Also read in

Three days after death, call from 108, "Get ready to go to the hospital"; The family yet to receive the report even after 9 days

স্বাস্থ্য বিভাগের তুঘলকি কাণ্ডে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এক ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার তিনদিন পর ১০৮ পরিষেবা থেকে ফোন করে বলা হলো, “আপনারা তৈরি হোন হাসপাতাল যেতে হবে।” উত্তরে মৃত ব্যক্তির ছেলে বললেন, “বাবা তিন দিন আগেই মারা গেছেন,” সঙ্গে সঙ্গেই ওপার থেকে ফোন কেটে দেওয়া হল। ঘটনাটি ঘটেছে কালাইন অঞ্চলের প্রাক্তন বন বিভাগের কর্মী শরিফ উদ্দিন বড়ভূঁইয়ার পরিবারের সঙ্গে। শ্বাসজনিত সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসার জন্য এসে প্রাণ হারান শরিফ উদ্দিন বড়ভূঁইয়া। মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য কোভিড প্রটোকলে সম্পন্ন করলেও ১০ দিনের মাথায় এখনও তার নাম ডেথ অডিট বোর্ডের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পরিবারের সদস্যরা চিঠি লিখে আবেদন জানালে আমরা কারণ তুলে ধরবো।

শরিফ উদ্দিন বড়ভূঁইয়ার ছেলে বরাক বুলেটিনের সঙ্গে ফোনে আলাপচারিতায় জানায়, ৩০ জুলাই রাতে তার বাবার শ্বাসজনিত কষ্ট দেখা দেয়। সে প্রথমে ১০৮ পরিষেবায় ফোন করে এবং পরে নিজেই বাবাকে নিয়ে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। ডাক্তাররা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশেই তার বাবাকে রেখে দেন। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক এনে তার বাবার মুখে লাগিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি কিছু ইঞ্জেকশন দিতে প্রস্তুতি নেন জুনিয়র ডাক্তাররা। “বাবার কি চিকিৎসা হচ্ছে?” এই কথা ছেলে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেন, “আপনি কি ডাক্তারি জানেন? না জানলে চুপ থাকুন এবং আপাতত বাইরে বেরিয়ে যান।” কিছুক্ষণ পরেই চিকিৎসকরা জানান তার বাবা আর বেঁচে নেই। এরপর আরেক প্রস্থ ঝামেলা, মৃতদেহের কোভিড পরীক্ষার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যের সোয়াব স্যাম্পল সংগ্রহ। পরের দিন প্রটোকল মেনে নিজের জমিতে জানাজা সম্পন্ন হয়।

ছেলের বয়ান, “বাবাকে তারা চিকিৎসাই দেয়নি, তাদের ভূলে বাবার শরীরে করোনা সংক্রমণ হয়েছে, যার ফল আমাদের ভুগতে হচ্ছে। তার মৃত্যুর পরে আরও অনেকের মৃত্যু হয়েছে যাদের নাম গুয়াহাটির ডেথ অডিট বোর্ডের তালিকায় রাখা হয়েছে, অথচ আমার বাবার নাম সেখানে নেই। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর পাইনি। এতটা অব্যবস্থার কোনও দরকার ছিল কিনা আমরা জানি না, তবে বাবাকে অসুস্থ অবস্থায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই ভুল হয়েছে।”

উল্লেখ্য, হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ডেথ অডিট বোর্ডের তালিকা নাম পাঠানো হয়নি বিলপারের যুবক সায়ন দাসের। একইদিনে কালাইন অঞ্চলের প্রাক্তন বন বিভাগের কর্মী শরিফ উদ্দিন বড় ভূঁইয়া শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরের দিন সকালে তার মৃত্যু হয়। পরে জানানো হয়, তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছিল এবং কোভিড প্রটোকল মেনে পরবর্তীতে তার জানাজা সম্পন্ন হয়। অথচ তার নামও ডেথ অডিট বোর্ডের তালিকায় রাখা হয়নি। এদিকে তার ঘর কনটেইনমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের সোয়াব স্যাম্পল পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ হলেও সেখানেই আটকে রয়েছেন।

ডেথ অডিট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, তারা ১ আগস্ট প্রয়োজনীয় তথ্য শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হাতে তুলে দিয়েছেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান একে বর্মন বলেন, “এই মৃত্যুর তথ্য আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল, আমরা আমাদের মতামত শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তুলে দিয়েছি। তারা সুবিধামতো সেটা প্রকাশ করবেন অথবা মৃত ব্যক্তির পরিবারকে জানাবেন, এতে আমাদের করণীয় কিছুই নেই।”

শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “যদি মৃত ব্যক্তির পরিবার আমাদের কাছে চিঠি লেখে এবং মৃত্যুর কারণ সহ কোভিড রিপোর্ট জানতে চায়, তবে আমরা তাদের কাছে সব তথ্য তুলে ধরবো।”

এবার কথা হচ্ছে অন্যান্য মৃত্যুর ঘটনায় অডিট বোর্ডের পক্ষ থেকে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে। তাহলে কাছাড় জেলার কয়েকটি ঘটনায় নিয়ম বদলে যাচ্ছে কেন? পরিবারের সদস্যরা তাদের পরিজনের শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারছেন না। পরবর্তীতে কোনও লিখিত নোটিশ ছাড়াই তাদের ঘর কনটেইনমেন্ট করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ মৃত ব্যক্তির কোভিড ছিল কিনা সেটাও বলা হচ্ছে না এবং পরিষ্কারভাবে মৃত্যুর কারণ তুলে ধরা হচ্ছে না। একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও প্রশাসন, শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অডিট বোর্ড নির্বিকারভাবে একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দায়ভার সারছেন!

Comments are closed.