Also read in

There are enough Pujas and entertainment outside Silchar, what lacks is the presence of own people, family, says Bijoya Purkayastha

নিজের শহরের দুর্গাপূজার কথা মনে হলেই বুকটা হু হু করে উঠে, প্রবাসে বসে জানালেন শিলচরের বিজয়া

তিরিশ বছর হলো পুজোতে শিলচর যাওয়া হয়নি । পুজো এই প্রবাসে প্রবাসেই কাটাচ্ছি। প্রবাসের পুজো সব জায়গাতেই খুব জমজমাট হয়। জমজমাট মানে, যত বাঙালি আছে সবাই মিলে নিজের সামর্থ মতো একটা পুজোতে হৈহৈ করার কথা বলছি। পুজোগুলো খুব আন্তরিক হয়,ঘরোয়া হয়। যতটা পারা যায় বিধি বিধান মেনে পুজো হয়। কোনো কোনো জায়গায় বাঙালির পুজো সামগ্রীও পাওয়া যায় না। তখন পাশের বড় শহর বা কলকাতা থেকে জিনিসপত্র আনানো হয়। কিন্তু পুজো করা চাই ই চাই। বাঙালির এটা একটা ইউনিক ব্যাপার রয়েছে ।
উত্তরপ্রদেশের নয়ডাতে আগে খুব বেশি হলে দুটো তিনটে পুজো হতো। কালীবাড়ির পুজোটাই সবচেয়ে ভাল ছিল। সব বাঙালি ওখানে গিয়ে পুজোর আনন্দ করত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পুজোর সংখ্যা অনেক হয়েছে।
সেই পুজোগুলোর কয়েকটা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।

এনটিপিসি, সেক্টর ৩৩, নয়ডা

এই পুজোর সাথে আমি সরাসরি যুক্ত, তাই এই পুজোর কথাই আগে বলছি।
এনটিপিসি র এই পুজোটা ১৯৯৬ আমরা ছটা বাঙালি পরিবার শুরু করেছিলাম। নিজেরাই বেশি চাঁদা দিয়ে আর সাথে এনটিপিসির কোয়ার্টারগুলোতে গিয়ে গিয়ে চাঁদা কালেক্ট করে যতটা পেয়েছি সেটা দিয়েই ভীষণ ছোট একটা পুজো হয়েছিল। প্রতিমা ছোট, কমিউনিটি হলের ভেতরে একটা কোনায় ঠাকুর রেখে খুব নিয়ম মেনে পুজো হয়েছিল। প্রতিমা এই নয়ডাতেই বানানো হয়। ওদেরকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে প্রতিমা বানানো হতো। পুরোহিত কলকাতা থেকে আনানো হয়েছিল আর সেই পুরোহিত আজ অব্দি আমাদের এই পুজো করে যাচ্ছেন। মায়ের মহাভোগ আমরা মহিলারা নিজের হাতে বানিয়েছিলাম। কেউ সপ্তমীতে, কেউ বা অষ্টমী কিংবা নবমীতে। এই প্রথা আজও চালু আছে।পুজোর ভোগ এনটিপিসির মহিলারাই রাঁধে। পুরো টাউনশিপের সব সদস্যরা। বাঙালি অবাঙালি সবাই অংশগ্রহণ করেছিল। মনে আছে একটা আগমনী প্রোগ্রামও আমরা করে উঠতে পেরেছিলাম। প্রথমবার অবাঙালিরা এতটা বুঝে উঠতে পারেনি,তাই চাঁদা নিয়ে দোনামোনা করছিল, কিন্তু পরের বার থেকে ওরাও হাত খুলে চাঁদা দিয়েছিল। সেই পুজো এখন বিশাল রূপ নিয়েছে। নয়ডার বেশ বড়সড় পুজোর মধ্যে পড়ে এটা। বাজেট মোটামুটি ত্রিশ লক্ষের মতো।আমরা এনটিপিসি অফিস থেকেও অনেক সাহায্য পাই। এখন অব্দি পুজোটা ভালই চলছে । এনটিপিসির এই পুজোটা টাউনশিপের ভেতরেই হয় সুতরাং পুজোর পরিবেশ, চারপাশ খুব রুচিসম্মত,ছিমছাম। পুজোর প্রতিদিন চার হাজারের মতো মানুষ ভোগ খেতে আসে আর পরিবেশনের দায়িত্বে এনটিপিসির সদস্যরাই থাকেন।

