Here is what Dr. Lakhan Das had to say about Coronavirus
চিকিৎসকের সঙ্গে কিছুক্ষণ: করোনা নিয়ে কি বললেন ড: লক্ষণ দাস
কারো কারো ক্ষেত্রে ভূমিকা নিষ্প্রয়োজন। চিকিৎসক লক্ষণ দাস সেই দলেরই একজন।বরাক উপত্যকার মানুষ তাকে শুধু ভগবান ডাকেই না, মানেও। আর প্রকৃত চিকিৎসক তো সাধারণ মানুষের কাছে ভগবানের এক রূপ।সুদূর আমেরিকা থেকে মাটির টানে যিনি ফিরে আসেন শিলচরে, সেবাধর্মে যিনি নিজের জীবন উৎসর্গিত করেন, তার সম্পর্কে এমন উপমা কি যথার্থ নয়? আজ যখন পৃথিবীব্যাপী একটা ছোট্ট ভাইরাস মানুষের জীবনকে তছনছ করে তুলছে, প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে, তখন ড: লক্ষণ দাস কিংবা ড: কুমার কান্তি দাস কি বলছেন করোনা নিয়ে?বরাক বুলেটিনের সম্পাদক অর্চনা ভট্টাচার্যের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে উপত্যকার স্বনামধন্য জনপ্রিয় চিকিৎসক বললেন অনেক কথা।
ডাক্তার হিসেবে কোভিড ১৯ কে সাধারণের জন্য কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
এটি একটি মারাত্মক সংক্রামক ভাইরাস।যেটা সাধারণ ফ্লু’য়ের মতো শুরু হয়। আর তারপর মহামারী রূপ নেয়। তবে মানুষ যেভাবে আতঙ্কিত হচ্ছেন,সেরকম হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ এ রোগ ততটা প্রাণঘাতী নয়। ইনফ্লুয়েঞ্জাতে যদি ধরা যায় মানুষের মৃত্যু হয় দশমিক পাঁচ শতাংশ। তবে এক্ষেত্রে মৃত্যুর হার দাঁড়াবে ১%। অর্থাৎ ১০০ জনে একজন। সেই রোগীর যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার কিংবা হার্টের রোগ থাকে তাহলে একটু ভয়। আর যুবা বয়সের মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা খুবই কম। কাজেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো বিশেষ কারণ নেই।একই সঙ্গে এটাও বলা প্রয়োজন, এই রোগ কিন্তু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে মানুষের মধ্যে। কাজেই সর্তকতা অবলম্বন সর্বক্ষেত্রেই জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সোশ্যাল ডিসটেন্স মেন্টেন করার জন্য স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ভারতেও একই নির্দেশ। আপনার মতে কি এটা এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে?
প্রতিরোধের এটাই তো একমাত্র রাস্তা। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সতো আমাদের মেনটেন করতেই হবে। আগে মাস্ক সম্পর্কে একটু সন্দেহ ছিল, এখন সে সন্দেহও দূর হয়ে গেছে। আগে সিডিসি থেকে বলছিল যে মাস্ক পড়ার দরকার নেই, কিন্তু এখন বলছে কেয়ারটেকার থেকে শুরু করে সবার মাস্ক পড়া উচিত।বাইরে বেরুলে মাস্ক পড়তেই হবে।
বর্তমানে করোনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী ত্রাস চলছে। এই রোগ প্রতিরোধে আর কি কি করা উচিত আমাদের?
পদক্ষেপ সেই একটাই! সোশ্যাল ডিস্টেন্স মেনটেন করা। বাড়িতে থাকা। জনসমাবেশ না করা। মূলত এগুলোই একমাত্র উপায়। কারণ এটারতো কোনো ওষুধ নেই। কিছু ক্ষেত্রে ক্লোরোকুইনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়েও সন্দেহ রয়েছে।এটার অনেক সাইডএফেক্ট রয়েছে।
হ্যাঁ, এটাও আমার প্রশ্ন ছিল, আমেরিকা এবং আরো কিছু দেশ বলছে ক্লোরোকুইন এক্ষেত্রে সাহায্যকারী। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
বৈজ্ঞানিকভাবে এখনো এটা প্রমাণিত হয়নি যে ক্লোরোকুইন সাধারণ মানুষের জন্য করোনা প্রতিরোধে সাহায্যকারী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, খুব সঙ্গীন পরিস্থিতিতে, যেখানে ওষুধ দেওয়া এবং না দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপদের সম্ভাবনা একই, তখন রোগীর জীবন বাঁচাতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণ জনগণের জন্য মোটেই নয়।
যেহেতু এই রোগের ওষুধ এখনো বের হয়নি, তাই চিকিৎসকরা কিভাবে এই রোগের চিকিৎসা করছেন?
