Also read in

অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড! দ্বিতীয় ডোজ না দিয়েই ভ্যাকসিন সম্পন্ন হওয়ার সার্টিফিকেট দিচ্ছে প্রশাসন

যারা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের বলা হয়েছিল দ্বিতীয় ডোজ ঠিক ২৮ দিনের মাথায় দেওয়া হবে। পরবর্তীতে নিয়ম কিছুটা পাল্টে যায় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে খানিকটা দেরি হবে বলে জানানো হয়। তবে একজন-দু’জন নয়, কাছাড় জেলার কয়েকশো মানুষ নির্ধারিত ২৮ নম্বর দিনে মেসেজ পেয়েছেন, তাদের নাকি দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে, এমনকি অনলাইনে সার্টিফিকেটও ইস্যু করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম ডোজ যে ডাক্তার দিয়েছেন, তিনিই দ্বিতীয় ডোজের সার্টিফিকেট ইস্যু করছেন।

বড়খলার সংবাদকর্মী রেদওয়ান উদ্দিন লস্করের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল ৮ এপ্রিল। তিনি যথারীতি উপস্থিত হন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান ভ্যাকসিন তাকে এই মুহূর্তে দেওয়া হবেনা, কিছুটা দেরি হবে। তাকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং সেই দিন এসে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। তাদের কথামতো তিনি বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু বিকেলে একটি এসএমএস আসে, “আপনার ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গেছে। আপনি এই লিঙ্কে ক্লিক করে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারেন।” এরপর তিনি মেসেজে থাকা লিঙ্ক ক্লিক করেন এবং দেখতে পান তার নামে
ফাইনাল সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়ে গেছে। অর্থাৎ সরকারের তথ্য অনুযায়ী তাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে, কিন্তু আদতে তিনি দ্বিতীয় ডোজ পাননি।

আরও অনেকেই এমন অদ্ভুত মেসেজ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটা ‘টেকনিক্যাল এরর’। অর্থাৎ প্রযুক্তিগত ত্রূটির জন্য ভুলক্রমে মেসেজগুলো পৌঁছে গেছে। শুধুমাত্র মেসেজ পৌঁছে গেলে অন্য কথা ছিল, একেবারে ফাইনাল সার্টিফিকেট ইসু হচ্ছে এবং প্রথম যে ডাক্তার ভ্যাকসিন দিয়েছিলেন, তিনিই দ্বিতীয় ডোজ দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যক্তি বলেন, হঠাৎ করে সন্ধ্যে সাড়ে-ছয়টা নাগাদ একটা মেসেজ পাই, যেখানে বলা হয়েছে আপনার ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে। একটা লিঙ্ক দেওয়া রয়েছে যেখানে ক্লিক করে আমি আমার সার্টিফিকেট নিতে পারি। আমি ক্লিক করলাম এবং সার্টিফিকেট পেয়ে গেলাম। এবার কথা হচ্ছে, আমি ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাইনি, অথচ সরকারি হিসাব মতে আমার দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা আগেই আমাকে বলেছিলেন ৪৫ দিন পর যাওয়ার জন্য, এবার তাহলে তারা কি আদৌ আমাকে দ্বিতীয় ডোজ দেবেন?

স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমনা নাইডিং বলেন, “যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের কাছে ভুলক্রমে দ্বিতীয় ডোজের মেসেজ চলে গেছে। তবে কিভাবে গেছে এবং কোথায় ভুল হয়েছে এগুলো আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি।”

নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে ভ্যাকসিন সংগ্রহের মাত্রা আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনেকেই লাইন দিচ্ছেন অথচ শেষমেষ ভ্যাকসিন মিলছে না। আগে থেকে না জানালেও স্বাস্থ্যবিভাগের আধিকারিক সম্প্রতি স্বীকার করেন, ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছিল। এবার প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে জেলাশাসক বারবার করে জনসাধারণের প্রতি আবেদন রাখছেন, প্রত্যেকে যাতে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেন, বাস্তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহার তার ঠিক উল্টো কেন? যদি ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যায় তাহলে সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ্যে তুলে ধরে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বলতে পারতেন যতক্ষণ ভ্যাকসিন আসছে না, সাধারণ মানুষ যাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না যান।

গত তিন দিনে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে এবং এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। যদি পরিস্থিতি গত বছরের মতো মোড় নেয় তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু কর্মীর অপরিপক্ক কার্যকলাপে সাধারণ মানুষকে আবার হেনস্থা হতে হবে।

Comments are closed.