ষষ্ঠীর সন্ধ্যে থেকেই কালচারাল প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যায়। পুজোর দিনগুলোতে সকাল থেকে বিভিন্ন রকমের ইভেন্টস্ চলে যেমন বসে আঁকো, প্রতিযোগিতা, হাঁড়ি ভাঙা, মিউজিক্যাল চেয়ার, কুইজ, ডাম শারাট , ফ্যান্সি ড্রেস, ডার্ট থ্রো ইত্যাদি । সন্ধ্যেবেলা ইনহাউস প্রোগ্রাম , বাংলা নাটক, ডান্স কম্পিটিশন, অন্তাক্ষরী আর কলকাতা বা বোম্বে থেকে আসা গায়ক/ গায়িকাদের গান হয় আর শেষে একটা ফাটাফাটি অর্কেস্ট্রাতো চাই-ই। এনটিপিসির এই পুজোতে অবাঙালিরা খুবই সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন আর প্রতিবছর আবার এই পুজোর অপেক্ষাতেও থাকেন।

নয়ডা বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ( নয়ডা কালীবাড়ি ) সেক্টর ২৬।

নয়ডার প্রথম পুজো এই এনবিসিএ শুরু করেছিল। ১৯৯৩ তে এই অ্যাসোসিয়েশন রেজিস্টার্ড হয়নি বলে সেক্টর ২৭ এ নয়ডা অথরিটির একটা সিমেন্ট গুদামে প্রথম দুর্গাপুজো পালন করা হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলে কোনোমতে পুজো হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে এনবিসিএ রেজিস্টার্ড হওয়ার পর ১৯৮৬ সাল থেকে এই কালীমন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু হয়।
নয়ডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুজো হলো কালীবাড়ির দুর্গাপুজো। পুজোর কটা দিন এখানে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। হাজার হাজার মানুষ আসে পুজো দেখতে, ভোগ খেতে আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো দেখতে। পুরো বিধিনিয়ম মেনে নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়। কলকাতা থেকে পুরোহিত আনা হয়। এখানকার দুর্গাঠাকুরের মূর্তি দিল্লির এক নামী শিল্পী সুনীল ভট্টাচার্য তাঁর স্টুডিওতে বানান।
এবার এই পুজো ৩৬বছরে পা দিল। পুজোর বাজেট মোটামুটি ৫৫ লক্ষ । কালীবাড়ির লাইফ মেম্বাররা আর বাকি ভক্তেরা নিজের সামর্থ্য মতো চাঁদা দেন। এখানে অবাঙালিদের থেকে চাঁদা চাওয়া হয় না। ওরা ওদের ইচ্ছেমতো যদি কিছু দিতে চায় সেটা খুশিমনে নেওয়া হয়। সংস্থার কালচারাল সেক্রেটারি রজত ব্যানার্জি বললেন, “এবারের সবচেয়ে বড় চাঁদা একজন অবাঙালি দিয়েছেন। এটাই আনন্দের যে ধীরে ধীরে অবাঙালিরা এই পুজো বা কালীমন্দিরের সাথে যুক্ত হচ্ছেন।”
রজত ব্যানার্জি আরো বললেন,”পুজো কমিটি চাঁদার কিছু অংশ সামাজিক কাজে ব্যবহার করেন। যেমন পনেরোই আগষ্ট চারশটার মতো শাড়ি গরীব দুঃখী মহিলাকে দান করেন এবং বছরে দুবার পাঁচশটা লালপাড় সাদা শাড়ী ভারতসেবাশ্রমকে দান করেন।
এই পুজোতে প্রচুর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় এবং কলকাতা, মুম্বইয়ের তাবড় তাবড় শিল্পীরা এখানে অনুষ্ঠান করেন এবং মুখিয়ে থাকেন কবে আবার ডাক পাবেন। এবারও সারেগামাপা এর সব শিল্পীরা অনুষ্ঠান করলেন,সাথে বাবুয়াদার ব্যান্ডও।

