Also read in

'মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য একজন শিক্ষিকার বেতনের জন্য চাপ দিয়েছিলেন, আমি অপমানিত বোধ করেছিলাম', জানালেন কাছাড়ের স্কুল ইন্সপেক্টর

শিলচরের গভর্ণমেন্ট গার্লস সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে অ্যাডভান্স হিন্দি ছাড়া কোনো বিষয়ে শিক্ষক নেই। কিছু শিক্ষক অন্য জেলা থেকে যোগদান করেন এবং কয়েক মাসের মধ্যে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান; আর এটিই হলো স্কুলে শিক্ষকের অভাবের প্রধান কারণ। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একজন শিক্ষক ইংরেজি শেখানোর জন্য শিলচরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে যোগ দেন, কিন্তু নয় মাসের মধ্যে বদলি নিয়ে অন্য জেলায় চলে যান। এমন শত শত ঘটনা রয়েছে বলে দাবি জেলা শিক্ষা দফতরের। সরকারি গভর্নমেন্ট গার্লস হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুলে কলা বিভাগে ২৯৮ জন ছাত্রী রয়েছে এবং তাদের জন্য সবেধন নীলমণি একজন মাত্র শিক্ষক রয়েছেন, যিনি আবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম অ্যাডভান্সড হিন্দি বিষয়ের।

স্কুল পরিদর্শক সাবিনা ইয়ারা ইয়াসমিনকে শিক্ষকের অভাব এবং অনিয়মিত বদলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের করার মতো বিশেষ কিছু নেই। শিক্ষকদের প্রচুর রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে এবং তারা তাদের এই রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পুরো সিস্টেমকে চালিত করছেন। আমার অফিসে অন্তত দশটি শূন্যপদ রয়েছে; কিন্তু লোকেরা যোগ দেয় এবং তারপর ছয় মাসের মধ্যে আমাকে ‘ঠেঙ্গা’ দেখিয়ে চলে যায়।”

স্কুল পরিদর্শক যোগ করেন, “আমি আমার কার্যকালে বদলির জন্য কোন দরখাস্ত ফরওয়ার্ড করিনি, তবু ও এতগুলি বদলি হয়েছে। তাদের সকলের সাথে রাজনীতিবিদদের যোগাযোগ রয়েছে।”

যারা আছেন তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ সহ অনেক শিক্ষক কোনো নোটিশ ছাড়াই বা সংশ্লিষ্ট চার্জ হস্তান্তর না করেই দায়িত্ব থেকে সরে থাকেন। স্কুল পরিদর্শক সাবিনা ইয়ারা ইয়াসমিন বলেন, অদক্ষতা জেলার শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলছে। “আমরা কিছু শিক্ষককে চিহ্নিত করেছি যারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। আমি নিয়োগকর্তা হওয়ায়, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করার পরে, তাদের সকলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছি; অনেক শিক্ষক আমার কাছে এসে তাদের গাফিলতির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ডিএনএনকে গার্লস স্কুলের একজন শিক্ষিকা গাফিলতির কারণ জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি,” স্কুল পরিদর্শক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অফিসার আরও ব্যাখ্যা করেন, “দীননাথ নবকিশোর বালিকা বিদ্যালয়ের উল্লিখিত শিক্ষিকার কোন উত্তর না পেয়ে আমি বিভাগের সাথে পরামর্শ করি এবং নিয়োগকর্তা হিসেবে আমার অধিকার প্রয়োগ করে আমি বিভাগকে তার বেতন বন্ধ করতে বলি। এর কয়েকদিন পরে ডিসি অফিসের একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী এসে আমাকে বলেন যে, মন্ত্রী মহোদয় আমাকে ঐ শিক্ষকের বেতন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কারণ তিনি মন্ত্রীর দলের একজনের স্ত্রী।”

স্কুল পরিদর্শক আরও যোগ করেন, “মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য আমাকে চাপ দিয়েছেন, আমাকে অপমান করেছেন।” তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যখন ফোর্থ গ্রেডের কর্মী এসে আমাকে বেতন প্রদান করতে বলে, আমি তাকে মন্ত্রীর কাছ থেকে লিখিতভাবে কিছু আনতে বলেছিলাম। ঐ ব্যক্তি আমাকে সতর্ক করেছিলেন যে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা জনৈক ভূষণের স্ত্রী এবং আমি কোন উপায়ে উনার বেতন বন্ধ করতে পারবোনা। আমি মন্ত্রীকে লিখিতভাবে নির্দেশ দিতে বলার ঘটনা মন্ত্রীকে বিরক্ত করে। মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য আমাকে ফোন করে উচ্চস্বরে কথা বলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি কে যে তার কাছে লিখিত চাইব এবং কিভাবে আমি এটা জিজ্ঞাসা করার সাহস করি। আমি উত্তর দিয়েছিলাম, আমার এটি করার সমস্ত অধিকার আছে।”

অবশেষে, ডিএনএনকে গার্লস এইচএস স্কুলে নিযুক্ত ঐ শিক্ষিকার বেতন প্রদান করা হয়েছিল। “এটি স্কুল ইন্সপেক্টরের জীবন। আমরা অধস্তনদের সামনে অপমানিত হই, রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করি এবং তারপর জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন আমাদের একটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই এবং যোগদানের পরে এত শীঘ্র কিভাবে এত শিক্ষক বদলি হতে পারে। আমি জানি, এই সব বলার পরে আমি হয়তো বদলি হয়ে যেতে পারি, কিন্তু ছোট বাচ্চারা যদি তাদের শিক্ষার অধিকারের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে, তবে সাধারণ জনগণকে আসল ঘটনা জানতে হবে,” কাছাড়ের স্কুল পরিদর্শক সাবিনা ইয়ারা ইয়াসমিন জোর দিয়ে বলেন।

প্রতিক্রিয়া জানতে বরাক বুলেটিনের তরফ থেকে মন্ত্রীকে একাধিক ফোন করেও সাড়া মেলেনি। একবার, তার অফিস থেকে কেউ কলের উত্তর দেয়। বরাক বুলেটিন মন্ত্রীকে জানাতে বলেছিল যে, স্কুল পরিদর্শক এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চায়। তার দলের সদস্য, যিনি মন্ত্রীর ফোনে উত্তর দিয়েছিলেন, বলেছিলেন ব্যস্ততা শেষ হলে মন্ত্রী নিজে ফোন করবেন, কিন্তু তিনি তা করেননি এবং তাই তার মন্তব্য ছাড়াই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হল।

Comments are closed.