Also read in

অধরা মাধুরী - অরূপ থেকে মাধুরী হয়ে উঠা কি অধরা থেকে যাবে চিরকাল

অরূপ হয়ে উঠতে চায় মাধুরী । বাইরের অবয়বে পুরুষ হলেও মনেপ্রাণে সে এক মহিলা সত্ত্বা – মাধুরী। নিজেকে মাধুরী ধরে নিয়ে সে মনীষদাকে ভালোবাসে, প্রেমপত্র লিখে। যদিও এগুলো শেষ পর্যন্ত তার কাছেই থেকে যায়।

আমাদের প্রচলিত যে কোন ধারণার পরিপন্থী কোন চিন্তাধারা সামনে আসলেই প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে, এটাই চিরন্তন। তাই অরূপ নিজেকে মাধুরীতে শারীরিকভাবে রূপান্তর ঘটাতে চায়, এই কথা প্রকাশ হতেই স্বাভাবিকভাবেই বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। নিজের পরিবার পরিজন থেকেই প্রথম বাধা আসবে, এটাই স্বাভাবিক – ‘যারা সংখ্যায় কম আর যারা অন্যরকম, তাদের বড় বিপদ।’

অরূপের বাবা পরিতোষ নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এবং সামাজিক অবস্থান চিন্তা করে এই ‘মানসিক বিকৃতি’ মেনে নিলেন না , নিজের সন্তান অরূপকে পাগল সাজিয়ে ঠেলে দিলেন মানসিক হাসপাতালে; অধ্যাপিকা মায়ের সুচিন্তিত সহমর্মিতা কোন ও কাজেই আসল না। মানসিক হাসপাতালে হুইল চেয়ারে বসেও মাধুরী হয়ে ওঠার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে অরূপ।

এমন এক স্পর্শকাতর বিষয়কেই মঞ্চে নিয়ে এসেছে বিবর্তন। দলছুট আয়োজিত বিবর্তনের ব্যতিক্রমধর্মী এই নাটক বঙ্গভবন পরিবেশিত হলো রোববার।

অরূপের ভূমিকায় পার্থ পাল খুব সুন্দর মেয়েলি হাবভাব ফুটিয়ে তুলেছেন। যথার্থ সাহচর্য পেয়েছেন মাধুরী অর্থাৎ গার্গী দেবের কাছ থেকে। অরূপের বাবা প্রিয়তোষের ভূমিকায় বিপ্লব দাস খুবই সাবলীল অভিনয় করেছেন। অরূপের মা (কৃষ্ণপ্রিয়া পুরকায়স্থ) এবং ছাত্র মনিষের (অরুণ ভট্টাচার্য) মধ্যে তাত্ত্বিক আলোচনা বেশ উপভোগ্য ।

বর্তমানের এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ‘দলছুট’ আয়োজিত বিবর্তনের এই পরিবেশনা নাট্য প্রেমীদের অনুপ্রাণিত করবে এতে কোন সন্দেহ নেই । ইন্দ্রনীল দে রচিত এই সাহসী নাটকটির নির্দেশনা সায়ন বিশ্বাস বেশ ভালোই করেছেন । ডাক্তারের ভূমিকায় তার অভিনয় বেশ চৌখশ। সোমশিখা মজুমদার ও সহকারি হিসেবে বেশ সাবলীল।

নাটকটির আলোক সজ্জায় রূপরাজ দেব, সংগীতে শুভম দাস, মঞ্চসজ্জায় সুমন দাস, সাজসজ্জায় বিশ্বজিৎ নাথ সমাজপতি স্বমহিমায় উজ্জ্বল।

নাটক শেষে দলছুটের অনুষ্ঠান ও বেশ উপভোগ্য হয়েছিল । দর্শক শ্রোতারা ও অনুষ্ঠানে নিজেদেরকে সামিল করেন গলা মিলিয়ে বা মঞ্চের সামনে নাচের মাধ্যমে । কোভিড প্রটোকল মেনে ও প্রায় হল ভর্তি দর্শক, সেটা আয়োজকদের তৃপ্তি দেবে। আগের দিন অর্থাৎ শনিবার দশরূপকের দুটো একাঙ্ক নাটক এই মঞ্চেই পরিবেশিত হয়। সেদিনের দর্শক সংখ্যা ও সুদিনের ইঙ্গিত বহন করছে।

Comments are closed.