সবচেয়ে প্রথমে রোগের লক্ষণ অনুযায়ী তার চিকিৎসা করা হচ্ছে। সর্দি কাশির ক্ষেত্রে যেমন ডাক্তাররা জ্বর কমাতে ক্রসিন দেন, এখানেও একই ব্যবস্থা। তবে যখন এর বাড়াবাড়ি হয়, তখন রোগটি কোভিড ভাইরাস নিউমোনিয়ায় পরিণত হয়। তখনই রোগীর শ্বাসকষ্ট হয় এবং অক্সিজেনের অভাব হয়। এবং চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়।
বয়স্কদের মধ্যে এই রোগটা তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং প্রাণঘাতী রূপ নেয়। কথাটা কি সত্যি?
না, এরকম কিছু না। সবার মধ্যেই ছড়াতে পারে। তবে হ্যাঁ, বয়স্কদের এক্ষেত্রে ঝুঁকিটা বেশি। এই রোগে মৃত্যু এবং এই রোগের জটিলতার ক্ষেত্রে বয়স্কদের বিপদটা বেশি। কিংবা যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই রোগ ঘিরে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
তাদের জন্য কি বিশেষ কোন উপদেশ রয়েছে?
উপদেশ তো সেই একটাই। তবে আমি বলবো, বয়স্কদের একটু বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। তাই কোনোভাবেই বাজারে যাওয়া উচিত নয় এবং বাইরে বেরোনো উচিত নয়। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। যাকে বলে পুরোপুরি লকডাউন মেনে চলা।
অনেকেই আজকাল এও বলছেন, একটু পায়ে হাঁটা কিংবা শারীরিক কসরত করা এখন খুব জরুরি। এই সময়ে নিজেকে সক্রিয় রাখা খুবই প্রয়োজন। ডাক্তার হিসেবে আপনি এ নিয়ে কি বলবেন?
লকডাউন’র নিয়ম মেনে যদি কেউ পায়ে হাঁটা কিংবা ব্যায়াম অনুশীলন করে সক্রিয় থাকতে পারেন, সে তো খুব ভালো কথা। কারণ শারীরিক অনুশীলন শুধু শারীরিক ভাবে সাহায্য করে না, মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। এই কঠিন সময়ে অনেকে বিষণ্ণতায়ও ভুগতে পারেন।
কেউ যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে বিষণ্নতায় ভোগেন তাহলে এর থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা কি? কি করা উচিত তাদের?
এক্ষেত্রে আমি বলব, যাদের যে হবি রয়েছে, সেটা এসময়ে কাজে লাগাতে পারেন। এও সত্যি, আগামীতে খাবার কোথা থেকে আসবে, সে চিন্তাও যাদের রয়েছে, তাদেরকে এগুলো বলা আমার ধৃষ্টতা। তবে যারা পারেন, তারা যদি নিজেদের মত গান-বাজনা, কবিতা লেখা, গল্প লেখা এগুলো নিয়ে থাকতে পারেন তাহলে ভালো। এটাই হয়তো নিজেদের ইচ্ছেপূরণ কিংবা স্বপ্নগুলোকে সত্যি করে তোলার সবচেয়ে ভালো সময়। ব্যস্ততম জগতে সময়ের অভাবে অনেক সময় তা হয়ে উঠে না। আর সারাদিন ধরে টিভির নব ঘুরিয়ে খুব বেশি নিউজ না দেখে দিনে দুবার দেখাই শ্রেয়। কারণ আপনি যদি সারাদিন ধরে দেখেন কিংবা দিনে দুবার দেখেন তাতে তারতম্য কিছু হচ্ছে না, পরিসংখ্যান তো পাল্টাবে না। বরং সারা দিন ধরে এসব সংবাদ দেখায় এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।মনের মধ্যে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।
খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে কি বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আনা উচিত?
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোন রেস্ট্রিকশন নেই। যদিও এতে কোন বৈজ্ঞানিক কারণ নেই, তবু ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এসময় নিরামিষ খাওয়াই ভালো। এটা নিতান্তই ব্যক্তিগত অনুভূতি যে এ সময় চিকেন, মাটন না খাওয়াই ভালো।
কেউ কেউ বলছেন এ সময় গরম জল খাওয়া খুব উচিত। দুবেলা গার্গোল করা উচিত। আপনি কি বলবেন?
এর পেছনে আমি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছিনা। তবে কেউ যদি মানসিকভাবে আরাম পান এগুলো করে, তাহলে নিশ্চয়ই করতে পারেন।
এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আসতে কতটা সময় লাগবে বলে আপনার মনে হয়?