বলাকা বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, সেক্টর ৬১

এই পুজো এবার ১০ বছরে পা দিল। নয়ডার অন্যান্য পুজোর মধ্যে এটা নতুন পুজো কিন্ত এদের প্যাণ্ডাল, মূর্তি আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এত অসাধারণ হয় যে কয়েক বছরের মধ্যেই এই পুজো খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এবারের মণ্ডপ জয়পুরের হাওয়া মহল। অসাধারণ তার কারুকার্য। দর্শক রাজস্থানের একটা ঝলক দেখতে পেয়েছেন। কারিগর এসেছে কলকাতা থেকে। আরেকটা চমক হলো, এই মন্ডপে এল ই ডি লাইটের সাহায্যে কুয়ালা লাম্পুর পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার বানানো হয়েছে। চন্দননগরের শিল্পীর হাতে আলোকসজ্জার ভার দেওয়া হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় চমক হলো ” মিত্র দ্য রবোট।” পুরোপুরি ভারতীয়। ইনভেন্টো রোবটিকস এই রোবটটা বানিয়েছে। মিত্র পুজো প্যাণ্ডালে ঘুরে বেড়াচ্ছে,কথা বলছে, ছবি তুলে টুইটারে আপলোডও করতে পারে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দারুণ সব প্রোগ্রাম হয়েছে । সদস্যরা নিজেরা নাটক করেছেন। বাচ্চাদের দিয়ে দারুণ নাচগানের অনুষ্ঠান হয়েছে। সাথে কলকাতার নামীদামী শিল্পীরা তো আছেনই। সারেগামার ঋষি ভট্টাচার্য, বৃষ্টিলেখা নন্দিনী, জলি মুখার্জি প্রমুখরা নিজের গানে সবাইকে মাতিয়ে দিয়েছেন। এককথায় বলাকা একটা জমজমাট পূজো।
পুজো কমিটির প্রেসিডেন্ট সুভাষ দত্ত বললেন, পুজোর বাজেট মোটামুটি ২৫ লক্ষ। এছাড়া প্রচুর স্পনসরশিপ পান আর স্যুভেনির তো আছেই।
এই পুজোর মূর্তি বানানো হয় দিল্লির স্বনামধন্য সলিল ভট্টাচার্যের স্টুডিওতে ।

নয়ডা বঙ্গীয় সমিতি, সেক্টর ৩৪

এই পুজো ১৯৯৩ সালে শুরু হয়েছিল। এবার পঁচিশ বছর পূর্তির আনন্দে অসম্ভব সুন্দর মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের গোল্ডেন বুদ্ধ মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে এই বিশাল মণ্ডপ। এই মণ্ডপের দায়িত্বে ছিলেন প্রতিম ভৌমিক। কারিগর আনানো হয়েছিল ফরিদাবাদ থেকে। মণ্ডপের প্রথমভাগ শান্তির প্রতীক হিসেবে বৌদ্ধ শিল্প ব্যবহার করা হয়েছে এবং আসল মণ্ডপের থিম হলো শক্তি। শান্তি ও শক্তির সমন্বয়ে এই মণ্ডপ দর্শকের নজর কেড়েছে। হোলগা পাতা আর পাটকাঠি দিয়ে ভেতরের ছাদের কারুকার্য দেখার মতো। দুর্গা প্রতিমা মণ্ডপেই বানানো হয়। পুরোহিত প্রতিবার মেদিনীপুর থেকে আসেন।
এ পুজোর আরেকটি বিশেষ ব্যাপার হলো সদস্যদের চাকুরিরত বা চাকুরিরতা সন্তানকে আলাদা করে ১৫০০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় যাতে ওদের এই পুজোর প্রতি আলাদা একটা টান থেকে যায়। তবে এবার পঁচিশ বছর পূর্তির জন্য প্রতি সদস্য ২৫০০০ করে চাঁদা দিয়েছেন। এছাড়া স্যুভেনির , স্পনসরশিপ তো আছেই। এবারের পুজোর বাজেট ৬০লক্ষ। অবাঙালিদের থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না। এটা একটা পুরোপুরি বাঙালি পুজো। তবে পুজোর দিনগুলোতে ভোগ খেতে বাঙালি অবাঙালি নির্বিশেষে সবাই আসে।

