Also read in

সিবিএসই কি ছাত্রদের গিনিপিগ মনে করছে?

বিগত ২৪শে মার্চ বিকেলে ভারতের হাজার হাজার সিবিএসই পরিচালিত স্কুলগুলিতে ছুটির ঘণ্টি বেজে উঠলো যা দশম শ্রেণীর অঙ্ক পরীক্ষা শেষ হওয়ার সংকেত। প্রশ্নপত্র মোটামুটি সহজ ছিল; আমরা আমাদের শ্রেণীকক্ষ থেকে অত্যন্ত আনন্দের সাথে বের হলাম। এতদিন পর পরীক্ষা যে শেষ হলো! উদযাপনের সময়! পরবর্তী সময়ে কি হবে তা আমাদের জ্ঞাত ছিল না। কয়েক ঘন্টা পরেই খবর আসলো “সিবিএসই পুনরায় পুরীক্ষা অনুষ্ঠিত করবে”। আমরা বিচলিত হলাম এবং প্রথমে ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিন্তু এক ঘন্টার মধ্যে খবরটি নিশ্চিত হলো।

দশম শ্রেণীর অঙ্কের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল এবং আমাদের আবার পরীক্ষায় বসতে হবে। কেউ আমাদের আতংক এবং যন্ত্রণা কল্পনা করতে পারবে না। সিবিএসই কি এটাকে কৌতুক ভেবেছিল? প্রথমত,আমাদের পুরো কোর্স পড়ে পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল এবং এত মাসের এই কঠোর পরিশ্রম এখন ব্যর্থ হবার উপক্রম। সিবিএসইর কাছে আমরা গিনীপিগ ছাড়া আর কিছুই ছিলাম না। দেশের বিভিন্ন জায়গায় শত শত ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে পড়ে ন্যায়বিচারের জন্যে এবং এই ভয়ানক কেলেঙ্কারির রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী এবং সিবিএসইর আধিকারিকরা বলেন, “আমরা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিবাবকদের বেদনা বুঝতে পারছি”, “আমরা এইবার থেকে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবো”, “আমাদের কর্ম পরিকল্পনা ছাত্রদের পক্ষে হবে “, এবং এইরকম আরো অনেককিছু। আমরা তাদের সমবেদনা চাইনি। এই বিবৃতিগুলি আমাদের সমবেদনা তো দেয়ই নি উল্টো আমাদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছিল, তারা পরবর্তী সময়ে যদি নিরাপত্তা স্তর বৃদ্ধি করতে পারে তবে কেন সেটা আমাদের সময় করা হলো না? কেন লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে সিবিএসইর এই খামখেয়ালির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে?কেন আমাদের আবার পড়াশুনা করতে হবে?কেন ছাত্রদের এই মানসিক অবসাদের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে? আমরা যদি বসেও যাই আবার পরীক্ষার জন্য, আমাদের আর আগের মতো উৎসাহ থাকবে না কেননা আগেই একবার পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছি।

বেশকিছু বিতর্কের পর সিবিএসই ৩১ শে মার্চ ঘোষণা করে যে তারা আবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করবে না শুধু দিল্লি এবং হরিয়ানা ছাড়া (যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল)। সিবিএসই এই বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতও ছিল না বটে। তারা এই বিষয়টিকে নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। পরবর্তীতে দিল্লি ও হরিয়ানাকেও পুনরায় পরীক্ষা থেকে ছাড় দেওয়া হয়। এটা নিশ্চিতভাবেই একটা বড় স্বস্তি কিন্ত শিক্ষার্থীদের সিবিএসইর প্রতি অবিশ্বাস এবং সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো। ছাত্র এবং শিক্ষকরা এই ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেললো। সিবিএসইর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কি সত্যিই বিশ্বাস করা যায়? প্রশ্নপত্র একবার ফাঁস হয়েছিল, কিন্তু কি গ্যারান্টি ছিল যে সেগুলি আবার ফাঁস হবে না? কিভাবে সিবিএসই নিশ্চিত করবে যে পরীক্ষার ফলাফল ন্যায্যভাবে প্রকাশিত হবে? দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে সিবিএসইকে এবং এই বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার।

Comments are closed.