশ্রম কাজে আসে এবং ন্যূনতম মুনাফাও জোটে। তবে যেহেতু একটাও মেলা আয়োজিত হয়নি ব্যবসায়ীরাও এগিয়ে আসার সাহস করেননি। অবশ্যই এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো আগামী বছরগুলোর স্বাভাবিক ছন্দ ফিরবে বরাক উপত্যকার তিন মেলা। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি ইতিহাসের অনেক মুহূর্ত পাল্টে দিয়েছে, বরাক উপত্যকার তিন মেলা একই সঙ্গে বন্ধ হওয়ার নজির হয়তো ইতিহাস ঘাঁটলে খুব কম মিলবে। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এটাই বাস্তব, রবীন্দ্রমেলা এবং সুভাষমেলার সঙ্গে এবছর আয়োজিত হচ্ছেনা গান্ধী মেলাও।

Comments are closed.