Also read in

Kanhaiya Kumar's visit raises many questions

কানহাইয়া কুমারের বরাক সফর সন্দেহের আবর্তে, ধর্মীয় সুরসুরি দিয়ে অশান্তি বাঁধানোর পরিকল্পনা!

দিল্লির জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির বিতর্কিত ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার শুক্রবার বরাক উপত্যকা সফরে নির্বাচনী প্রচারে এসেছিলেন। তবে তার সফরের ধরন এবং গোপন কিছু বৈঠক সন্দেহ জাগাতে শুরু করেছে। দলের জাতীয় স্তরের নেতা আসছেন জেনে সিপিআই কর্মকর্তারা এদিন জানীগঞ্জের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে সেখানে ঢুকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যান কানাইয়া, এআইইউডিএফ প্রার্থী করিম উদ্দিন লস্কর সাজুকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান শিলকুড়ির বরম-বাবার মন্দিরে পুজো দিতে। প্রায় ঘন্টাখানেক প্রত্যেকটি মন্দিরে ঘুরে ঘুরে পুজো করার স্টাইলে ক্যামেরায় পোজ দিতে থাকেন বামপন্থী ছাত্র নেতাটি। যে ব্যক্তি দলের সদস্যদের সময় দিতে পারছিলেন না, তিনি দীর্ঘক্ষন ধরে মন্দিরে কার অপেক্ষা করছিলেন? তবে কি ধর্মীয় আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে একটি অশান্তির পরিবেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

মন্দিরের বাইরে রাস্তায় বেরোনোর পর স্থানীয় কিছু সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি উত্তর দেন, “মন্দিরের সামনে রাজনীতি করতে চাই না আমি। আপনারা সভায় আসুন সেখানে কথা হবে।” তবে যে এলাকায় তার সভা ছিল সেটা একটা মন্দির প্রাঙ্গণ। মন্দিরে মা দুর্গার পুজো করার পর আবার বেশ কিছুক্ষণ হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং তার সঙ্গে আসা সহযোগীরা সেগুলোর ফটো এবং ভিডিও তুললেন। মন্দির প্রাঙ্গণে কিন্তু তিনি রাজনৈতিক সভা করেছেন এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রার্থী করিম উদ্দিন লস্কর সাজুও।

সকাল ১১টা নাগাদ যখন সভা শেষ করে ফিরে যাচ্ছেন কানহাইয়া কুমার, অপেক্ষারত সাংবাদিকরা  তার কাছে অনুরোধ রাখলেন অন্তত দুটো প্রশ্নের উত্তর দিন। এর উত্তরে কানাইয়া কুমার বললেন, “সকাল থেকে কিছু খাইনি আর কয়েকটা সভাও রয়েছে, তাই এখন উত্তর দেবো না। আপনাদের সঙ্গে বিকেলে দেখা করব এবং কথা বলব।” বহুদূর থেকে তিনি এসেছেন ফলে সাংবাদিকরা তার কথা মানলেন এবং যেতে দিলেন। এদিন মূল অনুষ্ঠান ছিল বিকেল তিনটেয় স্বাধীনবাজার এলাকায়। এর আগে ছোটখাটো দু-একটা সভায় যোগ দিয়ে তিনি চলে যান করিম উদ্দিন লস্কর সাজুর বাড়িতে। দলের বিভিন্ন কার্যকর্তা সেখানে উপস্থিত হন এবং একটি গোপন ঘরে তাদের সঙ্গে বিস্তর আলোচনা করেন কানহাইয়া কুমার।

যেহেতু করিম উদ্দিন লস্কর সাজুর সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে, শহরের কিছু সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হন এবং ছোট্ট একটা সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই গোপন কক্ষে বৈঠক করলেও সাংবাদিকদের উপেক্ষা করেন কানাইয়া কুমার। শেষে তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে অনুরোধ করলে হঠাৎ সুর চড়ান তিনি। মুখের ভঙ্গিমা বদলে রাগী রাগী ভাব নিয়ে আঙ্গুল দেখিয়ে বলেন, “আপনাদের তো বাইট দিয়েছি, তাহলে মোদির মতো মিথ্যে কথা কেন বলছেন?” এরপর আবার দলের সদস্যদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। শেষে স্বাধীনবাজারের সভার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সেখানে ভাষণের শুরুতেই তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্বন্ধে বেশকিছু কটূক্তিও করেন।

 

 

তবে শুধু সাংবাদিকদের নয়, দলের বরিষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও একই ধরনের ব্যবহার করেছেন। শিলচরে পৌঁছে হঠাৎ করে মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া এবং দলের স্থানীয় নেতাদের অবহেলা করে অপরিচিত লোকেদের সঙ্গে গোপন বৈঠক, জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে মন্দিরে দাঁড়িয়ে পুজো করেছেন এবং সেখানে দীর্ঘক্ষন সময় কাটিয়েছেন। কানহাইয়া কুমার চাইছিলেন স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এই খবর পেয়ে মন্দিরে যাক এবং একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হোক। কিন্তু কেউ খুব একটা প্রতিবাদ করেনি, এমনকি মন্দিরের পূজারীরাও অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশের মাধ্যমে পুজো এবং মন্ত্র পাঠ করেন।

দিল্লিতে কানহাইয়া কুমারের উপস্থিতিতে ভারত বিরোধী শ্লোগান দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিন স্বাধীন বাজারের অনুষ্ঠানেও “আজাদী” স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চরম বিশৃঙ্খলা এবং অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে সভা হয়েছে। উপত্যকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও গত দুই সপ্তাহে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা যায়নি। তবে কানহাইয়া কুমার শিলচরে এসে মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময় যদি কেউ প্রতিবাদ করত তাহলে পরিস্থিতি অন্য মোড় নিতে পারত। স্থানীয় সংগঠনগুলো এক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিপক্ক মনোভাব দেখিয়েছে।

Comments are closed.