জলবায়ু বিহার সাংস্কৃতিক কল্যাণ সমিতি, সেক্টর ২৫, নয়ডা

নয়ডার সেক্টর ২১ আর সেক্টর ২৫ মিলে জলবায়ু বিহার নামক জায়গাটিতে মোটামুটি এয়ারফোর্স আর নেভির লোকেদের বাস। এখানে ২৬বছর আগে কিছু বাঙালি মিলে পুজোটা শুরু করেছিল। গতবছর ২৫ বছর পুর্তি উপলক্ষে এই সাংস্কৃতিক কল্যাণ সমিতি খুব ধুমধাম ভাবে পূজা পালন করেছিল।
পুজো কমিটির সেক্রেটারি অমিত দাশগুপ্ত বললেন, এবারের পুজো মণ্ডপের থিম হলো ওড়িষ্যার প্রাচীন শিব মন্দির। অতীব সুন্দর ৫৭ ফিটের এই মণ্ডপ এন সি আর রিজিওনের সবচেয়ে উঁচু পুজো মণ্ডপ। মণ্ডপের ধাঁচা তৈরি আর কাপড়ের সুক্ষ কাজগুলো ডায়মন্ড হারবারের কারিগররা করেছেন আর বাকিটা বুলন্দশহরের কিছু কারিগরদের দিয়ে করানো হয়েছে । দুর্গা প্রতিমা দিল্লিতে তৈরি হয়েছে তবে কারিগর এসেছিল কলকাতা থেকে। মণ্ডপের ভেতরের কাজ অসাধারণ। শাস্ত্র মেনে শুদ্ধভাবে এখানে পুজো করেন কমিটির পুরোনো পুরোহিত। মায়ের ভোগ রান্না করেন এখানকার বয়স্কা বাসিন্দারা।
এই পুজো পুরোপুরিই বাঙালি পুজো। ২২৫ টা বাঙালি পরিবারের নিরন্তর প্রয়াসে এই পুজো চলছে। অবাঙালিদের অংশগ্রহণ তুলনায় এখানে কম। তবে চারদিনের ভোগ আর সন্ধ্যের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে নয়ডার বাঙালি অবাঙালি নির্বিশেষে সবাই আসেন। ভোগ খেতে দিনে প্রায় ১২০০লোকের লাইন পড়ে।
পুজোর বাজেট ২৫ লক্ষ। চাঁদা ছাড়া স্যুভেনির বের হয়। কিছু নামীদামী কোম্পানির বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাকি খরচ তোলা হয়।
এই পুজোতে কলকাতা থেকে সব নামী গায়ক গায়িকাদের আমন্ত্রিত করা হয়। সকাল থেকে রাত অব্দি কোনো না কোনো অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। গান, কবিতা আবৃত্তির কম্পিটিশন, খেলাধুলা, সিনিয়র সিটিজেনদের নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান প্রতিবছরই করা হয়।

সপ্তর্ষি সংঘ, সেক্টর ৫০, নয়ডা

পুজোর চাঁদার টাকা দিয়ে বেশীরভাগ পুজো কমিটিই শুধু পুজোগুলোই করে কিন্তু সেক্টর ৫০ এর সপ্তর্ষি সংঘ সেই টাকা অন্যান্য সমাজসেবামূলক কাজেও ব্যয় করে। সপ্তর্ষি সংঘ গত সাত বছর ধরে গরিব বাচ্চাদের পড়াশোনার দিকটা দেখছে। ওদের ভাল ভাল স্কুলে ভর্তি করানো থেকে শুরু করে সদস্যরা নিজে পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার কাজও করছে। এদের মধ্যে একটি ছেলে এখন আইআইটিতে পড়াশোনা করছে। কিছু ছেলে এখন অন্যদের টিউশনও দিচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই এই পিছিয়ে থাকা বাচ্চাগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনার জন্য নিজেদের ছেলেমেয়েদের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করার জন্য ওদের এগিয়ে দিচ্ছেন।
সতেরো বছর ধরে এই পুজো হচ্ছে। চার পাঁচজন বাঙালি মিলে শুরু করেছিল আর সেটা আজ একটা বিশাল রূপ ধারণ করেছে। এবারের পুজোর স্পেশেলিটি হলো সবকিছু ইকো – ফ্রেন্ডলি । ঠাকুরের প্রতিমাতে কোন রকম প্লাস্টিক বা কেমিক্যাল রঙ ব্যবহার করা হয়নি। ভোগের থালা বাটি গ্লাস ও থার্মোকলের নয়। সবই গাছের পাতার তৈরি। মন্ডপে খুব বেশি বাহুল্য নেই। সুন্দর ছিমছাম প্রতিমা। এই প্রতিমা দিল্লির ঝিলমিল কলোনিতে বানানো হয়েছে।কারিগর কলকাতার। পুরোহিত প্রত্যেকবার কলকাতা থেকে আনানো হয়। পুজোর কটা দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রচুর হয়। ইন- হাউজ প্রোগ্রাম হয় আবার কলকাতার শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠানও হয়।
পুজো কমিটির ট্রেজারার অমর মুখার্জি বললেন, এবারের বাজেট ৩৫ লক্ষ। এই পুজোতে অবাঙালিরা দারুণভাবে সক্রিয়। প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ লোক এখানে ভোগ খায়।
এখানে একটা চোখে পড়ার মতো স্টল দেখলাম যেখানে এমিনিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রী “মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন” নিয়ে দর্শনার্থীদের মতামত জানতে চাইছে এবং বোঝাচ্ছে । সপ্তর্ষি সংঘকে এজাতীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অভিনন্দন ।

