Also read in

কংগ্রেসে টিকিটের 'দাম' যোগাতে পারেননি, তাই তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন প্রাক্তন আঞ্চলিক পঞ্চায়েত

পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস দলের টিকিট রীতিমতো বিক্রি হয়েছে। জেলা পরিষদ সদস্যের জন্য ন্যুনতম পাঁচ লক্ষ, গাও পঞ্চায়েত সভাপতি এবং আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য পদের জন্য ন্যুনতম আড়াই লক্ষ, পঞ্চায়েত সদস্যদের জন্য ২০ হাজার টাকা দর ছিল। পাশাপাশি ছিল স্বজন পোষণের বাহার। এসবের জন্য যারা দীর্ঘদিন দলের সেবা করে এসেছেন, তারাই বঞ্চিত হয়েছেন। “টিকিটের জন্য দলে নির্ধারিত দাম রাখা হয়েছিল, আমরা দিতে পারিনি তাই দল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি”, এভাবেই খোলাখুলি ভাষায় কংগ্রেস দলের সমালোচনা করলেন পশ্চিম ধলাইর কংগ্রেস দলের প্রাক্তন নেতা হিবজুর রহমান লস্কর।

টিকিট থেকে বঞ্চিত হয়ে সম্প্রতি দল থেকে বের হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন এই প্রাক্তন আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য হিবজুর রহমান। দলের জন্য দীর্ঘদিন কাজ করার পরও এবার দলের হয়ে লড়তে পারছেন না কারন নির্ধারিত টাকাটা তিনি দিতে পারেননি। তাই তড়িঘড়ি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ধলাই এলাকা থেকে জেলা পরিষদ সদস্য হিসাবে লড়ছেন তিনি।

রবিবার এক আলাপচারিতায় তিনি ভারী গলায় বললেন, “দলের হয়ে লড়ে কংগ্রেসে লাভ হয়না, মনোনয়নের দিন শেষ হওয়ার আগ মুহুর্তে হঠাৎ করে নামের তালিকা আসে এবং এতে অন্যদল ছেড়ে কংগ্রেসে আসারাই টিকিট পান। তাই এবার আমরা তৃণমূলের হাত ধরেছি এবং মোট ১২ জন প্রার্থী এই দলের হয়ে লড়ছি কাছাড়ে”। হঠাৎ করেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, আজ বাঙালির দুর্দিনে বিজেপি এবং কংগ্রেসের কোনও নেতা মুখ খুলতে সাহস পান না। সেই সময় সুদুর কলকাতা থেকে আমাদের হয়ে আওয়াজ তুলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা কয়েকজন জিততে পারলেও সেই আওয়াজকে এগিয়ে নিতে পারব।

বরাকে তৃণমূলের কোনও সংগঠন নেই, তবু ধলাইয়ের সপ্তগ্রাম, ভাগা, চান্দনিঘাট, শেওড়াতল, জামালপুর এবং রাজনগর গাও পঞ্চায়েত থেকে মোট ‍১২ জন প্রার্থী দলের হয়ে লড়ছেন।
আগামী মাসের ৪ তারিখ তার হয়ে প্রচারে আসছেন কলকাতার নবনির্বাচিত মেওর এবং তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম। সঙ্গে থাকবেন টলিউডের কোনও এক অভিনেতা। এদিন ধলাই এলাকায় প্রচার করবেন তারা।

তাদের অভিযোগের তীর বিজেপির দিকেও রয়েছে। জেলা বিজেপির একমাত্র মন্ত্রী ধলাই থেকে আসেন, তবে ধলাইতে পঞ্চায়েত স্তরে দলের প্রদর্শন খুব খারাপ। তাই মন্ত্রী পরিমল স্থানীয় কংগ্রেসের সদস্যদের মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন, যাতে দুর্বল সদস্যদের টিকিট দেওয়া হয়। এভাবেই কংগ্রেসের আসল কর্মকর্তারা বঞ্চিত হয়েছেন এবং বিজেপি ছেড়ে দলে আসা সদস্যরা টিকিট পেয়েছেন।পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিভিন্ন দলের টিকেট না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভে অনেকেই দল ছেড়েছেন এবং অন্য দলের বা নির্দলীয় প্রার্থী হয়েছেন। বিজেপি সহ অন্যান্য দলেও বিক্ষুব্ধদের তালিকা কম নয়। তবে এভাবে স্পষ্ট করে দর কষাকষি নিয়ে তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।

হিবজুর রহমান লস্করের অভিযোগকে খারিজ করে শিলচর জেলা কংগ্রেসের তরফে জালাল আহমেদ বলেন, “হিবজুর রহমান লস্কর দলে থাকাকালীন অসংখ্য দুর্নীতি করেছেন এবং বারবার সাবধান করা সত্বেও তিনি শোনেন নি। বাধ্য হয়েই তাকে টিকিট থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবার তিনি নিজের মতো করে গল্প বানিয়ে কংগ্রেস দলের বদনাম করছেন, তবে এসব করে জিতেবেন না। আমরা কাউকে দল থেকে চলে যেতে বলিনি।কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল বা ইউডিএফের মতো দল বা নির্দল হয়ে যারা লড়ছে, তারা প্রায় সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি। তাদের অভিযোগ নিয়ে ভাবার সময় বা রুচি কোনটাই আমাদের নেই।
তারা যদি নিজেদের শুধরে নিয়ে দলে ফিরতে চান, আমরা তাদের আটকাবো না।”

Comments are closed.