এটা বলা খুব শক্ত। আর সব জায়গায় তো সমানভাবে হচ্ছে না। মহারাষ্ট্রে যেমন ভীষণভাবে হচ্ছে, অসমে তুলনায় আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি। কিন্তু যখন আন্তঃরাজ্য যোগাযোগ শুরু হবে, তখন সমস্যা বাড়তে পারে। পুরো দেশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, লকডাউন তো একমাস থাকবেই, আরো বাড়তে পারে। এটা আমার ধারণা। ট্রেন্ড দেখে এরকমই মনে হচ্ছে।
মানুষের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সন্দেহজনক হলেও কেউ পরীক্ষা করাতে চাইছেন না।তাতে কি বিপদ বাড়ছে না? আপনার কি অভিমত?
এক্ষেত্রে কিন্তু আমি বলব, এর দুটো দিকই রয়েছে। একপক্ষ হল, হয়তো দুবার হাঁচি হলো কিনা, মনে মনে ভাবছেন ডাক্তারের কাছে গিয়ে কি পরীক্ষা করাবো? আবার কিছু লোক রয়েছেন, যারা পরীক্ষা করতে চাইছেন না। তবে আমার মতে, কারোর যদি সাধারণ ফ্লু হয়ে থাকে, তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের সেই সঙ্গে এটাও চিন্তা করতে হবে যে আমাদের দেশে করোনার ‘টেস্টিং কিট্’ এর অভাব রয়েছে। সবাই যদি টেস্ট করতে শুরু করে দেন তাহলে যার সত্যিকার অর্থে টেস্ট করার প্রয়োজন ওর জন্য হয়তোবা আর থাকবেই না। কয়েকদিন নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এর শুরু হয় টিপিক্যাল ইনফ্লুয়েঞ্জার মত। সাত- আট দিন চলে। ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে সাত আট দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে সাত আট দিন যাওয়ার পরও নানাবিধ উপসর্গ শুরু হতে পারে। জ্বর বেড়ে যেতে পারে, শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। কাজেই প্রথমে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসাই চলতে পারে। কিন্তু মনে যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আর এখনতো কোভিড সেন্টার সব জায়গায় হয়ে গেছে। সেখানে সব অভিজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন। ওরা বুঝবেন টেস্ট করানো উচিত কিনা। দু একটা ভুল হতে পারে কোথাও কোথাও, সাধারনত ওদের জাজমেন্টটাই আমাদের ফলো করতে হবে।
আর আমার মতে, টেস্ট করানোর চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া। কারণ অনেক সময় সাধারন ইনফ্লুয়েঞ্জায়ও রোগীর অবস্থা কাহিল হতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই বলছেন পৃথিবীজুড়ে এত দূষণ হচ্ছিল, মানুষ নিজের চাহিদা পূরণে প্রকৃতির উপর এত অত্যাচার করছিল যে তারই পরিণামে এই অবস্থা। ডাক্তার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে এ বিষয়ে কি বলবেন?
একটা জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বায়ুদূষণ এখন অনেক কমে গেছে। আজকে কোথাও একটা পড়লাম যে জলন্ধর থেকে নাকি হিমালয় দেখা যাচ্ছে। আমি এক্ষেত্রে এটাই বলব, এটা আমাদের জন্য একটা ইঙ্গিত। আমরা যদি যানজট একটু কমাই তাহলে প্রদুষণ কমবে। আর শিলচরের মতো জায়গায় এতো দূষণ এবং শহরটা এত ঘিঁজি হয়ে উঠেছে । হয়তো আমাদের একটা উপায় বের করতে হবে, যাতে করে যানজট কমানো যায়। এজন্য আমাদের একটা পন্থা বের করতেই হবে।
সবশেষে সাধারণ জনগণকে কি কোন বার্তা দিতে চাইবেন?
আমি এটাই বলব, বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যা বলা হচ্ছে তা মানা। সরকার যা করছে, তা খুবই বিজ্ঞানসম্মত।যত বড় বড় ইনস্টিটিউট রয়েছে সেই ইনস্টিটিউটের বড় বড় ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সবকিছু করছে সরকার। তাই তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত।এটার কোন অন্য ওষুধ নেই, ভ্যাকসিন বের হয়নি। ভ্যাকসিন বের হতে আরও অন্তত এক বছর লাগবে। কাজেই এর প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব কিংবা লকডাউনই হচ্ছে আমাদের একমাত্র উপায়। তাই এটাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা উচিত।
Comments are closed.