গ্রেটার নয়ডা শারদীয় সাংস্কৃতিক সমিতি, গ্রেটার নয়ডা কালীবাড়ি
অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে গ্রেটার নয়ডার এই কালিবাড়ির পুজো এবার সতেরো বছরে পা দিল। ২০০১ সালে প্রথম কতিপয় পরিবার এই পুজো শুরু করেছিলেন। কিন্ত জায়গার অভাবে দু দুবার স্থান পরিবর্তন করে শেষমেষ ২০১২ সালে এই কালীমন্দির স্থাপনার পর এখানে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছে। এই পুজোর সেক্রেটারি মণিন্দ্র মন্ডল বললেন,গ্রেটার নয়ডা অথরিটির কাছে এখনও জমির দামের বেশ কিছু কিস্তি বাকী থাকায় পুজোর বাজেটে একটু ঘাটতি আসছে। এবারের পুজোর বাজেট ১২ লক্ষ টাকা। মন্দিরের লাইফ মেম্বার হলো ৩২৫ জন আর এছাড়াও আরো ৬০০টা বাঙালি পরিবার গ্রেটার নয়ডাতে আছে।
এটা যেহেতু কালীবাড়ি তাই বাঙালি অবাঙালি সবাই আসে এবং পুজোতে অংশগ্রহণ করে। এখানে চারদিন ভোগ খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি লোক ভোগ খেতে আসেন।
স্যুভেনির, স্পন্সরশিপে বেশ কিছু টাকা উঠে আসে এবং কিছু অবাঙালি পরিবার লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে এই পুজোকে সাহায্য করেন । পুজোর প্রতিমা বেশ কিছু বছর ধরে গ্রেটার নয়ডা নিবাসী শঙ্কর সেনগুপ্ত দিয়ে আসছেন।
প্রতিমা দিল্লি কালিবাড়িতে বানানো হয়। পুজোর প্যাণ্ডাল স্থানীয় ডেকোরেটরদের দিয়েই হয়। কালীবাড়ির দুজন পুরোহিতের সাথে কলকাতার দুই পুরোহিত এসে যোগ দেন। খুব নিয়ম মেনে, শাস্ত্র মেনে এখানে পুজো হয়।

এমনিতে আমরা প্রবাসে এই পুজোগুলো নিয়ে আনন্দেই আছি। প্রতিটি বাঙালি কোনো না কোনোভাবে কোনো না কোনো পুজোর সাথে জড়িত আছে। নিজেদের মণ্ডপেই কাজকর্মে সময় কেটে যায়।অন্য পুজোগুলো হয়তো দেখা হয়েই ওঠে না। সব ঠিক আছে, কিন্তু যখন নিজের ছোটবেলার শহরের পুজোর কথা ভাবি তখন বুকটা হুহু করে ওঠে। মা বাবা ভাইবোন আত্মীয়স্বজন ছেড়ে আমরা দূরে পড়ে আছি।পুজোতে বাড়ির সবাইকে নিয়ে আনন্দ করা আর হয়ে ওঠে না। ভিডিও কল আর হোয়াটসআপে শিলচরের পুজোগুলো দেখে মন ভরাই। আর ভাবি,আগামীবছর ঠিক পুজোর সময় শিলচর যাবো কিন্তু কোনো না কোনো কারণে আর যাওয়া হয়ে উঠে না। অফিসের হাজারো ঝামেলা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, পরীক্ষা এসব নিয়ে তালগোল পাকিয়ে যায়। প্রবাসে তো স্কুল কলেজে পুজোর ছুটি বলে কিছু নেই…খুব বেশি হলে ‘দশেরা’ তে একদিন ছুটি। শিলচর যাই কি করে বলুন তো ?

বিজয়া পুরকায়স্থ ঘর সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে লেখালেখিও করেন। তিনি প্রবাসে তাঁর এবারের পুজোর অভিজ্ঞতা সুন্দর ভাষায় বিস্তারিত ভাবে আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন।

Comments are closed.