Also read in

পশ্চিমবঙ্গ থেকে ট্রেনে শিলচরে এসে দেয়াল টপকে দিব্যি বাড়ি চলে যাচ্ছেন শতাধিক যাত্রী, নির্বিকার রেল-বিভাগ ও প্রশাসন

একদিকে যখন উত্তর-পূর্বের বাইরে থেকে আসা বিমান যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা নিয়ে এতটা তোড়জোড়। আরটিপিসিআর পরীক্ষার জন্য প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা মাসুল নেওয়া হচ্ছে। যারা পরীক্ষা না করেই চলে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে রীতিমতো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে রেলযাত্রীদের ক্ষেত্রে এই প্রশাসনই একেবারে উদাসীন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস শিলচর রেল স্টেশনে ঢোকে। প্রায় শ’খানেক যাত্রী যারা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে উঠেছেন, শিলচরে এসে নামেন। করোনা পরীক্ষা তো দূরের কথা, তারা থার্মাল পরীক্ষা করাচ্ছেন কিনা এইটুকু দেখা হয়নি। রেল স্টেশনের মূল গেটে একটা সেন্টার বসিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সেই পরীক্ষাও প্রায় বেশিরভাগ যাত্রী করাননি। তারা বরং রেল স্টেশনের মূল দরজায় না এসে বিভিন্ন রাস্তা ধরে স্টেশনের বাইরে চলে গেছেন। বাইরেই ছিল অনেকগুলো অটোরিকশা। তারা দিব্যি যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে।

যখন ট্রেন স্টেশনে ঢোকে, অন্নপূর্ণা ঘাট সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পের পাশে রাস্তায় অনেকগুলো অটোরিকশা ধীরে ধীরে জমা হয়। যাত্রীরাও মূল দরজার দিকে না গিয়ে ধীরে ধীরে পেছনের এলাকার দিকে এগোতে থাকেন। সুযোগ বুঝে অটোর চালকরা তাদের ইশারা দেয় এবং মহিলা-শিশু-পুরুষ যাত্রীরা তাদের উদ্দেশ্যে ছোটেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ফিরে কোনও ধরনের কোভিড পরীক্ষা না করিয়ে সোজা অটোতে বসে যারা বাড়ি চলে গেছেন, যদি তাদের শরীরে সংক্রমণ থাকে তাহলে শুধুমাত্র ওই ব্যক্তিদের পরিবার নয়, অন্যান্য যাত্রীরাও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। ইতিমধ্যে কামরূপ জেলায় গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে সরকার। এভাবে চললে কাছাড় জেলায়ও গোষ্ঠী সংক্রমণ হওয়া খুব স্বাভাবিক।

 

 

যখন এই ঘটনা ঘটছিল রেলস্টেশন চত্বরে পুলিশ তো দূরের কথা রেল বিভাগের কোনও কনস্টেবল পর্যন্ত ছিলেন না। কেউ যাত্রীদের বাধা দেয়নি এবং দিব্যি তারা বাড়ি ফিরেছেন। শিলচরের স্টেশনের স্টেশন সুপার বিপ্লব দাসকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কোভিড ম্যানেজমেন্ট রাজ্য সরকারের দায়িত্ব, যাত্রীরা পরীক্ষা করিয়ে বাড়ি ফিরছেন কি না, এটা দেখার দায়িত্ব প্রশাসন এবং পুলিশের। ‌ স্টেশনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সপ্তাহে তিন দিন আসে এবং ত্রিবান্দম এক্সপ্রেস একদিন আসে। যদিও এই সময়ে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তবুও আমরা তাদের পরীক্ষা করানোর মতো অবস্থায় নেই। রেল বিভাগের কাছে মেডিক্যাল টিম নেই অথবা কোভিড পরীক্ষার মতো সরঞ্জাম নেই। আমরা প্রশাসনকে আগেই জানিয়েছি তারা যেন এব্যাপারে এগিয়ে আসেন, তবে এখন পর্যন্ত কোনও সাহায্য আসেনি।”

 

 

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছিল শিলচর রেল স্টেশনে একটি কোভিড পরীক্ষা সেন্টার বসানো হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান সাংবাদিক সম্মেলনে বসে কথাটি ঘোষণা করেছিলেন। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। যখন ট্রেন আসে, একটি অস্থায়ী সেন্টার বানিয়ে দেওয়া হয় যেখানে যাত্রীদের থার্মাল পরীক্ষা হয়। এদিন একসময় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছিলেন, থার্মাল টেস্টের মেশিনে ব্যাটারি পর্যন্ত নেই। তারা শুধু দেখানোর জন্য যাত্রীদের সামনে সেটা তুলে ধরছেন।

যেখানে বিমানযাত্রীদের নিয়ে এত তোড়জোড়, রেলযাত্রীদের ক্ষেত্রে এতটা উদাসীনতা কেন কাছাড় জেলা প্রশাসনের? এই প্রশ্নের জবাব হয়তো প্রশাসনের আধিকারিকরা দিতে রাজি হবেন না। তবে সপ্তাহে চারটি বড় মাপের রেলগাড়ি উত্তর-পূর্বের বাইরে থেকে শিলচরে ঢুকছে, এতে আসছেন পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা সহ বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ। তারা কোনও ধরনের পরীক্ষা না করিয়ে বিভিন্ন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে বাড়ি ফিরছেন। তাদের কোনও তালিকা ধরে পরীক্ষার জন্যও বলা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র করোনা নয়, বিভিন্ন মিউটেন্ট পর্যন্ত ঢুকে পড়তে পারে কাছাড় জেলায়।

Comments are closed.