Also read in

Unauthorised Increase in Auto Rickshaw and E-Rickshaw fare : District Administration is in action

ধাপে ধাপে লকডাউন জারি করা এবং খোলার সঙ্গে প্রশাসন এবং সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ যানবাহনের জন্য যেসব নিয়ম দেওয়া হয়েছে এতে অন্যতম হচ্ছে, পুরো গাড়ি ভর্তি করে প্যাসেঞ্জার নেওয়া যাবে না। এর ফলে শহরের তথা জেলার গ্রামাঞ্চলে অটো এবং টুকটুক চালকরা একধাপে ভাড়া দ্বিগুণ করে নিয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি দেখা গেছে অটো এবং টুকটুক ইত্যাদির ক্ষেত্রে যে যেমন পারছেন ভাড়া নিচ্ছেন। যেমন ধরুন কেউ যদি শিলচর শহরের রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্ট বা তার আগে যে কোনও পয়েন্টে অটোতে উঠে মেডিক্যাল যাওয়ার জন্য বলেন, তবে সেই যাত্রীকে ৫০ টাকা দিতে হয়। লকডাউন শুরুর আগে রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্ট থেকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পয়েন্ট পর্যন্ত অটো ভাড়া ছিল ১০ টাকা। ক্যাপিটাল পয়েন্ট থেকে মেডিক্যাল পয়েন্ট পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২০ টাকা।

ভাড়া বেশি নেওয়ার পাশাপাশি অটো চালকরা প্রায়ই নিয়ম ভাঙছেন। তিনজন চারজন করে যাত্রী নিয়েও তারা বেশি ভাড়াই নিচ্ছেন। বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়ার ফলে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন অটো এবং টুকটুক আটক করতে শুরু করেছে। বেশি ভাড়া নেওয়া এবং নিয়মের বেশি যাত্রী বসানোর দায়ে বেশ কিছু অটো এবং টুকটুক আটকও করা হয়েছে।

জেলা পরিবহন বিভাগের আধিকারিক সিদ্ধার্থ শইকিয়া জানান, বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এবার থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে অটো এবং টুকটুকের ওপর নজরদারি রাখা হবে। শুরুতেই দেখা যায় অনেকেই নিয়ম ভেঙে পুরো গাড়ি ভর্তি করে প্যাসেঞ্জার নিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানা যায় চালকরা ভাড়াও অতিরিক্ত নিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে এদের কিছুটা বুঝিয়ে বললেও পরে দেখা যায়, সমস্যা অনেক গভীরে চলে গেছে, তাই দৃষ্টান্তমূলক ভাবে কিছু আটক করতেই হবে। বেশ কয়েকটি অটো এবং টুকটুক আটকও করা হয়। তবে সমস্যা শুধুমাত্র শিলচর শহরে সীমিত নয় বলেই তার ধারণা।

তিনি বলেন, “সম্প্রতি জেলাশাসক কীর্তি জল্লি আমাদের জানান, তার কাছে বেশ কিছু অভিযোগ গেছে। আমরা প্রথমে এগুলোর সত্যতা যাচাই করতে আমাদের দলকে মাঠে নামাই। আধিকারিকরা দেখতে পান সমস্যা সত্যিই অনেক গভীরে চলে গেছে। ফলে এর সমাধান বের করতে হলে কিছুটা কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবহন নিয়মের অধীনে বিভিন্ন গাড়ির জন্য দূরত্ব মেপে রেট চার্ট রয়েছে। আগামীতে অটো এবং টুকটুকের জন্যও দূরত্ব মেপে ভাড়া নেওয়ার একটি তালিকা বানানো হবে এবং এগুলো সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হবে। এতে সাধারণ যাত্রীরা নিজেই চালকদের বলে দিতে পারবেন তারা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন কিনা। তবে আমাদের দুই দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লকডাউনে চালকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পাশাপাশি ইন্ধনের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে তাদের সঙ্গে বসেই আমরা তালিকা তৈরি করতে চাইছি।”

শিলচর শহরের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। বিভাগের পক্ষ থেকে সঞ্জীব গোস্বামী বলেন, “কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আমরা বিভিন্ন এলাকায় লক্ষ্য করেছি অটো চালকরা নিয়ম লঙ্ঘন করছেন। বিভিন্ন সময় তাদের আমরা হুঁশিয়ারি দিয়েছি তবে তার পরেও এগুলো বন্ধ হয়নি। বিশেষ করে একই অটোতে অনেক জন যাত্রী নেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যাত্রীরা নানান সময়ে অভিযোগ করছেন তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রত্যেক পয়েন্টে কড়া নজরদারি রাখছি, তবে প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগের আরও দায়িত্ব রয়েছে, আমরা পুরোপুরিভাবে এগুলো আটকাতে হয়তো পারবো না।”

সমস্যা শুধু শহরেই সীমিত নয়, গ্রামাঞ্চলেও প্রয়োজনের বেশি ভাড়া নেওয়ার একটি ট্র্যান্ড তৈরি হয়েছে। প্যাসেঞ্জারদের মতে প্রায় তিনগুণ ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে। যে দূরত্বে আগে ১৫ টাকা নেওয়া হতো সেখানে এখন অন্তত ৪০ টাকা নেওয়া হয়। মানুষের কাছে অটো এবং টুকটুক ছাড়া যানবাহনের অন্য কোন বিকল্প নেই। এই সুযোগকে অনেকেই কাজে লাগাচ্ছেন। একা যাত্রীরা কখনোই অটোচালকদের দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেদের কথা বলার সুযোগ পান না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের কাছেও খবর পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তারা এব্যাপারে চুপ। লকডাউনে যদি অটোচালকদের ক্ষতি হয়ে থাকে তবে সাধারণ মানুষেরও রোজগার বন্ধ ছিল। তবে এই কথা বলার মতো কোন জায়গা সাধারণ মানুষ খুঁজে পাচ্ছেন না।

শিলচর শহরের অটো চালক অ্যাসোসিয়েশনের কাছে এব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রায়ই সোচ্চার থাকেন বিকাশ ভট্টাচার্য এবং তার সহযোগীরা। বিকাশ ভট্টাচার্যকে ফোন করে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থতার বাহানা দিয়ে এড়িয়ে যান। তবে কি সত্যিই অটো চালকরা অন্যায় করছেন? এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Comments are closed.